সুখ, তুমি ধন্য হে, তুমি ধন্য!
আচ্ছা, তুমি কি জানো?
পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মানুষের
একমাত্র লক্ষ্যবস্তু তুমি,
পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মানুষের
যাবতীয় কর্মকাণ্ড তোমাকে ঘিরেই আবর্তিত;
তোমাকে ঘিরেই চলে
দেশে-বিদেশে জলে-স্থলে
মানুষের বিচিত্র অভিনয়।
কিন্তু তবুও তুমি কেমন যেন অধরাই থেকে যাও।
তোমাকে হাতের মুঠোয় পেয়েও
ওদের তৃপ্তির ঢেঁকুর আসে না;
বরং আগের চেয়েও অনেক বেশী সুখ লাভের
অতৃপ্ত বাসনা নিয়ে
তীর্থের কাকের মতো প্রতীক্ষায় থাকে;
আর তাদের সুখ লাভের বাসনা
ক্রমবর্ধমান প্রান্তিক উপযোগ বিধি মেনে শুধু বেড়েই চলে।
ফলে তারা রং বদলায়,
রূপ বদলে ধারণ করে নতুন রূপ;
প্রয়োজনে ভয়ঙ্কর হিংস্র হয়ে উঠে
সিংহের চেয়েও বেশি
হায়েনার  চেয়েও বেশি।
তাইতো বাতাসে লাশের গন্ধ পাওয়া যায়;
শহরের অলিতে গলিতে
কিংবা গ্রামের ঝোপঝাড়ে নির্জনপুরীতে
মৃতদেহ পাই আমরা, মানুষের মৃতদেহ;
ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে পাই মানুষের কঙ্কাল;
অথবা গভীর রজনীতে
দূর হতে ভেসে আসে অসহায় মানুষের নিদারুণ চিৎকার;
প্রকাশ্য দিবালোকে হাজারো মানুষের সন্মুখে
আমরা মানুষ মারার ক্যারিশমা দেখতে পাই;
সহসা নিষ্পাপ শিশুটিও হয়ে ওঠে বলির পাঠা;
আর পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজটি করতে গিয়েও
ওদের বুক এতটুকুও কাঁপে না।
কেন জানো?
-তোমাকে পাওয়ার জন্য,
হে সুখ, শুধু তোমাকে পাওয়ার জন্য-
পেটের সুখ কিংবা পিঠের সুখ,
চোখের সুখ কিংবা মুখের সুখ,
ক্ষমতার সুখ কিংবা সম্মানের সুখ,
রাজত্বের সুখ কিংবা দেশ শাসনের সুখ।


দেখো, চারিদিকে কেমন নিদারুণ শিল্পের ছড়াছড়ি-
গভীর রজনীতে দিয়াশলাইয়ের একটি কাঠি জ্বেলে
ভস্ম করা হয় শত শত ক্ষুধিতের গৃহ;
টেবিলের নিচ দিয়ে আসে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ;
মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে  কায়েম হয় রাজত্ব,
দাঁড়িয়ে পড়ে সুউচ্চ ভবন;
হাতের নাগালে চলে আসে বিলাসবহুল গাড়ি;
মিথ্যার দূর্গন্ধে ধীরে ধীরে বাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে
আমাদের পৃথিবী।


আচ্ছা, ওরা কি জানে না!
হত্যা, জুলুম, জোর-জবরদস্তি করে
সুখের আসবাব পাওয়া যায়,
জমানো যায় মিলিয়ন বিলিয়ন টাকা,
গড়ে তোলা যায় জাঁকজমকপূর্ণ বহুতল রাজকীয় ভবন,
কিন্তু সুখের টিকিটিরও ধরা মেলে না।
আচ্ছা, একজন মানুষ কি একই সাথে
কয়েকটি বাড়িতে থাকতে পারে?
কয়েকটি ফ্লোরে?
অথবা একইসাথে কয়েকটি রুমে ঘুমাতে পারে?
অথবা একই রুমের কয়েকটি খাটে শুতে পারে?
অথবা পাশাপাশি রাখা দুটো বালিশে
একসাথে মাথা রেখে ঘুমাতে পারে?
আচ্ছা, একজন মানুষ কি একইসাথে
পাঁচ-সাত প্লেট খাবার খেতে পারে?
পোলাও, কোর্মা, মাছ, গোশত, বিরিয়ানি হলে পারবে?
আচ্ছা, একজন মানুষ কি একসাথে
দুটো গাড়িতে চড়তে পারে?
দুটো ট্রেনে? দুটো জাহাজে? দুটো বিমানে?
তবে কেন এত দৃষ্টতা!
অন্যায় পথে এতো প্রতিযোগিতা!
সুখের জন্য পৃথিবীর শান্তিকে গলাটিপে হত্যা করা!
আমাদের কি বোধোদয় হবে না!
হে প্রভু, আমাদের জ্ঞান দাও;
আমাদের মস্তিষ্ক খুলে দাও;
আমাদের অন্তরকে সততা, সহযোগিতা, সহমর্মিতা
এবং ভালোবাসায় ভরে দাও।