তপন বাবু-, হাসতে হাসতে বললেন,
জানতো-,সে ছিলো আমার অনেক কাছের।
তাঁর বলার মাঝে যতটা সরলতা-
মুখের মাঝে ঠিক ততটায় হাসি।


কিন্তু,কোথায় যেন একটু বাদ-সাধল।
কোথায় যেন-
সামান্য একটুকরো প্রতিবাদ ঝিলিক মেরে উঠল,
তাঁর কালো পেশিবহুল মুখের উপর।
ভালো ক'রে লক্ষ্য করলে হয়তো দেখা যাবে
তাঁর সেই অতি গোপন প্রতিবাদ খানি;
কোন এক না-পাওয়ার বেদনায়,
অবিরত দংশন ক'রে চলেছে
তাঁর ঐ বলিষ্ঠ বক্ষের প্রতিটি রক্ত জালিকায়।


তপন বাবু-,
সদ্য রাস্তা থেকে তুলে আনা
রক্তাক্ত দেহের মালিক।
এখন নির্জীব!
এ-কে ফরটি সেভেন থেকে নির্গত বুলেটের আঘাতে-
যার ঐ-বলিষ্ঠ বুকটা মৌমাছির  প্রকোষ্ঠ হয়ে গেছে।
আর, ঐ গভীর প্রকোষ্ঠের ভিতর
কালচে জমাট বাঁধা রক্ত জমে আছে মধুর মত।


তপন বাবু-ছিলেন একজন ট্রেন হকার।
প্রতিদিন বিকেল তিনটে-পাঁচের ট্রেনে বই বিক্রি করতেন।
ক্যানিং থেকে সোজা শিয়ালদহ-
এই ছিল তাঁর জীবন।


একদিন ট্রেনেই তাঁর সাথে আমার আলাপ।
তপন বাবু,কোনরকমে ম্যাট্রিকুলেশান টা-
পাশ করেছিলেন।
তারপর!আর পড়া হয়নি।
কারণ ছিল প্রখর দারিদ্রতা আর বেঁচে থাকার আর্তনাদ।
বাবা-মা,কে হারিয়েছেন ক্লাস টু'তে।
তাঁর আগে-পিছে কেউ ছিলনা!
না-না!ছিল-না বলাটা ভুল হবে।
একজন ছিলেন --;দিদা-মা!
তিনিই তাঁকে মানুষ করেছেন।
আর ছিল-- ;প্রেমিকা!


তমালিকা ভালোবাসতো তপন বাবু'কে ।
তাঁকে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়ে ছিল।
শিখিয়ে ছিল ;কিভাবে বুকের উষ্ণতা নিতে হয়।


কথাছিল ;আসছে পূর্ণিমায়,
তাঁরা চন্দ্র গ্রহণ দেখবে একসাথে।
তমালিকা, লাল শাড়ী প'রে,
কপালে লাল টিপ দিয়ে,
যাবে দক্ষিণেশ্বর, মায়ের মন্দিরে পূজা দেবে।


কথাছিল; সংসারী হবে।
ভাগ ক'রে নেবে সুখ-দুঃখের যাকিছু।
অন্ধকারেও পথ চলবে হাত ধরে।
সমস্ত ভালবাসা উজাড় ক'রে দেবে তমালিকা কে।


আটপৌরে শাড়ীতে অপরূপা হয়ে,
তমালিকা ভালবাসবে তপন বাবু কে।
রোজ সন্ধ্যাবেলা ধূপ দেবে দেউড়ীতে।
তুলসী তলাই সান্ধ্য-প্রদীপ জ্বালাবে।


তমালিকা আজ অতীত!
সোনার চৌকাঠ পেরিয়ে
কোন এক বৃত্তবান পুরুষের বাহুমূলে আবদ্ধ।
আজ সে পুরো-দস্তুর সংসারী।
পবিত্র সমাজের -
একজন সু-শৃঙ্খল ,দায়িত্বশীল,পরিচিত এক মুখ।
তপন বাবুর রক্তে ভেজা নিথর শরীর-
এখন তাঁর কাছে অপরিচিত।


বুকে তাজা রক্তের স্বাদ
আর,মুখে সহানুভূতির বুলি।
এখন সে পুরোপুরি একজন স্বামী -পরায়ণা স্ত্রী।


স্বাধীন, একটা ঘর-
চার-চালা হোক বা দু-চালা।
অট্টালিকার ঝকঝকে শ্বেত পাথরের উপর নয়,
মুক্ত প্রান্তরের এক শীতল ছায়ায়-
সংসার পাততে চেয়েছিলেন তপন বাবু।


****************************