ম্যাথু আর্নল্ড (১৮২২-১৮৮৮) কে যদিও স্মরণ করা হয় তাঁর সমালোচনামূলক সাহিত্যের জন্য। কিন্তু তিনি তাঁর কেরিয়ার শুরু করেছিলেন কবি হিসেবে। তাঁর বাবা থমাস আর্নলড ছিলেন রাগবী স্কুলের প্রধান শিক্ষক সেই স্কুলেরই ছাত্র ছিলেন ম্যাথু আর্নলড। ম্যাথু আর্নল্ড বেলিওল স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং এরপর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৮৪৪ সালে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করার পরে তিনি তাঁর রাগবী স্কুলে শিক্ষক হিসেবে ফিরে যান। ১৮৫১ সালে বিয়ে করেন এবং সরকারী স্কুলের ইন্সপেক্টর হিসেবে জয়েন করেন। এটি তাঁকে ইংল্যান্ড এবং উপমহাদেশের বেশ কয়েকটি দেশ ভ্রমণের সুযোগ করে দেয়।


৩৫ বছর দায়িত্বে থাকাকালীন শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হন, একই সাথে সমালোচনা মূলক সাহিত্য নিয়ে কাজ করা শুরু করেন এবং কবিতার প্রতিও তিনি ঝুঁকে পড়েন – কবিতা লিখতে শুরু করেন। তাঁর কবিতা এবং গদ্যে তিনি দ্ব্যর্থহীন স্পষ্ট বক্তব্য রাখেন মানুষের মূল্যবোধ, আচরণ এবং অনুভবের উপর। নীতিবাক্য সম্পর্কিত কবিতায়, বিষাদে আচ্ছাদিত, শোকসূচক অথবা রসাত্মক কাব্য এবং একই সাথে নাগরিক আবহ তাঁর লেখাকে ভিন্ন রকম মর্যাদা দান করেছে। তৎকালীন ইংল্যান্ডের সমাজ আলোকিত করার জন্য তাঁর এই প্রয়াস ছিলো যথার্থ।


Empedocles on Etna (1852) and Poems (1853) তাঁকে কবি হিসেবে খ্যাতি এনে দেয় এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁকে কবিতার প্রফেসর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় এবং এই পদে ১৮৫৭ থেকে ১৮৬৭ পর্যন্ত অধিষ্ঠিত ছিলেন। এই সময়ে তিনি তাঁর বিখ্যাত বাল্ক লিখেন যেটি তাঁর বিখ্যাত সমালোচনা মূলক কাজ হিসেবে তাঁকে সুখ্যাতি এনে দেয়। ম্যাথু আর্নল্ডকে বলা হয় সমালোচকদের সমালোচক। তিনিই ইংরেজী সাহিত্যে প্রথম আধুনিক সমালোচক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। সমালোচক হিসেবেও যে তিনি শ্রেষ্ঠ ছিলেন তা নয় কবিতার ক্ষেত্রেও তিনি অনন্যসাধারণ অবদান রেখেছেন। তাঁর দর্শন ছিলো – To know the best that is known and thought in the world.


সর্বোত্তম জানা এবং জানানো সমস্ত পৃথিবীকে। এবং আধুনিক বিশ্বে সত্য এবং নতুন কোনো ধারণা বা সৃষ্টি সম্পর্কে যথার্থ দায়িত্ব নিয়ে সমালোচনা করে পাঠককে নতুন দিক নির্দেশনা দেয়া একজন সমালোচকের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। যুক্তি ও তর্কের মাধ্যমে তুলনা এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে ক্রিয়েটিভ সমালোচনার দুয়ার খুলে দেন। এতে ওয়ার্ডসওয়ার্থ, শেলী, বায়রন্‌, কীটস এর মত রোমান্টিক কবিদের কবিতা খুঁটিনাটি তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমালোচনা করার ফলে তিনি সাহিত্য সমালোচনার মত দাহ্য জগতে উচ্চামর্যাদা দখল করে আছেন। এবং সাহিত্য সমালোচনার জগতে তাঁর এই অবদানের জন্য ইংরেজী সাহিত্যের জগতে তাঁকে rich galaxy poet –critics এর অভিধায় অভিষিক্ত করা হয়েছে।


T.S Eliot তাঁর Objective Approach এর মাধ্যমে সমালোচনা মূলক মূল্যায়নের প্রশংসা করেন। আবার Allen Tale তাঁর একটি লেখায় বলেন – আর্নল্ড এর ক্রিয়েটিভ সমালোচনার ফলে একজন Tennyson কে আবিষ্কার করা অনেক বেশী সহজ হয়। The fiction of criticism এ আর্নল্ড সৃষ্টিশীলতা সম্পর্কে নতুন যুক্তি উপস্থাপন করেন। সাহিত্যে কেন্দ্রীয় পরিবর্তনের চাইতে বেশী প্রয়োজন সৃষ্টিশীলতার উপর গুরুত্ব দেয়া। সেক্ষেত্রে বাস্তবতার চাইতে লেখক/কবির কল্পনাশক্তির উপর অনেক বেশী গুরুত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আবার বলা যায় কোনো ফিগারেটিভ বিষয় বর্ণনার ক্ষেত্রে বা অভিসন্ধি বোঝানোর ক্ষেত্রে সৃষ্টিশীলতা অনেক বেশী কার্যকর। লেখকের ক্ষেত্রে অস্তিত্ব বা অনস্তিত্ব বর্ণনায় শিল্পের ভূমিকায় নতুন কিছু সৃষ্টিতে খুব বেশী শব্দের দরকার নেই। আর্নল্ড যুক্তি তর্কের মাধ্যমে তুলে ধরেন একটা ভালো সমালোচনা কবি/ লেখকের লেখাকে অনেক বেশী মনোগ্রাহী করে তুলে। কোনো বিষয় সম্পর্কে বাস্তব বা লদ্ধ অভিজ্ঞতার যোজন বিয়োজন হতে পারে। আবার সুক্ষনভাবে বলা যায় একজনের অন্তর্গত শক্তি বিষয় বর্ণনার ক্ষেত্রে নিজস্ব মূল্যবোধের প্রভাব পড়ে। সমালোচনার ক্ষেত্রে দ্যোতনা এবং অর্থ নির্দেশ এর মাধ্যমে কবিতার বিশ্লেষণের যে সঠিক ভারসাম্য রক্ষিত হয় তাতে একজন কবিকে আবিষ্কার করা অনেক বেশী সহজ হয়।


অতএব সাহিত্যের সমালোচনার ক্ষেত্রে তার উত্তম ধারণা প্রয়োজন। লেখকের ভাষায় লেখক /কবির প্রতি অনাগ্রহ এবং একই সাথে তার লেখার প্রতি অনাগ্রহ ও সমালোচনা খুব শৈল্পিক এবং হৃদয়গ্রাহী হতে পারে না। তবে সর্বাত্মকভাবে অবশ্যই কল্যাণমুখী হওয়া প্রয়োজন। সাংস্কৃতিক এবং সমালোচনামূলক মূল্যবোধ আর্নল্ড এর সমার্থক হতে পারে। যেমন Scott James বলেন যে তাকে এরিস্টটলের সাথে তুলনা করা যায়। এরিস্টটল যেমন শিল্পকে বিশ্লেষন করেন দর্শন দিয়ে সেক্ষেত্রে আর্নল্ড সমালোচকের ভূমিকায় বিশ্লেষণ করেন। একজন আমাদের জানান কবিতার মূল উপাদানের কথা, অন্যজন জানান মূল উপাদান বা বিষয় দিয়ে কবিতা হয় সেগুলো কতটা উৎকৃষ্ট। এরিস্টটলের বিশ্লেষন শিল্পীর প্রতি অনুগত হতে শেখায় আর আর্নল্ড সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধের কথাটিও ভুলতে দেন না, স্মরণ করিয়ে দেন। আর্নল্ডের কবিতা জীবন সচেতনতামূলক। কিন্তু এর ভেতরে লুকিয়ে থাকে প্রেম, কবিতার সত্যি, শক্তি এবং কবিতার সৌন্দর্য। আর্নল্ডের মতে (the study of poetry /1988) – কবিতা একাই আমাদের জীবনকে উষ্ণ করে – জীবনকে অনন্য সৌন্দর্য বোধে মগ্ন করে। সেখানে ধর্ম দ্রুতই বিশ্বাসের ভিতকে নড়বড়ে করে। তিনি দাবী করেন কবিতার অবস্থান ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞানের চাইতে উঁচুতে। ওয়ার্ডস ওয়ার্থের উক্তিকেই তিনি সায় দেন যেখানে ওয়ার্ডস ওয়ার্থ বলেন – কবিতা হলো আবেগপূর্ণ অভিব্যক্তি যা সব ধরণের বিজ্ঞানের উর্ধ্বে। – অভিব্যক্তিহীন মুখাবয়ব কেমন হতে পারে ? তিনি দাবী করেন – কবিতা হলোঃ
the breath and finer spirit of knowledge.


Essays in Criticism (1865) এবং Culture and Anarchy (1869) এই দুটো লেখায় আর্নল্ড চতুর্থ ধারণা স্থির করেন যেটি ভিক্টোরিয়ান যুগের প্রতিনিধিত্বকারী মূল্যবোধ প্রতিফলিত করে। অবিশ্রান্ত মনোজাগতিক একাকীত্বের মত সমস্যার বিষয়টি Meditative and rhetorical কবিতাগুলোতে এসেছে। যেমন আর্নল্ড Donnes এর দাবী পুনরাবৃত্তি করেন – No man in Island এ দ্বীপে কেউ নেই এর মানে হলো মানুষের মরনশীলতার দিকটি চিহ্নিত করে- প্রকৃত পক্ষে জীবন সমুদ্রে আমরা সবাই একা। তাঁর একটি জনপ্রিয় কবিতা Dover Beach,” এ আরনল্ড দেখান মানুষের একাকীত্ব মানুষের বিশ্বাস কমিয়ে দেয়। তাঁর নিজস্ব ধর্মীয় অবিশ্বাস একটি বড় উদ্বিগ্নতার কারণ এবং কিছু রচনায় আর্নল্ড খ্রীষ্ট ধর্মের আবশ্যকীয়তার সত্যতা খুজে বসেছেন। তাঁর অত্যন্ত প্রভাবশালী সাহিত্য কর্ম যেমন “The Function of Criticism” (1865) এবং “The Study of Poetry” (1880) লেখাগুলোর জন্য আর্নল্ডকে বলা হতো নতুন মহাকাব্যের কবি। যদিও আর্নল্ড নতুন যুগের মহাকাব্যের কবি হিসেবে সমধিক পরিচিত -তবে কবিতা তাঁর পাঠকদের কাছে সজীব এবং মহান বানী নিয়ে উপস্থিত হবে এ ছিলো আর্নল্ডের মৌলিক বিশ্বাস।


আর্নল্ডের যুক্তি এবং সমালোচনা মূলক লেখাগুলো ছিলো নতুন ধর্ম বিশ্বাস, ক্লাসিক্যাল নন্দনতত্ত্ব এবং নৈতিকতা বিশেষ করে ভিক্টোরিয়ান ইন্টেলেকচুয়াল এর উপর। উপস্থাপনার মধ্যে নিখুঁত ভদ্রতা এবং সূক্ষ্মতা জ্ঞান উপস্থিত। তিনি সমালোচনাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে আসেন। টি এস এলিয়ট, লায়নেল ট্রিলিং এবং হ্যারলডবুমের সাহিত্য কর্মের উপর সমালোচনা লিখেন। তাঁর কবিতার অসাধারণ প্রভাব ছিলো তবু কবির জটিল অনুভুতি স্পষ্টতার ক্ষেত্রে, লেখকদের বিশেষ করে ডব্লিউ বি ইয়েটস, জেমস রাইট, সিলভিয়া প্লাথ এবং শেরন ওল্ডসের মধ্যে একজনকে আর একজনের থেকে পৃথক করা যেতো – কবিতা বিশেষ করে সমালোচনা সাহিত্যে স্বচ্ছতার সাথে কবিতাকে যেভাবে ব্যবচ্ছেদ করেছেন এতে করে একজন লেখক অন্য একজন লেখক থেকে বিভিন্নতার যে ফারাক রয়েছে তা তিনি সফলভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন। এক্ষেত্রে বিশেষ করে জেমস জয়েস এবং টি এস এলিয়ট নিজেদের সাহিত্যের সমালোচনা পড়ে নিজেদের ত্রুটি এবং সৌন্দর্য তুলে ধরতে পেরেছিলেন।


তাঁর সামগ্রীক অর্জন সম্পর্কে G. K. Chesterton বলেন পরিহাস প্রিয়তার আড়ালে তিনি ছিলেন আসলে সিরিয়াস মানুষ এবং তাঁর সময়ে বিশেষ করে কার্লাইল এবং রাসকিন প্রমুখ থাকা স্বত্তেও সম্ভবত তিনিই ছিলেন জীবিতদের মধ্যে সবচাইতে সিরিয়াস মানুষ। একটি চিঠির সারমর্মে এইচ যে মুলারের অভিমত ছিলো – তীব্র ভায়োলেন্সের সময়ে তিনি যে ধারণার জন্ম দেন তাতে যে কোনো সিভিলাইজেশন একা রক্ষা করতে পারে তা নয়। অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ এবং এই সময়ে তাঁর গদ্য কালচার বা সংস্কৃতি বিষয়ক দর্শনের প্রাসঙ্গিকতা উঠে আসে। এবং এই বিষয়ে তাঁর দর্শন অনেক বেশী আকর্ষনীয় এবং আবেদন তৈরী করতে পারে।“


১৯৫০ সালে একটি পত্রিকায় বলা হয় যে যদি সমাজচ্যুত ব্যক্তিদের জন্য একটি বই নির্দিষ্ট করতে বলা হয় তবে ম্যাথু আর্নল্ডের “দি পোয়েটিক্যাল ওয়ার্কস ফর ম্যাথু আর্নল্ড “ বইটির প্রাসঙ্গিকতা সবার আগে উঠে আসবে। এর দীর্ঘ কবিতাগুলো প্রথম প্রবেশের সময় জটিল এবং কর্কশ মনে হলেও ভেতরে এর শক্তি অপরিমিত। আর্নল্ড স্যাটারিস্ট এবং একজন স্যাটায়ারিস্ট এর ন্যায় দ্রুততার সাথে সার সংক্ষেপ বোঝার ক্ষমতা তাকে ভিন্নতা দিয়েছে। যদিও বিষয়বস্তু অনেকটাই চারমিং কিন্তু আত্মশ্লাঘা পূর্ণ লেখা – যেমন টিলটসন বলেন – সরাসরি অভিনিবেশ সরাসরি বস্তুর প্রতি নয় অনেকটা তাঁর প্রতি এবং তাঁর বিষয়বস্তুর প্রতি। আর্নল্ড তাঁর রোমান্টিক কবিতার খেয়ালীপনার ব্যাখ্যা কোথাও কোথাও দিয়েছেন। মাঝে মাঝে দেখা যায় তিনি Goathe কে সমর্থন করছেন। যেখানে Goathe মনে করেন সাহিত্যের জন্য রোমান্টিসিজম একটা ডিজিজ কিন্তু ক্লাসিসিজম হলো সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ। আর্নল্ড উন্নাসিক দৃষ্টিতে রোমান্টিসিজমকে দেখেন। এবং রোমান্টিসিজমের ইতিবাচক দিক উপেক্ষা করেন যেটিকে তিনি মনে করেন এর ইতিবাচক দিক গুলো উত্তর পুরুষে প্রোথিত হতে পারে। যেমন মানবতার দৃষ্টিতে প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা, শিশুর প্রতি স্নেহ, এগুলো হলো অতীন্দ্রিয় বাদ। মানুষের প্রতি বিশ্বাস এর অপূর্ণতা এবং মানুষের অজেয় মনের উপর বিশ্বাস স্থাপন করার মত বোধ। ক্লাসিসিজমের প্রতি অপরিমিত ভালোবাসা তাকে সৌন্দর্যের ভাবোচ্ছাস বা গীতিধর্মীতার প্রতি অন্ধ করে দিয়েছে। তিনি গীতিকবিতাকে প্রত্যাখ্যান করেন যা একজন কবির ভাব প্রবণতাকে প্রকাশ করে যেমন তেমনি তার প্রগাঢ়- তীক্ষন অনুভুতিকে ভিন্ন ব্যাঞ্জনা দান করে। আর্নল্ড যে স্ট্যান্ডার্ড দাঁড় করান এতে আধুনিক এবং প্রাচীন কবিদের অস্বীকার করা হবে। কারণ তারা গেয়েছিলেন “profouse strains of unpremeditated art-
সিম্বলিজম এবং উল্লেখবহুলতার কারণে তিনি রোমান্টিকতাকে উপেক্ষা করেন। তিনি ওয়ার্ডস ওয়ার্থ এর প্রশংসা করে বলেন প্রকৃতি নিজেই তাঁর হাতে কলম ধরে এবং নিরাভরণ হাতে লিখে নিছক প্রবেশ ক্ষমতার বলেই।


আর্নল্ড কবিতাকে মূল্যায়ন করেন এর এর দৃঢ় ধারণার কারণে যেটা ওয়ার্ডওয়ার্থ এর কবিতায় পাওয়া গিয়েছে। তিনি শেলী সম্পর্কে বলেন – সুন্দর কিন্তু দেবদূত এর অকার্যকর পাখার জন্য সব কিছুই ব্যর্থ হলো। একটা সময় যখন সস্তা সাহিত্য সাধারণ মানুষকে আনন্দ দিতো, একজন অন্তত ভয় পেয়েছিলেন যে ক্ল্যাসিকেল সমালোচনা সবকিছুকে ম্লান করে দেবে। কিন্তু আর্নল্ড ঠিকই ভেবেছিলেন ক্ল্যাসিক্যাল সাহিত্যে আলোচনাই আধুনিক যুগে প্রাধান্য পাবে। এটা এজন্য নয় যে পাঠকের বড় অংশ সচেতন কিন্তু এজন্য যে মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির কারণেই এটি সংরক্ষিত থাকতে পারে।


বর্তমানে কবিতার সংস্কৃতি বাক্যলংকার, মিথ, প্রতীক এবং বিমূর্ত বাক্যের সম্ভার -তথাপি আর্নল্ডের কাছে আসতেই হবে। সাহিত্য এবং জীবন সম্পর্কে কেন্দ্রীয় প্রশ্নের সম্মুখীন হতেই হবে আর্নল্ডকে যেহেতু এগুলোকে পরিণত এবং নাগরিক মানুষজন সংরক্ষণ করেন। Douglas Bush বলেন যে আর্নল্ডের নিঃশ্বাস এবং বিশ্বাসকে কখনই পরিমাপ বা ধারণাও করা যাবে না কারণ তাঁর নিজের সময়ে তাঁর ভাবনা এবং ধারণার স্বচ্ছতা তৎকালীন শিক্ষিত সমাজের অংশ হয়ে গিয়েছিলো। এলিয়টের মতে তিনি এমন একজন সমালোচক যিনি সময়ের সন্তান। আর্নল্ড তাঁর নিজের একটি কবিতার প্রসংগে তাঁর মা এর কাছে লিখিত চিঠিতে বলেন, হতে পারে যে কবিতার ক্ষেত্রে আমি টেনিসনের চাইতে কম আবেগ ধারণ করি এবং মডার্ন ডেভলপমেন্টের ক্ষেত্রে এই ফিউশনকে একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এনে তার গতি বদলানো অথবা মোচড় দেয়ার একটা প্রবণতা আমি তৈরী করতে পেরেছি “ এই ধরণের অবিচ্ছিন্নতা অধিকাংশ নতুন পাঠকদের কাছে সাধারণ মূল্যায়ণের ক্ষেত্রে নীতিবাক্য ভারাক্রান্ত, বিষাদ, এলিজিক। তাঁর গদ্য অনেকটাই শহুরে, আদর্শ এবং নীতিবাক্য সম্বলিত। তৎকালীন ইংল্যান্ডের সমাজ সচেতনতা অথবা রেনেসাঁর প্রভাবে সদ্য জেগে ওঠা সমাজকে আলোকিত করার ক্ষেত্রে তাঁর গদ্য/ সমালোচনামূলক নিবন্ধ অনেকটা লাইট হাউসের কাজ করেছে।


১২/২/১৬ ইং দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত।