নিশি শেষে প্রভাত ছিলে,
ছিলে দিপ্ত রবি,  
পূর্ণ রবির আলো ছিলে,  
ফুলেল ঘ্রাণের সব-ই।  
ব্যস্ত দুপুর তুমিই ছিলে,
ছিলে শেষের বেলায়,  
তুমিই ছিলে সুখ-সাগরে
জোয়ার-ভাটা খেলায়।  
রাত্রিকালের স্বপন ছিলে,
ছিলে ঘুমের ঘোর,
তুমিই ছিলে মনের ভিতর
জেগে ওঠা জোর।
পূর্ণিমারই চাঁদটা ছিলে,
ছিলে হাজার তারা।
সব জোনাকের আলো ছিলে
রাতের নজর কাড়া।  
তুমি ছিলে জ্যৈষ্ঠ দাহ,
ছিলে বোশেখ ঝড়,
আষাঢ় শ্রাবণ তুমিই ছিলে
বাদলা দিনের ‘পর।  
কাঁশফুলের ওই শুভ্র ছোঁয়া
সেতো তুমিই ছিলে,
তুমি ছিলে মেঘের তুলো
মুক্ত আকাশ নীলে।
হেমন্তেরই হলদে আভায়
ছিলে তুমি মিশে,
তুমি ছিলে সবুজ বনে
খুঁজে পাওয়া দিশে।
ছিলে তুমি শিশির ভেজা
মুক্ত দখিণ হাওয়া,
তুমি ছিলে নিঃস্বজনের
সবই ফিরে পাওয়া।
ছিলে তুমি এঁটেল ধরায়  
ঘাঁস ফুলেরই লাল,
তুমি ছিলে ফুলের বনে
রঙ যে চিরকাল।
বসন্তেরই বাহার ছিলে
কোকিল ডাকা সুরে,
তুমি ছিলে ভ্রমরকুঞ্জ
কাছে কিম্বা দূরে।
বলা কথায় তুমি ছিলে,
ছিলে সুপ্ত ভাষায়,
তুমি ছিলে অনেকদিনের
লুকিয়ে থাকা আশায়।
ছিলে তুমি তুলির ডগায়
মিশ্র রঙে মাখা,
তোমায় নিয়ে তাই হয়েছে
হাজার ছবি আঁকা।
ঢেউ খেলানো জলধারায়
বয়ে নিরবধি
তুমি ছিলে সাগর-বুকে
মিশে যাওয়া নদী।
ছিলে তুমি সেই সাগরে
উথাল-পাতাল জল,
তুমিই ছিলে শান্ত আবার
কখনও চঞ্চল।
দিগন্তেরই বুকে তুমি
রংধনুটাই ছিলে,
সাগর-পাহাড়-ধরণীকে
এক করেতো দিলে।
তুমি ছিলে কল্পনাতে,
ছিলে চোখের ‘পরে,  
তুমি ছিলে উঠোন জুড়ে,
ছিলে আবার ঘরে।
আজকে কেনো দুচোখ খুলে
দেখি তুমি নেই।
কষ্ট ভোলার চেষ্টাতে তাই
পাথর চাপা দেই।
তুষের আগুণ জ্বলছে দ্বিগুণ
দেখাই বলো কারে,  
মনের মানুষ ছেড়ে গেলে
কষ্ট-জ্বালাই বাড়ে।  
একা রেখে সুখ যদি পাও,
থাকো তুমি সুখে।  
দুঃখগুলো অনল হয়ে
জ্বলুক আমার বুকে।
ছিলে তুমি মনের ভিতর
যত্নে পোষা পাখি,
নিঃস্ব শূন্য মন নিয়ে আর
কেমনে বলো থাকি,
যে মন জুড়ে বাজিয়েছিলে
প্রণয় সুরের বীণ,
সে মন পুড়েই মিটিয়ে দিলাম
ভালোবাসার ঋণ।