বাবা ও মেয়ে -প্রথম পর্ব
নরেশ পাটঘরা
মেয়ে : আজ কাল কি , তুমি সব ভুলে যাও বাবা ?
বাবা : হ্যাঁ রে মা ।
মেয়ে : মনে রাখার চেষ্টা করো না তাই ভুলে যাও ! মনে রাখার চেষ্টা করবে দেখবে সব মনে থাকবে !
           সকাল থেকে তোমার চিৎকারে সবাই ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে পড়ে ।
বাবা : তা ঠিক ।বুঝতে পারি আমি তোদের উপরে বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে মানসিক অত্যাচার করি।
মেয়ে : দেখলে ?তুমি কোন কথার কোন মানে করলে ?
বাবা : ছাড় আমার কথা !আজ সন্ধ্যেবেলা যাবি ,আমার সঙ্গে রায়মঙ্গল নদীর ঘাটে ?তোকে দেখাবো ,
         নদী কেমন করে ভাঙতে ভাঙতে হারিয়ে ফেলে স্বপ্নের উদ্দাম ভালোবাসার যৌবন !পথ হারিয়ে
        কেমন করে এপাড় ভাঙে ওপাড় ভাঙে নিজেকে খুঁজে পেতে !
মেয়ে : বয়স কি থেমে থাকে বাবা ?কালের নিয়মে সব একদিন হারিয়ে যায়।শুরু হয় নতুন পথ নতুন
           নতুন জীবন ।
বাবা : আমার পথ !আমার স্বপ্ন !আমার চাওয়া পাওয়া ,দেখা না দেখা সব ফিকে হয়ে আসছে দিন দিন !
মেয়ে : তুমি কি জীবনে কিছুই পাওনি বাবা?
বাবা : পেয়েছি ।তবে হারিয়েছি অনেক বেশী ।
মেয়ে : তোমার কি চাই ?
বাবা: জানি না ।
মেয়ে : কেন এত হতাশা ?
বাবা : ভেতরের আমি হারিয়ে যাচ্ছে গভীর অন্ধকারে !
মেয়ে : আমরা সবাই তোমার পাশে আছি ।আমাকে ধরে থাক ,তুমি শক্তি পাবে ,সাহস পাবে ।আমি
           তোমার মেয়ে ।একদিন তুমি আমাকে সাহস দিয়ে ছিলে ,স্বপ্ন দেখিয়ে ছিলে ,জীবনের যে
           কোনো প্রিকুলতার সঙ্গে লড়াই করার প্রেরণা দিয়ে ছিলে । এখন কেন এমন ?
বাবা :একা চলতে ভয় পাই ...................
মেয়ে : আবার একা কেন ভাবছো ?তুমি কতদিন গেয়ে শোনাতে
                  যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে
              তবে একলা চলো রে
             তবে একলা চলো একলা চলো ,একলা চলো রে ........
বাবা :  আচ্ছা ,তুই কি আমার সব স্বপ্ন পূরণ করতে পারবি ?
মেয়ে : চেষ্টা করবো বাবা ।
বাবা : সত্যি যদি একদিন  আমি না থাকি তবে এমনি করে আমায় সব সময় মনে রাখবি ?
মেয়ে : বাবা ছাড়া মেয়ের কি কোনো অস্বিস্ত আছে ?তুমিতো আমার রক্তে মিশে আছো ।তুমিতো              
            চেনালে এই পৃথিবীকে ।তোমার হাত ধরে স্বপ্ন দেখতে শিখলাম ।স্বপ্নের পথে হাঁটতে শিখলাম ।
            তুমি ছাড়া আমিতো কেউ না..........কেউ না ।
বাবা :    একি রে তোর চোখে জল । আয় কাছে আয় চোখ মুছে দিই
মেয়ে:  আচ্ছা বাবা ?তোমার মতো এমন করে কে চোখ মুছে দেবে ,আমার চোখে জল  এলে ?                                                            
           কে আমাকে হাত ধরে নিয়ে যাবে অন্ধকার থেকে আলোতে ?আমি কার কোলে মাথা রেখে
           ভুলবো আমার যন্ত্রণা ?
বাবা : ওই দেখ । বাবুই প্রজাপতি ধরার জন্য ছুটছে ,ঠিক যেন তোর ছোট বেলা ।
মেয়ে : তোমার এখনো মনে আছে ?আমি প্রজাপতি ধরতে গিয়ে কাঁটার ঝোপে পড়ে গিয়ে
            রক্তে আমার জামা ভিজে যাচ্ছে ,তুমি পাগলের মত কি করবে ভেবে পাচ্ছ না ।মা সেদিন
           তোমাকে কি বকাই না বকে ছিল ।
বাবা : মনে নেই আবর ! সারা দিন তোকে কোলে করে কতো জায়গায় ঘুরেছি আর গল্প শুনিয়েছি  
          রূপকথার ।
মেয়ে : আবার যদি সেই দিনগুলো ফিরে পেতাম !কি ভালোই হতো !সারাদিন ঘুরে ঘুরে দুপুর গড়িয়ে
           যখন তোমার কোলে চড়ে ঘরে ফিরতাম !মা তখন তোমাকে রুদ্রমুর্তি ধরে বকত ।মেয়েটা
          কখন স্নান করবে ?কখন খাবে ?সারাক্ষণ না খাইয়ে রেখেছো ?ততক্ষনে আমি একছুটে স্নানের
          ঘরে ।
বাবা : চল ।এক্ষুনি বেরিয়ে পড়ি ।আজ একবার দুপুর গড়িয়ে বাড়ি ফিরে আসি ।দেখি তোর মা কি
          বলে ?
মেয়ে : তাই চলো ।বেরিয়ে পড়ি ছেলে বেলার হাত ধরে ।