"অর্জুনের এইরূপে হইল মরণ
পুন বভ্রুবান মায়ে কৈল নিবেদন।
শুনিঞা দুঃখিত বড় নাগের নন্দিনী
অর্জুনের সঙ্গে আইল খাইতে আগুনি।"
(হরিদেবের রায়মঙ্গল)


গঙ্গা তীরে বনভূমির উপর
ঘনিয়ে আসছিল সন্ধ্যা
আমি তীর ধরে ধীর পায়ে
উদ্দেশ্যহীন হাঁটি
গঙ্গার ঢেউয়ের উপর
গোধূলির সূর্যের রং,
গাছের ফাঁক ফোকর গলে
দিনান্তের সূর্যের উঁকিঝুঁকি দেখি
আশ্চর্য শান্তির পর্দা যেন নামে


......................


তীব্র, কাঁপা কাঁপা এক শিশুর চিৎকার
গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে
শান্তির পর্দা ফুঁড়ে
মন্দ্র হাওয়ায় ভর করে
আছড়ে পড়ে পাশে।
আমি থমকে দাঁড়াই
কান পেতে শুনি,
হ্যাঁ , ঠিকই শুনছি
গুঙ্গিয়ে গুঙ্গিয়ে কান্না
তবু প্রত্যেকটা শব্দ খুব স্পষ্ট---
"মা, মাগো, এই তো তোমার সোনা আমি"
তটভুমি ধরে ছুট্টে যাই
গঙ্গার ধারে বালির উপর
নিভন্ত এক চিতা
সেখান থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে উঠছে ধোঁয়া
পড়ে আছে কিছু আধপোড়া কাঠ
বালি, ছাই, শুকিয়ে যাওয়া ফুল আর
নতজানু একটা ফুটফুটে মেয়ে !
মেয়েটির ছোট্ট এইটুকু
এক হাতের মুঠোর মধ্যে
বোঁটা থেকে ঘাড় ভেঙে নুয়ে পড়া একটা ফুল
ঠিক তারই মতো নুয়ে পড়েছে
মেয়েটির মাথা
আর একটা খুদে মাখনের মতো
হাতের চেটো দিয়ে
মেয়েটি মুছে নিচ্ছে
চোখ থেকে নেমে আসা
কাঠ-কয়লার ভুসো মাখা
কালো কালো কান্নার জল
মেয়েটি একদৃষ্টে  তাকিয়ে আছে
পড়ে থাকা ছাই আর
আধপোড়া কাঠের দিকে
নিরন্তর ওমকারের মতোএক ধ্বনিতে
কেঁদে উঠছে চারিপাশ
" মা,মাগো, এই তো তোমার সোনা আমি..."


কোনো একদিন
মেয়েটিও আগুন খেতে পারে...


( বেঙ্গল হরকরা পত্রিকায় Infant Mourner নামে একটি কবিতা প্রকাশিত হয়।সেটা The Calcutta Monthly Journal, August, 1823, তে পাওয়া যাবে। কবিতাটির অংশবিশেষ স্বপন বসুর "সতী" গ্রন্থে প্রকাশিত।  একজন সতী হয়েছেন। দাহকাজ শেষ করে সবাই ফিরে গেছে। শুধু গঙ্গাতীরে একা সতীর শিশুকন্যা মায়ের চিতাভস্মের পাশে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যাবেলা কাঁদছে। এই দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে কবিতাটি লেখা হয়েছিল।কবির নাম অনুল্লেখিত। সেই ইংরেজি কবিতাটি অবলম্বনে বর্তমান কবিতাটি রচিত।)