#তুমি কি এখন


তুমি কি এখন স্বপ্নভঙ্গ কেউ
একাকী কোথাও আহত পাখির শোক
ছলছল চোখে এলোমেলো করো ঢেউ
তুমি কি এখন শরাহত কোনো লোক!


তুমি কি ভেবেছো সূর্যটা ডুবে গেছে
তুমি কি ভেবেছো নেই আর কোনো আলো
তুমি কি ভেবেছো শিলীভূত হয়ে আছে
অনন্ত এক আকাশের ঘনকালো


রাত্রির পরে সকাল যে ফিরে আসে
সে কথা জানো কি তুমি
শেষাবধি কোনো লোকালয় উদভাসে
দৃঢ়পদভারে পার হলে বনভূমি


মানুষের নামে যারা কলঙ্ক তারা মানে পরাভব
যোগ-গুণ-ভাগ নিয়েতো অঙ্ক বিয়োগ নয়তো সব
তবুও তুমি কি উঠে দাঁড়াবে না আজ
বুক টান করে নামবে না পথে আর
পাড়ি জমাবে না আকাশের শাহবাজ
ছিঁড়বে না টুটি দুরন্ত ঝঞ্ঝার


একটু আঘাতে সিংহের বাড়ে ক্ষোভ
একটু আঘাতে বাঘ ছাড়ে হুংকার
একটু আঘাতে জ্বলে ওঠে বিক্ষোভ
বজ্রসভায় বিদ্যুৎ বারতার


এসব খবরে তুমি কি হও না দ্বিগুণ
উৎসাহী কোনো পুরুষোত্তম কেউ
অথবা কেবল নিজেকে করছো খুন
বিষের পাত্রে স্বেচ্ছায় তুলে ঢেউ


হতাশ হয় না জিহাদের জঙ্গীরা
হতাশ হয় না কোনো খাঁটি বিপ্লবী
হতাশ হয় না শহীদের সঙ্গীরা
বুকে নিয়ে ফেরে ঈমানের দুন্দুভি


চলে অবিরাম চির মুজাহীদ বীর
সত্যের পথে সেনানী অকুতোভয়
ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে নিরাশার জিঞ্জির
সে শের-দিলীর মানে নাকো পরাজয়


এখনো এখানে মাদানীর খুন মাখা
শহীদ মালেক এখনো এখানে শুয়ে
মানুষের মনে কোরানের ছবি আঁকা
তবু কেনো তুমি পড়বে বন্ধু নুয়ে


তোমার সামনে তিতুমীর আছে
আছেতো খানজাহান
হাজী শরীয়ত আছে আরো কাছে
আছে শাহজালাল অম্লান


নূর কুতুবুল আলম যেখানে
প্রেরণার প্রিয় মহাপুরুষের নাম
কিসের ভাবনা তোমার সেখানে
বরং চেতনা আরো করো উদ্দাম


বখতিয়ারের ঘোড়ার শব্দ ঐ
লোকালয়ে যেনো অবিকল শোনা যায়
তাই কি আমিও দুই কান পেতে রই
সতেরো সওয়ার কবে আসে দরজায়


তুমি কি এখন স্বপ্নবিভোর কেউ
মুক্তপক্ষ কোনো বিহঙ্গ শ্লোক
রঙধনু চোখে ছুঁয়ে যাও যতো ঢেউ
তুমি কি এখন জাগরিত কোনো লোক


দুর্বল ভীরু আনে না দ্বীনের জয়
খানিক বিপদে ভয়ে কাঁপা তার কাজ
ঈমানের তেজে পৃথিবীর বিস্ময়
শুধু সেই পারে গড়তে হেরার রাজ


তবে তুমি ছুটে চলো বেগে আরো বেগে
বন্যার মতো দুরন্ত দুর্বার
চলো তাকবীর জোরে আরো জোরে হেঁকে
পড়ে থাক পিছে পচা লাশ মুর্দার।


রচনাকাল : ১৯৯৬


#অভিশপ্ত অসুন্দরের প্রতি


অভিশপ্ত অসুন্দর
তুমি এখন দুর্ভাগ্যের মতো চোখের কোটরে দাঁড়িয়ে আছো
সমস্ত ভাবনার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছো তুমি এখন অজগরের মতো


সংসদ ভবনের সমস্ত গাছপালা
যেনো দু:স্বপ্নরা তাড়া করে ফিরছে
এবং কুসুমিত প্রাঙ্গণ
অথবা চট্টগ্রাম থেকে প্রতিনিয়ত লাশের
যে সংবাদ গ্রাস করছে সমগ্র বাংলাদেশ
হঠাৎ ঘাড় ফিরিয়ে দেখি
তুমি সেখানেও দাঁড়িয়ে আছো।


মনে হয় বাংলাদেশের সমস্ত নদীতে
তুমিই আগুন ধরিয়ে দেবে
তুমিই উৎপাটিত করবে সমস্ত বৃক্ষ, সমস্ত সুন্দরবন
অত:পর তুমিই কেড়ে নেবে
সমস্ত বধুদের লাজনম্র ঘোমটা।


যেখানে সত্য আছে
সেখানেও তুমি তোমার বীভৎস কণ্ঠ থেকে
ঢেলে দিয়েছো মিথ্যার গরল।


অভিশপ্ত অসুন্দর
তোমার জন্যেই ঘরে ফেরার আগে
উৎকণ্ঠিত থাকি। ঘরে ফিরেও পাবো না বুঝি
আমার প্রিয়তমা
অথবা আমিও আর
ঘরে ফিরবো না কখনো
যেনো আমার সন্তানের
চোখের শীতলতাও হারিয়ে ফেলেছি
অথবা আমি আমার ঘরে ফেরার পথই
আর খুঁজে পাই না


অভিশপ্ত অসুন্দর
তোমার সমস্ত ভয়ঙ্কর থেকে
আমার হৃদয়কে, আমার ঘরকে, আমার স্বদেশকে
রেহাই দাও


অথবা তুমি
ফিরে যাও তোমার বীভৎস উৎসের কুৎসিত ভেতরে।


রচনাকাল : ২০০০


#বৃষ্টি : নিষণ্ন পাখির নীড়ের ওপর


মেঘমালার দিকে
তাকাতে-না-তাকাতেই
উড়ে এলো প্রথম প্রভাত
উড়ে এলো আকাশের
অবশিষ্ট
সজল
প্রলেপনিচয়


এবং তাকাতে-না-তাকাতেই
হালকা-পাতলা নেকাব
নেমে এলো-
নেমে এলো
অবগুণ্ঠনের তৃপ্তি
নিষইণ্ন পাখির নীড়ের ওপর-
দূরের বাঁশরীর কোমল আগ্রহের সুর
ক্রমাগত যেমন কাছে আসে
এবং পত্রপল্লবের ঠোঁটেরা
এখন
ভেজা মুখমন্ডলের জন্য
উন্মুুখরতার অন্তরাল
খুঁজে বেড়াচ্ছে


আজ সারাদিন
সমুদ্রের শুভ্র-শুভ্র
অনিশেষ মৌমাছিরা
আমাকে কবি না-বানিয়ে
ছাড়লো না।


#একটি ধ্রুব বিজয়ের জন্যে


একটি ধ্রুপদ বিজয় আমার ভেতরে আগুনের মতো উস্কে দিয়েছে
অনেক অনেক ধ্রুব বিজয়ের নেশাগ্রস্ততা
অথবা নেশারও অধিক এক উদগ্র অতৃপ্তি
তাছাড়া আমার কেবলই মনে হয় যে
একটি ধ্রুপদ বিজয়ই প্রথম বিজয় নয় কিম্বা শেষ বিজয়ও হতে পারে না


প্রভাত কি একবারই হয়?
সূর্য্য কি একবারই ওঠে?
জেয়ার কি একবারই আসে?
মূলত একটি অকাট্য বিজয় মানে হচ্ছে অসংখ্য বিজয়ের নাম-ভূমিকা
না হয় তারও আগের শুদ্ধতম পরিকল্পনাসমূহের একেকটি অবিশ্রান্ত খসড়া
যেমন কোথাও যেতে হলে মানচিত্রের খুবই দরকার হয়ে পড়ে
তার মানে এই নয় যে ইতিহাসের একেবারেই কোনো প্রয়োজন নেই


বিভীষণ কিম্বা মীরজাফরের কথা সম্পূর্ণ আলাদা
অর্থাৎ তারাও তাদের সাঙ্গাতদের নিয়ে
একদা উপদ্রুত উৎসবে মেতে উঠেছিলো


বস্তুত একটি ধ্রুব বিজয়ের জন্যে এখন আমি
এক সিরাজুদ্দৌলা ছাড়া আর কাউকেই সহ্য করতে পারছি না।


রচনাকাল : ২০০৮


#অনেক বিজয়


অনেক বিজয় এসেছে আবার
অনেক বিজয় আসেনি যে-
অনেক বিহান হেসেছে আবার
অনেক বিহান হাসেনি যে!


পেরিয়ে এসেছি অনেক অনেক পথ
ছিঁড়েছি অনেক গোলামীর দাসখত্
ভেঙেছি অনেক লৌহকপাট-কারা
অনেক ঝরেছে তপ্ত-রক্ত-ধারা
অনেক হয়েছে মহাজীবনের ক্ষয়
অনেক হয়েছে বেদনার সঞ্চয়-
তবুও পূর্ণ জয়ের সূর্য
এখনো আকাশে ভাসেনি যে;
অনেক বিজয় এসেছে আবার
অনেক বিজয় আসেনি যে!


অনেক স্বপ্ন দু’হাতে পেয়েছি
পাইনি অনেক আবার
অনেক চাওয়ার তবু বাকি আছে
এখনো অনেক পাওয়ার!


ঈমানের ঘর ক্রমাগত শুধু নড়ে
স্বদেশ-প্রেমের জিজ্ঞাসা কেঁদে মরে
গণতন্ত্রের বেড়ে চলে ঝন্ঝাট্
অর্থনীতির থামে যে-নান্দীপাঠ
জনতার দাবী অপূর্ণ রয়ে যায়
ধৈর্যের বাঁধ ক্রমাগত ক্ষয়ে যায়-
তাইতো নতুন যুদ্ধের নেশা
বিজয়ের দিন নাশেনি যে;
অনেক বিজয় এসেছে আবার
অনেক বিজয় আসেনি যে!


বিজয়ের অরি চিনেছি অনেক
চিনেছি যেÑবিভীষণ
তবুও অনেক আঁধারে পড়েনি
দৃষ্টির বিকিরণ!


নদীর শত্রু যাচাই হলো না আজো!
দেশের শত্রু বাছাই হলো না আজো!
জাতির শত্রু এখনো অনেক ভীড়ে
কলিজা চিবায় বক্ষ দু’হাতে চিরে-
ন্যায়ের শত্রু হয়নি অনেক চেনা
অনেক মুক্তি হয়নি এখনো কেনা
এখনো স্বদেশ অনেক জমিনে
আজাদীর চাষ চাষেনি যে;
অনেক বিজয় এসেছে আবার
অনেক বিজয় আসেনি যে
অনেক বিহান হেসেছে আবার
অনেক বিহান হাসেনি যে!