Mark Strand এর কবিতা


(রূপান্তর : নির্ঝর মুখোপাধ্যায়)


(Mark Strand (১৯৩৪-২০১৪) বহু কবিতা, গল্প, ছোটদের জন্য গল্প ও অন্যান্য রচনা লিখেছেন ও সম্পাদনা করেছেন।তার জন্ম কানাডায়।বড় হওয়া, পড়াশোনা আমেরিকা যুক্ত রাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটি ও আইওয়াতে। বহু প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন। ইউনিভার্সিটি অফ উটাহ (Utah) তে ইংরেজির অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৯০ সালে লাইব্রেরিয়ান অফ কংগ্রেস দ্বারা আমেরিকার পোয়েট লোরেট হিসেবে নির্বাচিত হন।পেয়েছেন পুলিৎজার পুরস্কার ছাড়াও অন্যান্য বহু পুরস্কার।


Strand কবিতার মধ্যে সৃষ্টি করেন এক অদ্ভুত সুররিয়ালিস্ট জগৎ।সেখানে কেউ কবিতা চিবিয়ে খায়, কেউ আনন্দে কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করে,হাত চেটে দেয়।না জন্মানো সন্তান পিতার কাঁধে মাথা রেখে কথা কয়, শিশুর মতো হামাগুড়ি দেয়।


কবিতা ডট কমের পাঠকদের পুজোয় আমার সশ্রদ্ধ শারদ উপহার Strand এর পাঁচটি কবিতা। সেই সঙ্গে কবিকে আমার বিনম্র শ্রদ্ধা। )


।।১।।


কবিতা ভক্ষণ


দু' কষ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে নীল কালি
আর আমি একটার পর একটা
কবিতা খেয়ে চলেছি
আহ কি আনন্দ, কি আনন্দ


লাইব্রেরিয়ান মেয়েটি
নিজের চোখেকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।
তার চোখে ফুটে উঠছে বেদনা
কাপড় চোপড় ঠিক করে নিয়ে
হাঁটা লাগায় মেয়েটি


কবিতাগুলো চলে যাচ্ছে
আলো ধীমে হয়ে আসছে
সিঁড়ির নিচে থেকে কুকুর গুলো ধেয়ে আসে


তাদের চোখ ঘুরপাক খায়
তাদের লালচে পাগুলো
তুলির মতো, যেন আগুন ছড়াচ্ছে
মেয়েটি মেঝেতে পা ঠুকতে ঠুকতে কেঁদে ফেলে


আমি ওর কাছে হাঁটু গেড়ে বসি
ওর হাত চেটে দিই
মেয়েটি কিছু বুঝতে না পেরে
চিৎকার করে ওঠে


আমি বদলে গেছি
এক নতুন মানব আমি
মেয়েটির দিকে দাঁত খিঁচিয়ে ঘেউ ঘেউ করে উঠি
এক কেতাবি অন্ধকারে
আনন্দে লাফাতে থাকি।


        ।।২ ।।



শূন্যতাকে পূর্ণতা দিতে


মাঠে, প্রান্তরে
আমি এক না-মাঠ, না-প্রান্তর হয়ে রই
এমনই হয়
সর্বদা আমি যা
তা  'আমি না' হয়ে থাকি।


হাওয়ার মধ্যে দিয়ে হেঁটে গেলে
আমার এক শরীরী-অনুপস্থিতিকে
চারপাশ থেকে হাওয়া এসে
ঢেকে দিতে থাকে।


আমরা সবাই
কোনো না কোনো কারণে
ঘুরি, ফিরি,নড়ে চড়ে বেড়াই
আমিও শুন্যকে পূর্ণতা দিতে
ঘুরি, ফিরি, নড়ে চড়ে বেড়াই।



           ।।৩।।


অভিভাবক


সূর্য ডুবে যায়
প্রান্তরে আগুন
দিন শেষ
রাত্রিও শেষ
যা কিছু ধূসর হয়ে যায়
কেন আমি ভালোবাসি তাদের ?


তোমরা যারা হারিয়ে গিয়েছ
তোমরা যারা হারিয়ে যাচ্ছ
কোন অন্ধকার গুহায় তোমাদের বাস ?
আমার মৃত্যুর অভিভাবকগণ


আমার অনস্তিত্বকে রক্ষা করো
আমি বেঁচে আছি।


        ।। ৪।।


মৃত্যুকে না


এই যে লোল চর্ম- ও কিছু না,
পক্ক কেশ-  ও কিছু না,
পুরোনো খাবার জমে জমে
ঝুলে পড়া পেট,
ফোলা ফোলা, কালো কালো
পায়ের গোছ,
ক্রমাগত ক্ষীয়মান ধূসর মস্তিস্ক কোষ,
ওসব কোনো কিছুই কিছু নয়
আমি তো আমিই
সেই ছোট্ট ছেলেটা
মা যাকে আদর করে কত চুমু খেত।


সময়ে কিছুই বদলায় না
এখনো গ্রীষ্মে হাওয়া বন্ধ হয়ে গেলে
দূরের অন্ধকার থেকে
মায়ের  কালো ঠোঁটের
চুমু গুলো আমার কাছে ভেসে আসে
আমি তাদের পুরো দস্তুর আস্বাদন করি।
কনকনে শীতে
দূরের পাইন গাছাগুলোয় বরফ জমার মতো
মায়ের চুমুগুলো আমাকে ছেঁকে ধরে
তারা আমাকে চির যৌবন দেয়।


এখনো দুধ খেতে পাগলের মতো ভালোবাসি
খাট থেকে হামাগুড়ি দিয়ে গিয়ে
চেয়ার ধরে দাঁড়াই
আবার হামাগুড়ি দিয়ে
ফিরে আসি খাটে


আমি মরবো না


জন্ম-দোলনা থেকে কবরের কাল
শরীরই মনে রাখে
খুব তাড়াতাড়ি পার হয়ে যায়।


        ।।৫।।


আমার সন্তান


আমার সন্তান
আমার একমাত্র সন্তান
যাকে আমি কোনোদিনও পাইনি
তার আজ প্রাপ্ত বয়স্ক হবার কথা ।


অবয়বহীন, নামহীন সে
হাওয়ায় ভেসে বেড়ায়


মাঝে মাঝে সে আসে
হাওয়ার চেয়েও হালকা তার শরীর
আমার কাঁধে মাথা রাখে


আর আমি তাকে জিজ্ঞেস করি,
বাছা আমার
তুই কোথায় থাকিস ?
লুকাস কোথায় ?


খুব শীতল এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে
সে আমাকে বলে,
তুমিতো খেয়ালই করোনি কোনোদিন
কত ডেকেছি তোমায়
কত কত বার


ভালোবাসা পেরিয়ে
সব কিছুর ওপার থেকে
যেখানে কোনো কিছু না থাকারা
যেখানে সব কিছুরা
জন্ম নিতে চায়।