সেদিন শিবচতুর্দশী র পূর্ণিমা ;
উজ্জ্বল শশী তে ভরা ছিল গগন।
রুপোলি রং মাখাছিল মনে আছে ;
শুভ্রতা ছিল কিনা জানিনা ।
আতুর গন্ধ হয়তো বা ছিল ;
কিন্তু, ছলনা ছিল না মোটেই ।
সীমাহীন কৃষ্ণের আকাশে -
আবির্ভূত হয়েছিল ধূমকেতুর মতো;
বিরাজ করছিল নিরীহ সরোবরের -
ফুটন্ত কোকোনদ হয়ে ।


মোহময়ী লাগছিল সেদিন ,
যেন , জ্যোতিষ্ক লোকের আবির মাখানো ছায়া।


বাস্তব আর কল্পনা
ভীড় করেছিল মনের অলিন্দে ।
সুপ্ত পানসি জেগে উঠেছিল নতুন সত্তায় ;
ছুটে চলছিল নীলের ধার ঘেঁষে ,
কোন দূর অজানায় ।


নক্ষত্র হয়ে উঠেছিল নিষ্প্রভ
হারিয়ে ফেলেছিল দুরন্তপনা ;
স্বীকার করেছিল পরাজয়কে ;
দুর্জয় রজনীও হয়েছিল তিমিরাভূত।


দৃষ্টি প্রদীপ বিকশিত হয়েছিল
হরেক বর্ণের রক্তিম আভায়।
মনকে করেছিলাম সুদুরপ্রসারী ;
রঞ্জিত হয়েছিল হিয়ার সোনালী উৎকণ্ঠায় ।
হৃদয় মাঝে জেগে উঠেছিল -
এক জ্যোতির্ময়ী মানবী ।
ভূলণ্ঠিত আবেগের আনমনে ,
মনের সন্ধিগ্ধ নয়নের আড়ালে ,
ঠিক যে ছবি আমি এঁকেছিলাম ।


সেদিনের সে পূর্ণিমায় --
নিয়েছিলাম তার আতুর গন্ধ ;
দেখেছিলাম দিব্য আঁখিতে ;
সমর্পণ করেছিলাম নিজেকে ।
ফেরাতে পারিনি আমার দৃষ্টিকে ,
কখন যে ভালোবেসে ফেললাম !
তা, আজ আর আমার মনে নেই ।


মনে নেই সেই পূর্ণিমাকে ,
হারানো সেই বুড়ো শিবের কথাও ।
কিন্তু , আজও মনে আছে তাকে ;
মনে আছে সেই অপরূপ লাবণ্য ,
পবিত্র নয়ন জোড়া কে ।
যা আজও ভেসে ওঠে মনের আরশিতে ।
করাঘাত হানে' আমরণ কল্প স্মৃতি -
কি করে উড়ান দিয়েছিল মনকে !
এসব কিছুই আজ --
বর্ণহীন গোলাপের শুষ্ক পদচিহ্ন।


আজও পূর্ণিমা আসে ;
রুপোলি চাঁদ ওঠে আকাশে ।
চোখের দৃষ্টি পথে ভেসে ওঠে ধুমকেতু ;
বুড়ো শিবের পুজোও নেই মন্থর ।


কিন্তু ,
আজ আর খুঁজে পাইনা -
সেই গোপন কুহেলিকা কে ।
যাকে একদিন বসিয়েছিলাম মনের আসনে -
অনেক কাটাঝরা গুল্মলতা কে ভেদ করে ।


কিন্তু -
আজ আর--; 
না থাক !
আতুর গন্ধ পাই না আজ আর ;
জরাজীর্ণতার আস্তাকুড়ে হয়তো সে মলিন ,
হয়তো বা কালের গভীরে সে পরিবর্তনীয় ।
তবু ভুলতে পারিনা সেই অনন্তময়ী পূর্ণিমাকে।
ভুলতে পারিনা সেই রশ্মি ছটা ;
জ্যোতির্ময়ী মানবিকে ,
যে আজও জেগে আছে আমার সত্তায়
আমার নীদ-বিহীন অশ্রু ধারায় ।


আজও দৃষ্টিকে মেলে ধরি -
সুদূর  চন্দ্র আকাশের ফাঁকা রাজপথে ,
নক্ষত্রখচিত রাতের আকাশে ,
ধু-ধু মরু প্রান্তরে ,
এই ভেবে --
যদি তারে কোথাও খুঁজে পাই ।


                     ---------------------