কোন এক  বসন্তের  প্রথম গোধুলি বেলায়-
আমাদের হয়েছিল শেষ দেখা,
হয়েছিল শেষ কথা।


সেই থেকে আজ অবধি,
অজানা বেদনার সুরে-
বীনার তারগুলো আর অনুরণিত হয় না,
মাধবীলতার সুভাস ভালো লাগে না,
কৃষ্ণচূড়া, পলাশ আর ফাগুনের  ফুলে বড্ড ভয়,
লাল শিমুল দেখে রাজপথের আলোয়ান মনে হয়,
কোকিলের মধুময় ডাক যেন হৃদয়  বিদীর্ণ করে,
তোমারই বিরহ যেন আমাকে অনলে দগ্ধ করে।
তবুও অপেক্ষমান, অপসূয়মান, আশার বসত মনে,
অন্তরের অদৃশ্য মায়া যেন ঘোর লাগায় ক্ষনিকের তরে।


তখনো বৈশাখের ছিল অনেক বাকি-
কিন্তু,
রৌদ্র, তপ্ত , দহন যন্ত্রণা  বড্ড বেশি রুক্ষমান
অকস্মাত - যবনিকাপাত অনাহূত বেদনা দান।
তাই বুঝি,
বসন্ত বাতাস আর বাতায়ন ছুয়ে যায় না,
মনের গহীনে আর নতুন সূর্য উঠে না,
প্রতিদিনের ফিসফিস আলাপন হয় না,
আগেকার দিনের মত মাকে দিই না ফাঁকি,
তোমার জন্য অনেক রাত্র জেগে নাহি থাকি,
এখন আমি বড্ড শান্ত-
শ্রান্ত, পরিশ্রান্ত।
তবুও কেন যেন মনে হয় আজ,
এই নিরবতাটুকুর ছিল বুঝি বড্ড প্রয়োজন,
তাই হয়তো তোমার সাথে আমার বিভাজন।  


সেদিন ফাল্গুনের  প্রথম প্রহর ছিল,
কাছে যাওয়ার সময় ছিল,
নতুন করে কাছে পাওয়ার ছিল,
মনে হাজারো স্বপ্ন ছিল।
আর আমি,
ফাল্গুনী হাওয়ায় মাতাল ছিলাম,
অলীক স্বপ্নে বিভোর ছিলাম,
তাই হয়তা বুঝতে পারি নি -
বুঝতে পারি নি নীল বেদনার সুর,
বুঝতে পারি নি ঈশান কোণে জমে থাকা মেঘের গোলযোগ।
বুঝতে পারি নি জীবনের গোধুলি বেলার চাহনী,
বুঝতে পারি নি হাসিহাসি মুখের করুণ রাগিনী।


যখন বুঝতে পারলাম,
তখন সব শেষ-
বেদনাহত নির্বাক পক্ষীর মতো,
কতক্ষন ডানা জাপটানো, বাচাঁর আকুল চেষ্টা,
নিঃশ্বাসের শেষবিন্দু দিয়ে টিকে থাকার প্রচেষ্টা।
তারপর আবার নিরব - নিস্তব্ধতা,
শত সহস্র রজনীর স্তব্ধতা-
ক্রমশ গ্রাস করে আমার আমিত্বকে।
শূন্য আমি আমার জীবন বৈতরণীতে,
চৈত্রের খরতপ্ত বালুতটে,
ধু ধু মরুভূমি, ছেয়ে যায় আমায়;
কালের গহীন অমানিশার  নৈঋতে।


শুধু জেনেছিলাম,
সেদিন নাকি পথঘাট রাংগা হয়েছিল,
ঢাকার বুকে আবার কারবালা এসেছিল,
রাজপথে রক্তের হুলিয়া বয়েছিল,
আগুনের লেলিহান শিখা বায়ুতে মিশে ছিল,
সেদিন নাকি অনেক মায়ের কোল খালি হয়েছিল,
সেদিন নাকি আমার মত অনেকেরই-
মেহেদী রাংগা হাত ভূমিতে লুটিয়েছিল,
সেদিন নাকি ছিল আটই ফাল্গুন,
রক্তস্নাত বৃষ্টিভেজা  খরতপ্ত মধ্যাহ্ন দুপুর,
সেদিন নাকি ছিল কোরবানির দিন-
সেদিন নাকি ছিল বড্ড রক্তিম।  
সেদিন নাকি ছিল আগুন ঝরা পাখির কলতান,
সেদিন নাকি ছিল তোমার মুখে মায়ের ভাষার গান।