দেন দরবার হয়ে গেছে অনেক আগেই
রেজিস্টার বাবু স্বাক্ষর নিয়ে গেলেন সাত সকালে এসে,
জমিটা আজ অন্যের হবে,
ভিটেমাটি ছাড়া হবো আমরা ক'জনে।
'দামটা একটু কম হয়ে গেলো না?'
নেহায়াত মানবিক প্রশ্নে কিইবা জবাব দিবো বলো?
বিক্রি করেছি এইতো কতো, দামের কথা ছুঁড়ে ফেলো।


মাঝে মাঝে এসে প্রীতি পরামর্শ দিতেন
ওপাড়ার চৌধুরী সাহেবেরা;
‘জমিজমা ভিটে, কি হবে আর পুষে?
জীবন যেখানে বিপন্ন-
দু'কড়ি যা পাও , তাই নিয়ে যাও ভেগে
এদেশে বাঁচার স্বপ্ন দেখা মিছে।‘  


দয়া করে মাথা গুজবার ঠাঁই দিয়েছিলে তোমরা ভাই
দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক হয়েও,
বাপ-দাদার ভিটে ছেড়ে, কোথাও যাইনি তাই।
লাথিগুতো খেয়ে ,খড়কুটো,ভিটেমাটি ধরে
বিয়াল্লিশ বছর তবুও বেঁচে ছিলাম
নেহায়াত অনুগ্রহের ভারে।  


একাত্তরে ভিটেমাটি শূন্য করে
ঠাকুরদাদার হাত ধরে, এভাবেই দেশ ছেড়েছিলাম;
ঠাকুরদাদা হয়ে পথে নেমেছি আজ আরেকবার!
নিজ হাতেই দিয়ে গেলাম  
সম্ভাবনাময় নতুন প্রজন্মের
অনিশ্চিত জীবনের নিশ্চিত বিসর্জন।


ছোট কাকাকে মিলিটারিরা ধরে নিয়ে গিয়েছিলো
খোঁজ মেলেনি কোনদিন তার;  
মেঝো কাকা তখন যুদ্ধের ময়দানে
সাথে ছিলো হরিপদ, জামাল, করিম
মোল্লা পাড়ার শামসুর সর্দার
কেউ ফিরে আসেনি তারা আর।  
পাক ক্যাম্পে সেই রাতে লুন্ঠিত যৌবন নিয়ে
ঋষিপাড়ার সুমিতা দিদি
মালোপাড়ার ঝর্ণা মাসি কিংবা
পালপাড়ার নতুন বৌদি;
ভুলেও সাহস করেনি কলঙ্কিত মুখ দেখাবার।


ধর্ম আমার ব্যবধান গড়ে দিলো তিলে তিলে
ছোটবেলার প্রিয় বন্ধু কাদেরের সাথে
খেলার সাথী মনিরের সাথে কিংবা
পরম শ্রদ্ধেয় স্কুল শিক্ষক শফি স্যারের সাথেও!
সকলে মিলে এইতো সেদিন
শাসিয়ে গেলো শক্ত চোয়াল বাঁকিয়ে,
‘নিজ থেকে পথ না মাপলে, দেশ ছাড়া করবো হাঁকিয়ে।‘  


আজন্মের লালিত বিশ্বাসে জলাঞ্জলী দিয়ে
পূজিত মাটির স্নেহ মমতা ছেড়ে
পথ মেপেছি আজ।
চলতি পথের প্রতিটি ধূলিকণায় ছড়িয়ে গেলাম
দীর্ঘশ্বাসের অভিশাপ।