শ্যামলী কাহার গর্ব আমার, বড়ই সাধের মেয়ে।
সাহসিনী মুখে, প্রত্যয়ী চোখে, থাকেনি সে থেমে ভয়ে।
মিথ্যের ঘরে জন্মের পরে, মরেছিলো বহুবার।
পরিচয় চাই, পণ নিলো তাই, ছোট্ট শ্যামলী কাহার!


বিক্রীত দেহে বিপণন মোহে, ঘটল সূত্রপাত।
অষ্টম মাসে, মহা উচ্ছ্বাসে, শুভ বার্তাটি এলো।
লোকে বলে চেয়ে, গণিকার মেয়ে রূপের জলপ্রপাত।
ফুলমাসি বলে, পরিণত হলে দর হাঁকা যাবে ভালো!


শুনে সেই স্বর, কাঁপে থর থর, পিতৃহীনার মাতা।
মাসির আদেশ, মানেনা বিশেষ, নেই কারো ধৃষ্টতা।
পতিতার নাম চড়বে না গায়ে, ধার্য হবেনা দাম।
ছাড়া পেতে তাই ঝরাতেই হবে, রক্ত কিংবা ঘাম।


ঘাম শুধু নয় ঝরলো রক্ত, ঝরলো মাতৃফুল।
ছোট্ট শ্যামলী ভাবলো সকলই, তাঁর আগমনী ভুল।
যদিও পতিতা তবুও সে মাতা, চোখ ভেসে যায় শোকে।
কাঙ্খিত সেই মানুষ হবেই, যে যাই বলুক লোকে!


অশ্রু সাঁতরে, আঁধার হাতড়ে, খুঁজে ফেরে প্রতিঘর।
নিশুতির রাতে, বালিকার সাথে, নেই কোনো সহচর।
ছুটে ছুটে যায় দীর্ঘ সে পথ, ফিরে ফিরে পিছু চায়।
লোকালয় ভরা ভদ্র আলয়, দিলো নাকো আশ্রয়!


রাত্রির পরে ঘাট চত্বরে, সংজ্ঞা হারানো দেহে,
ক্লিষ্টের মুখে নিদ্রার সুখ, ফুটে ওঠে মায়া হয়ে।
সেই মায়াবলে, পরিচিত টানে, ভারী হয়েছিল কোল।
যেই কোল মোর খালি করেছিলো, মড়কের দাবানল!


উঠে তাড়াতাড়ি, ফিরে আসি বাড়ি, সঙ্গে ছোট্ট মেয়ে।
করি অনুমান বয়সের মান, চার কিবা পাঁচ হবে।
চোখ দুটি তাঁর বড় পরিচিত, বহুকাল আগে দেখা।
এমনই নয়নে বাবা বলে শুধু ডাকতো আমার রেখা।


সব কথাটুকু বললো আমায়, রইলো না কিছু বাদ।
এই শহরের খন্দে, কূহরে ভরেছে মৃত্যুফাঁদ।
কথাটুকু শুধু শেষ হতে দেরি, মুখ ঢাকে দুই হাতে।
অভয় যুগিয়ে, বক্ষে জড়িয়ে, আগলেছি দিনে রাতে।


এক মেয়ে খুয়ে, পেয়েছি যে ফিরে, হারানো পিতৃসুখ।
কালো ছায়া হতে লুকিয়েছি তাকে, আড়াল করেছি মুখ।
মানুষের তরে মানুষ হতে সে গাঁথলো আশার মালা।
আষাঢ়ের জলে দুইজনে মিলে, ধুয়েছি কত না জ্বালা!


কাটে তারপর আঠেরো বছর, আঠেরো দিনের মতো।
কালকের সেই শ্যামলী যে আজ মানুষেতে পরিণত।


বৃত্তি মেধায়, বিলিতি হাওয়ায়, পড়ে এলো ডাক্তারী।
আজ ডাক্তার, শ্যামলী কাহার, সম্মানে সরকারি।
বিদেশিনী মেয়ে, গলায় জড়িয়ে, বলে “বাবা এই দেখো;
কষ্টের ঘাম, মিটিয়েছে দাম; আজ আমি দরে শ্রেষ্ঠ!”


উপাধিতে দামি পরিচিত আমি, ভয় নেই বাবা আর।
পতিতা মায়ের সন্তান আমি; সংজ্ঞা শ্যামলী কাহার!