আমার বন্ধু ,
রৌদ্র মাখা ভোর প্রভাতে শিশির ভেজা
মেঠোপথে হরেক রকম  ঝরা পাতা ।
কুয়াশা ঘন চাদর মোড়া
পৌষ-পাবনে, কুমড়ো-পুইয়ের সবুজ গুল্ম-লতা ।
আমার বন্ধু ,
কোকিল কালো দোয়েল-কোয়েল ,ময়না-টিয়ে
টুনটুনিদের মধুরকন্ঠি গান ।
সন্ধ্যারাতে পাগলপারা
শুভ্র হাসনে হেনার,মাতম করা মিষ্টি-মধুর ঘ্রাণ ।
আমার বন্ধু ,
বিলের জলে পদ্ম ফোটা পদ্ম ভূমের
মন রাঙ্গানো শেষ দিবসের রঙ্গিন দুপুর ।
নিঝুম বনে লুকিয়ে থাকা
ঝি ঝি পোকার ছন্দ ভরা কাব্যগাথা সুর ।
আমার বন্ধু ,
কচুপাতায় ছড়িয়ে থাকা নৃত্যহারা
রাশ রাশি শিশির জলের রঙ্গ জড়ানো মুক্তো দানা ।
উতাল লয়ে বীণ বাজিয়ে
সাপের সাথে সন্ধি করে সাপুড়েদের নিত্ত বাসনা ।
আমার বন্ধু ,
বৃষ্টি ভেজা রোদ বিকেলে
ঈশান কোনে রাঙ্গিয়ে আভা রঙ্গ ধনুটির খেলা ।
জলের সাথে দোস্তি করে
জল কেলিদের কাটিয়ে দেয়া ব্যস্ত সারা বেলা ।
আমার বন্ধু,
হেমন্তেরী ঢেউ খেলানো,চোখ জুড়ানো
প্রান্তহারা সোনালী ধানের স্বপ্নভরা শীষ ।
জেলের জালে জড়িয়ে হারা
রুপালী জলের রূপের রানী রূপবতী ইলিশ ।
আমার বন্ধু ,
যতন করে রান্না করা ছোয়াআদর মা'য়ের হাতের
টেংরা-টাকির তৃপ্তি ভরা ঝোল।
আলতা রঙ্গে রাঙ্গিয়ে চরণ
উদাস মেয়ের লাজুক দু'টি মল ।
আমার বন্ধু ,
ঝোপ বনেতে পত্র-শাঁখে জোনাক জলা
জোনাকিদের রাত্রি রাঙ্গা ব্যস্ত ছোটা ছুটি ।
তারায় ভরা আকাশ হতে
জল পাখিদের জলের সাথে নিত্ত লুটোপুটি ।
আমার বন্ধু ,
উৎসব মুখর বৈশাখেতে পল্লী হাটের
মণ্ডা মিঠাই ,পিঠা-পুলি আর নাচের পুতুল খেলা ।
কাশবনেতে কাশ ফুলেদের ঢেউ খেলানো
হেমন্তেরি আকাশ হতে নেমে আশা শুভ্র মেঘের ভেলা ।
আমার বন্ধু ,
আকাশ ছোঁয়া তাল বৃক্ষের ঐ পত্র চুড়ায়
নীড় বাধা সব বাবুই পাখির এপার ওপাড় দোল ।
স্নেহভরা অশ্রু ভেজা,জীর্ণ-জরা,আচল ঢাকা
মা'জননীর স্বর্গ সুখের কোল ।
আমার বন্ধু ,
বাউল প্রাণের এক তারেতে,মাটির গন্ধসুধা
সুরের ধারার জীবন বোধের প্রাণ হরণের গান ।
ফল বনেতে মিষ্টি মধুর,মৌ-বাসিদের
এথায় সেথায় উচ্ছ্বসিত মধুমাসী তান ।
আমার বন্ধু ,
পূর্ণিমার ই চাঁদ টা যেমন,জোস্না ভরা
আলোটাকে সঙ্গী করে আকাশ বুকে ভাসে !
হরেক গড়ন প্রজাপতি সব, রঙ্গিন পাখায়
রঙ্গ ছড়িয়ে ফুল বনেতে সকাল সন্ধ্যা হাসে ।
আমার বন্ধু ,
বাদল ঝরা ফসল ভরা সবুজ ছোঁয়া প্রান্তে,
বন পাখিদের ছন্দহারা অলস মুখি মুরতি ।
সন্ধ্যা শেষে নৌকো গুলো পাল গুটিয়ে,
কুল হারিয়ে খুঁজে ফেরে শ্রান্ত দেহের তৃপ্তি ।
আমার বন্ধু ,
ক্লান্ত দেহে ব্যাকুল লয়ে বাজায় বাঁশি ঐ সে দুরে ।
গাঁয়ের মেয়ে বধূ সেজে বাধন ছিঁড়ে যায় যে চলে
পরের ঘরে,পালকিতে যার অশ্রু ঝরে ।