দেবতার গ্রাস টু (2)


( ২০১৮ সালে ছেলের সঙ্গে বিহার থেকে বৃদ্ধা সিতারা দেবী গঙ্গাসাগরে মকরের পুন্যস্নান করতে আসেন । তাঁর ছেলে স্নান সেরে মাকে ফেলে রেখে উধাও হয়ে যায় । ২১শে জানুয়ারি, ২০১৮ সালের টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী এরকম একান্ন জন পরিত্যাক্ত ব্যক্তির মধ্যে সতেরো জনকে আয়োজকরা বাড়ি পৌঁছে দেন । বাকিদের খবর.....)


ও সিতারা মাইয়াআআআ
হাঁ রে বেটুয়া
গঙ্গাসাগর যেইবোওওও ?


গ্রামে গ্রামে সেই বার্তা রটি গেলো ক্রমে
সিতারা মাইয়া যাবে সাগর সংগমে।
পুন্য লোভাতুর আরো কত হতভাগা শত
একে একে জড়ো হলো
খৈনি দলন রত।


মাঠ পেরিয়ে বড় রাস্তার পারে
বাস ছাড়বে সন্ধ্যা বেলা আগামী রবিবারে ।
সিতারা গেলো পাশের পাড়ায়
বিটিয়া রাণীর ঘর
সাগর যেইবো
খবর দিতে সইছে না আর তর।


মাইয়া মোরি সাগর যেইবা ?
হাঁ রে বিটিয়া
কেকারা সাথ যাইবো ?
হামার ভাই সাথে যাইয়েন
নাশ, উ লেকে আই হ্যায় তারাকে ওঁহা সে ?
কা বলি ? ও হামার বেটা !
উ হামার ভাই,
হাম উনকারাকে বহুত বড়িয়া সে চিনহেনি।
উ তোহরাকে উহে ছোড় দি হ্যায় !
কা বোলা তারা তু ?
ঠিকবা হামার বাত মিল নিহে।


বিটিয়া যুবতী
দুখানি করুণ আঁখি মানে না যুকতি
কেবল মিনতি করে,
না যাইও মাইয়া মোর
বিটিয়া কহিল তারে,
পায়ে ধরি তোর ।
সিতারা কহিল কাঁদি,
গাড়িতে ঠিক স্থান লব করি
কোনো মতে স্নান সারি ।
ভিজে গেলো মন
তবু দ্বিধা ভরে তারে শুধলো সেই জন,
এই বিটিয়ার কথা যেন হয় না বিস্মরণ ।


সম্মত হইলো বিটি । সিতারা সত্বর
প্রস্তুত হইলো বাঁধি জিনিস-পত্তর ।


শুভক্ষণে দূর্গা স্মরী যাত্রী বোঝাই গাড়ি
ছেড়ে গেলো রবিবার রাতে।


এই চিৎকৃত, ঝংকৃত,
ঢাক ঢোল নিনাদিত সাগর প্রাঙ্গনে
সিতারা মাইয়া তার বেটুয়ার হাতখানা
শীর্ণ হাতে ধরে
কাঁপে থরে থরে।
সবহি তীরথ বার বার, গঙ্গাসাগর একবার
মুহুর মুহুর হুঙ্কার
কোনো এক নিউক্লিয়ার বোমার মতো
ঘোষণা করে মকরের আগমন ধ্বনি।


আসিল জোয়ার । মাঝি দেবতারে স্মরি
ত্বরিত উত্তর-মুখে খুলে দিল তরী।


তীব্র শীত পবনের সনে
মিশিয়া ত্রাসের হিম নরনারীগণে
কাঁপাইছে থরোহরি। কেহ হতবাক,
কেহ বা ক্রন্দন করে ছাড়ে উর্দ্ধডাক
ডাকি আত্মজনে ।


সমস্ত ভারতবর্ষ আজ
সাগরের ঢেউ হয়ে
আছড়ে পড়ে সীতারার ঘাড়ে
ভেসে যায় দিকচক্রবালে সীতারার ক্ষীণ কণ্ঠস্বর
বেটুয়া, বেটুয়া হামার
কাঁহা গৈলবা
পুন্য স্নান, সংক্রান্তি, নিষ্ঠুর মকর ।