হে সূর্য,
তিমিরবিদারী প্রচন্ড সূর্য,
কবে তুমি জাগবে ওই মধ্যগগনে!
তোমার আলোর অবিনাশী তরঙ্গমালা
কবে তুমি ছড়িয়ে দিবে আকাশে-বাতাসে
পৃথিবীর প্রতিটি কর্ণে!
কবে তুমি পৃথিবীর সমস্ত জরাজীর্ণতা ও অন্ধকারের
বৃথা আস্ফালনকে পরাজিত করে
স্বমূর্তি এসে দাঁড়াবে,
খেলবে আপনার খেলা?
আর আলোকিত করবে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড।
যারা অন্ধকারকে ভালোবাসে
অন্ধকারকে নিয়ে খেলে,
সভ্য এই পৃথিবীতে বানাতে চায় অসভ্যতার লীলাভূমি,
তুমি তাদের সব চক্রান্তকে করবে নস্যাৎ,
তাদের সমস্ত পরিকল্পনাকে করবেন  লন্ডভন্ড,
সৃষ্টি করবে নতুন বিস্ময়।


তুমি কী দেখো না! ওই হায়েনার দল
রক্ত পিয়ে পিয়ে কেমন ডানপিটে চঞ্চল!
তবুও তাদের রক্ত পিপাসা মেটেনি,
তবুও তারা ঘুচাতে পারেনি রক্ত পিয়াসী চেতনা,
কতদিন ধরে ওরা
জোঁকের মত টেনে টেনে খাচ্ছে রক্ত!
শিয়াল কিংবা কুকুরের রক্ত নয়
এ তো মানুষের রক্ত!
এ রক্তই তাদের বারোমাসের খোরাক।


তুমি কী দেখো না, আজ মানবতা কেমন অবহেলিত!
ওরা মানবতাকে করছে পদদলিত।
শত শত নিরীহ মানুষকে ওরা অধিকার হতে বঞ্চিত করে,
দিয়াশলাইয়ের একটি কাঠি জ্বেলে
জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করছে শত শত ক্ষুধিতের গৃহ।
নিরীহ মানুষের পেটে সজোরে লাথি মেরে
তাদের ভিক্ষালব্ধ অন্নকে কেড়ে নিয়ে ওরা
পরধনে ধনীদের বাজারে বিক্রি করে
গড়ছে আপনার বহুতল ভবনটি।
আজ ক্ষুধার্ত শিশুদের কান্নার ধ্বনি
তোমার কর্ণ কুঠরে কী করে না আঘাত!
অথবা বস্তির নিরীহ ছোট্ট শিশুটির
একটি পাউরুটির টুকরো ভিক্ষে করে এনে
পানি দিয়ে ভিজিয়ে খাওয়ার দৃশ্য তোমাকে কী বিচলিত করে না!


জানো! এত কিছুর পরও  ওরা হায়েনার দল
বহুতল ভবনের সর্বোচ্চ তলায় আপন প্রেয়সীকে জড়িয়ে
হাসে নির্লজ্জ হাসি।
এতকিছুর পরও ওদের ডাইনিং টেবিলে নানা জাতের খাবার সজ্জিত-
পোলাও কোরমা মাছ-গোস্ত বিরিয়ানি,
এতকিছুর পরও ওরা নরম তুলতুলে বিছানায় ফেলে
স্বস্তির নিঃশ্বাস,
পোশাকে-আশাকে আভিজাত্য খানদানি;
আজ ক্ষমতার লিপ্সা মানুষকে করেছে হায়েনা কিংবা সাপের চেয়েও অধম,
সৃষ্টি হচ্ছে হাজার হাজার নব্য ফেরাউন।


ওদের ইশারায় হাজার হাজার মানুষকে কতল করা হয়,
করা হয় গৃহহীন-বস্ত্রহীন;
জানো, ওরা বন্দুকের নল উঁচিয়ে
আপনার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করছে;
পৃথিবীর কল্যাণ নয়,
নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিই তাদের একমাত্র অভীষ্ট লক্ষ্য।


আর সবচেয়ে খারাপ লাগে কখন, জানো?
যখন ওরা সফলতার কথা বলে,
এতকিছু ঘটানোর পরও যখন বলে-
আমরা লড়ছি মানুষের মুক্তি ও প্রগতির পথে,
নিরীহ মানবতার মুক্তির অভীষ্টে;
তখন অনেক হাসি পায়,
অনেক হাসতে ইচ্ছে করে নিজেকে,
তবে জেনে রেখো-
এ হাসি আনন্দের হওয়া তো কল্পনাতীত;
এ হাসি চির ঘৃণার
এ হাসি চির বেদনার
এ হাসি লক্ষ প্রাণের সঞ্চিত অভিশাপের।


এখানে অসহায় মানুষের নিদারুণ ক্রন্দন
ভারী করে তুলেছে গগন পবন;
এখানে নিরাপত্তাহীন নারী,
নিজ দোষে কিংবা মনুষ্যরূপী কিছু পশুর দোষে অহরহ হারাচ্ছে সম্ভ্রম।


তাই হে সূর্য!
তুমি জাগো প্রচণ্ড আলোকছটা নিয়ে,
বিতাড়িত করো সব অন্ধকার পৃথিবীর মানচিত্র হতে,
জ্বালিয়ে পুড়িয়ে করো ছারখার সব অত্যাচার,
নিপীড়নের স্টিমরোলার ভেঙে দাও,
কেড়ে নাও পাষাণের হস্ত হতে শাণিত খড়্গ;
আর উদ্বোধন করো
অবহেলা অনাদরে পড়ে থাকা
মানবতার মুক্তির সেই দীর্ঘ সেতু।


তুমি আজও ওঠোনি গগনে।
তবে আমরা তোমার আগমনী বার্তা শুনি এখনও।
তাই আমরা ক্লান্ত নয়;
আজও আমরা নিরীহ মানুষ আসমান পানে চেয়ে আছি অধীর প্রতীক্ষায়-
কবে তুমি জাগবে, হে তিমিরবিদারী সূর্য।