আঠারো কি ঊনিশ হবে আমার তখন
বৈশাখী ঝড়ের মতো এলে তুমি জীবনে
বুকে মাথা রেখে
শোনালে ভালোবাসার গান,
বুকের সুষম নির্জনতা যতো
হঠাৎ কোলাহল মুখর হলো
সবুজ আহবানে সাড়া দিল
জীবনের যাবতীয় লাল,
ভালোবাসার পাখীরা সুখের হাতছানিতে
ডানা মেলে দিল অসীমে স্বেচ্ছায়
তোমার অধর ইশারায়
মৃত্যু হলো যাবতীয় তৃষ্ণার
হৃদয়ে চৈত্রের খরায় নামল শ্রাবন ধারা,
হাতে হাত রেখে
শপথের শব্দমালায়
শুরু হলো মুখরিত পথচলা।


সুখের দিনগুলো
এইভাবে পার হতে থাকলো
স্মৃতির পাতায় অনেক ইতিহাস
সাজাতে হলো নতুন করে,
দিনের পর দিন নিপুন হাতে
দু’জনের স্বপ্ন যাবতীয়
হৃদয়ের চোরাবালিতে রোপন করে
তুমি মগ্ন হলে পরিচর্যায়,
আর আমিও নিজেকে প্রমান করলাম
একজন দক্ষ চাষী হিসেবে ॥


এইভাবে স্বপ্নের আহবানে
আর ভবিষ্যত পরিকল্পনায়
পার হলো আরও ক’টি বছর,
আর মাত্র দু’দিন পরেই
আমার পঁচিশ পূর্ণ হবে,
জন্মদিনের কেক একান্তে কাটব বলে
আর কাউকে বললাম না কিছুই
শুধু দোকানীটাকে তুমি বললে
ভাই খুব ভালো যত্ন নিবেন ।


আগামীকাল আমার পঁচিশতম জন্মদিন
এখানে ওখানে অনেক খুঁজেও
তোমাকে পেলাম না ;
বুক ভরা অভিমান
আর ভীষন মানসিক ক্লান্তি নিয়ে
সন্ধ্যায় বাড়ী ফিরতেই
ছোট বোন একটি মুখবন্ধ খাম
আমার হাতে দিল,
উপরে তোমার লিখা দেখে
মুহূর্তেই সব কষ্ট জল হলো ;
অসীম তৃষ্ণায় খাম খুলতেই
তুমি হারিয়ে গেলে আমার জীবন থেকে।
হৃদয়ের নীল আকাশ
ঢাকা পড়লো কালো মেঘে
ঘন কুয়াশায় গাঢ় হলো অন্ধকার আরও,
হঠাৎ জলচ্ছ্বাস এসে
খড় কুটোর মতো ভেসে নিল সুব সুখ
সঞ্চিত স্বপ্ন যত
ধ্বংসস্তুপে মাথা নোয়ালো
বুকের মধ্যে দূর্বোধ্য কান্না
মাথা চাড়া দিল জোয়ারের জলের মতো,
চোখের নোনা জলে ভিজল বালিশ
ইঁদুরেরা কুটিকুটি করল সুস্বাদু কেক
সর্বভূক আরশোলার দল
মেতে উঠল উৎসব আনন্দে,
রক্তস্নাত শপথের শব্দমালা যতো
সুতীক্ষ্ণ নখাগ্র দিয়ে
ব্যবচ্ছেদ করল হিংস্র শুকুনের দল
দেখলাম নির্ধিকার !
প্রতিশ্রুতির নদীগুলো সব
শুকিয়ে গেল একে একে দারুন খরায়
অন্ধকারের বুকে মুখ লুকিয়ে
শিশুর মতো কাঁদলাম রাতভর,
স্বপ্নের দহন যাতনায়
পুড়ে খাক হলো
বুকের সবুজ বনানী
বেঁচে থাকার সবকিছু
মুহূর্তে অর্থহীন মনে হলো,
অনেক চেষ্টা করেও
আঁকড়ে ধরার মতো
কোন অবলম্বন পেলাম না ;
জানি,
আত্নহত্যা করার মতো দঃসাহসী আমি নই
আমাবস্যার নগ্ন আহবানে
জীবনের যাবতীয় নীল কষ্টকে
স্বযত্নে বুকে রেখেই
আমাকে বেঁচে থাকতে হবে
সমর্পিত সবুজ নিয়ে,
তোমার চলে যাওয়া পথে
নীল পদাচিহ্ন এঁকে
তবু এগিয়ে যাব আমি ;
এইভাবে চলে গেলে তুমি
আর আমি
প্রথম ও শেষবারের মতো তোমাকে হারিয়ে
অননত্ম যাত্রায় ধাবিত হলাম লালের আহবানে ।


আজ আমার চলিস্নশ পূর্ণ হয়েছে
সকাল থেকে শুরু হওয়া
বিরতীহীন ইলশেগুড়ি বৃষ্টি
অবসরে গেছে কিছু আগে,
একটা নির্জন বাইপাস সড়ক ধরে
উদ্দেশ্যহীনভাবে ধীর পদক্ষেপে হাঁটছি
হঠাৎ পাশে তীব্র ব্রেকের শব্দে
চমকে পাশ ফিরে তাকাই,
আবার চলতে গিয়েও
একটু থমকে দাঁড়ালাম
ড্রাইভিং সিট থেকে
দৃঢ় পদক্ষেপে নেমে এসে
সামনে দাঁড়িয়ে বললে
চিনতে পারছো আমায় ?
তোমার চোখের দিকে তাকাতেই
মনে পড়ল
এই চোখে চোখ রেখে একদিন
আমার সঞ্চয় যাবতীয়
নিঃশর্ত বিসর্জন দিয়ে বলেছিলাম
তোমার ভালবাসার ভিটেটা
যত্নে রাখলেই
আর কিছু চাইনা আমার ;
বললাম,
আকাশে ধ্রুবতারা চিনতে
কোনদিন কষ্ট হয়নি আমার ।
একটু যেন চমকালে তুমিও ;
বললে- ক্যামন আছ ?
বললাম,
কষ্ট সঞ্চয়ের ব্রত
এখনো আগের মতোই আছে ।
চেহারার কি হাল করেছ
আয়না দ্যাখ না কতদিন ?
বললাম,
আমার আয়না
সেতো কবেই ভেঙ্গে গেছে !
এখন স্বচ্ছ কাচে
মুখ দেখার চেষ্টা করি মাঝে মাঝে
কিন্তু প্রতিফলিত হয়না প্রতিবিম্ব
দৃষ্টি প্রসারিত হয়
সাদা কাঁচের বুক পেরিয়ে
অসীমের কুহেলিকায় ;
বললে আবারও----
বহুদিন হয় তোমার কোন কবিতা দেখিনা কোথাও ;
বললাম,
কবিতা !
সেতো কবেই কাফনে মুখ ঢেকে
নির্জন অন্ধকার কফিনে স্বেচ্ছা নির্বাসনে গেছে ;
অতপরঃ
নিঃসঙ্গ নদী তীরে
খুব ধীরে তৈরী হয়
নতুন সাঁকো ॥