গৌর বর্ণ, মুন্ডিত মস্তক, কপালে চন্দন
গেরুয়াধারী সন্ন্যাসী
সুদৃশ্য মঠের সামনে ভোগ বিতরণে ব্যস্ত।
সবাইকে বলছেন, হাত পাতো,
বলো, হরে কৃষ্ণ!
অতঃপর শালপাতার ঠোঙায়
উষ্ণ সুবাসিত খিচুড়ি।
সন্ন্যাসী দেখলেন একটু দূরে
মাথায় বিরাট বোঝা নিয়ে
কুন্ঠিত এক মুটে তাঁর দিকে চেয়ে আছে।
সন্ন্যাসীর হৃদয়ে করুণার উদ্রেক হল।
ইশারায় ডাকলেন।
মাথার বোঝাটা নামিয়ে
লোকটি এসে দাঁড়াল
সন্ন্যাসী বললেন, বলো হরে কৃষ্ণ !
লোকটি বিড়বিড় করে কি বলল
সন্ন্যাসী গ্রাহ্য করলেন না
বললেন, এবার হাত পাতো।
লোকটা দুহাত সামনে এগিয়ে এনে
ধীরে ধীরে পদ্মের পাপড়ি মেলার মতো খুলতেই
সন্ন্যাসীর সারা শরীর শিউরে উঠলো
তিনি দেখলেন
লোকটার হাতে ক্রমাগত ভেসে উঠছে
মাঠ, প্রান্তর, নদী, নালা
উন্মত্ত সমুদ্র , তুষারাবৃত পর্বত চূড়া,
বালুকাময় মরুভূমি
সন্ন্যাসী দেখতে পেলেন
সেই উন্মত্ত পৃথিবী হা হা করে
বিকট এক অট্টহাসিতে
মস্ত এক হাঁ করে তাকে গিলতে আসছে
মাঠ থেকে লাঙ্গল তুলে চাষী হাসছে
নৌকা থেকে জেলে হাসছে
সমুদ্র থেকে নাবিক
পাহাড় থেকে চা-শ্রমিক
মরুভূমি থেকে উট চালক
সকলে তাঁর দিকে তাকিয়ে
অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে
সন্ন্যাসীর পা দুটো অবশ হয়ে এল
এক হাতা খিচুড়ি নিয়ে
কাঁপতে কাঁপতে মুটের পায়ে কাছে
লুটিয়ে পড়লেন তিনি !