একদা মোর বুকে খরস্রোত ছিলো বহে যেতো বহুদূর
কতোজন এসে কান পেতে পেতো তার কলকল সুর
সোনালি রবির সোনালি যে আলো ঝলমল করে বুকে
এপাশ ওপাশ উছলিয়ে সে আলো হাসতো পরম সুখে
অচিনপুরের কতো অচিন মানুষ ছুটে এসে বসে পাশে
ভাসতো সহসা আমার স্রোতে আর উড়তো কল্পবাসে
আমারই বুকে ভেসে ভেসে কেউ চলেছে দূরের পানে
বাংলার সুর ছড়িয়েছে দূরে হাজারো মাঝি-মল্লার গানে
দূর দেশ হতে লাখো স'দাগর এসে বুনেছে এখানে ঘর
আমার কোলে মাথা রেখেছে কেউ, করিনি কাউকে পর
আমার ভরা বুকে সুখে মহাসুখে ছুটেছে কতো জলযান
আমার জলে কেউ হয়েছে স্নাত, কেউ করেছে শুধাপান
ওপাশ থেকে চোখ ফেললে কেউ পায়নি এপাশের দিশা
আমার জলেই হেসেছে পূর্ণিমা, কেঁদেছে তো অমানিশা
গড়েছে দরবার রাজ পরিবার, শ্বাস নিয়েছিল প্রাণ ভরে
গড়ে ওঠে ঘর, সুখের বাসর সবই আমার দেহের 'পরে
আজ কেনো সবে হিংস্র উৎসবে আমার বুকে রাখে চরণ  
শ্বাস-প্রশ্বাসে বায়ু দিয়েছে যে হেসে আনছে তারই মরণ  
পুত্র ভেবে মমতায় যাদের দিয়েছি আমার আছে যা সকল  
তারাই আমাকে কলুষিত করে নিষ্ঠুরতায় করেছে সর্বদখল
আজ আমি বদ্ধ-জীর্ণ-শীর্ণ, মরণযাত্রায় খুঁজি হারানো পান্না,
দানব সেজেছে আমারই সন্তান, দেখছে মায়ের মরণকান্না!