সখি পাতিসনে শিলাতলে পদ্মপাতা,
   সখি দিসনে গোলাব-ছিটে খাস্‌ লো মাথা!
    যার অন্তরে ক্রন্দন
     করে হৃদি মন্থন
     তারে হরি-চন্দন
       কমলী মালা-
   সখি দিসনে লো দিসনে লো, বড় সে জ্বালা!      
বল কেমনে নিবাই সখি বুকের আগুন!
   এল খুন-মাখা তৃণ নিয়ে খু’নেরা ফাগুন!
    সে যেন হানে হুল্‌-খুনসুড়ি,
     ফেটে পড়ে ফুলকুঁড়ি
     আইবুড়ো আইবুড়ো
       বুকে ধরে ঘুণ!
   যত বিরহিণী নিম্‌-খুন-কাটা ঘায়ে নুন!


   আজ লাল-পানি পিয়ে দেখি সব-কিছু  চুর!
   সবে আতর বিলায় বায়ু বাতাবি নেবুর!
    হ’ল মাদার আশোক ঘা’ল,
     রঙন তো নাজেহাল!
     লালে লাল ডালে-ডাল
       পলাশ শিমুল!
   সখি তাহাদের মধু ক্ষরে-মোরে বেঁধে হুল্‌!


   নব সহকার-মঞ্জরী সহ ভ্রমরী!
   চুমে ভোমরা নিপট, হিয়া মরে গুমরি’।
    কত ঘাটে ঘাটে সই-সই
     ঘট ভরে নিতি ওই,
     চোখে মুখে ফোটে খই,-
      আব-রাঙা গাল,
   যত আধ-ভাঙা ইঙ্গিত তত হয় লাল!


   আর সইতে পারিনে সই ফুল-ঝামেলা!
   প্রাতে মল্লী চাঁপা, সাঁজে বেলা চামেলা!
    হের ফুটবো মাধী হুরী
     ডগমগ তরুপুরী,
     পথে পথে ফুলঝুরি
      সজিনা ফুলে!
   এত ফুল দেখে কুলবালা কূল না ভুলে!


   সাজি’ বাটা-ভরা ছাঁচিপান ব্যজনী-হাতে
   করে স্বজনে বীজন কত সজনী ছাতে!
    সেথা চোখে চোখে সঙ্কেত
     কানে কথা-যাও ধেৎ,-
     ঢ’লে-পড়া অঙ্কেতে
      মন্‌মথ-ঘায়!
   আজ আমি ছাড়া আর সবে মন-মত পায়।


   সখি মিষ্টি ও ঝাল মেশা এল এ কি বায়!
   এ যে বুক যত জ্বালা করে মুখ তত চায়!
    এযে শরাবের মতো নেশা  
     এ পোড়া মলয় মেশা,
     ডাকে তাহে কুলনাশা
      কালামুখো পিক।
   যেন কাবাব করিতে বেঁধে কলিজাতে শিক্‌!


   এল আলো-রাধা ফাগ ভরি’ চাঁদের থালায়
   ঝরে জোছনা-আবীর সারা শ্যাম সুষমায়!
    যত ডাল-পালা নিম্‌খুন,
     ফুলে ফুলে কুঙ্কুম্‌,
     চুড়ি বালা রুম্‌ঝুম,
      হোরির খেলা,
   শুধু নিরালায় কেঁদে মরি আমি একেলা!
  
   আজ সঙ্কেত-শঙ্কিত বন-বীথিকায়
   কত কুলবধূ ছিঁড়ে শাড়ি কুলের কাঁটায়!
    সখি ভরা মোর এ দু’কুল
     কাঁটাহীন শুধু ফুল!
     ফুলে এত বেঁধে হুল?
      ভালো ছিল হায়,
   সখি ছিঁড়িত দু’কূল যদি কুলের কাঁটায়!