যে কবিকে প্রকৃতি স্বয়ং এক সৃষ্টিশীল প্রতিভা দান করে সর্বশ্রেষ্ঠ মানবসন্তানরূপে সৃষ্টি করেছেন এবং যাকে সর্বাপেক্ষা বড় মানসিক অধিকারে ভূষিত করেছেন সেই কবি কখনও দায়সাড়া আনন্দ বৃদ্ধির জন্য নিজের প্রতিভার অপব্যয় করেন না।
যে কবি জীবনের যতো সব উপাদানগুলি করায়ত্ত করে তাঁর হৃদয়ের মধ্যে তাই দিয়ে এক স্বাধীন সাম্রাজ্য স্থাপন করেন সে কবি কখনও কারও দাসত্ব মেনে নেন না, কারও কাছে মাথা অবনত করেন না, অসত্য-অধর্ম-অশালীনতা-অমানবিকতার কাছে তো নয়ই।
সকল কবি, বিশেষ করে যারা অন্তরের ভিতরে কবিতাকে অনুভব করেন, নিজের মধ্যে এক অগ্রপ্রসারী সত্ত্বা ধারণ করেন যা তার আপন অন্তর্নিহিত প্রেরণায় এক বিশ্বব্যাপী সূত্রজাল বিস্তার করে জগতের বিচিত্র বস্তুর সঙ্গে কবির অন্তরের যোগসাধন করে। প্রকৃতিতে যতো সব বাধা-বিপত্তি আছে তা দূর করে বিভেদ ও অনৈক্যের মধ্যে সুমধুর ঐক্য আনে।
কবিগণ ছাড়া আর কে পারে ছন্দের নৃত্যের দ্বারা বিশ্বের অপরিবর্তনীয় জীবনধারার মধ্যে বৈচিত্র্য আনতে? শুধু কবিরাই তা পারেন। এই হচ্ছে কবিদের অদ্বিতীয় শক্তি।
একমাত্র কবিরাই প্রতিটি ব্যক্তি-মানুষকে সুবিশাল বিশ্বজীবনের সাথে যুক্ত করেন, সকলকে এক মধুর মিলনের মধ্যে আবদ্ধ করে এক সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে প্রেরণা দেন।
কবি ছাড়া আর কে মানুষের বিষাদগ্রস্ত অন্তরে সহসা নিয়ে আসে বিক্ষুব্ধ কামনার ঝড়? প্রেমের উজ্জ্বল পথে কবি ছাড়া আর কেই বা বসন্তের ফুল ছড়াতে পারে? একমাত্র কবিরাই সামান্য গাছের পাতা দিয়ে তৈরি মুকুটেও রাজমুকুটের গৌরব দান করতে পারেন। সাহারার প্রান্তরের ঊষর মরুভূমির মাঝেও ফুল ফোটাতে পারেন। তাঁদের কল্পনা শক্তি দিয়ে মলিন, বিষণ্ণ, জীর্ণ-শীর্ণ, নির্জীব মানবকুলকে সজীব করে তুলতে পারেন। কবিরা যুগে যুগে মানুষের কীর্তি ও মহত্ত্বকে অমর করে রাখেন কাব্যকথার মাধ্যমে। শাব্দিক বর্ণনার মধ্য দিয়ে সজীব করে তোলেন কীর্তিমান মৃত মানুষগুলোকে।
কবিরা তাঁদের কল্পনাপ্রখর ও সৃষ্টিশীল প্রতিভা দিয়ে পৃথিবী বদলে দিতে পারেন, বদলে দিতে পারেন মানুষের চিন্তাধারা, পৃথিবীর বুকে রচনা করতে পারেন ভেদাভেদহীন এক সুখময় মানববন্ধন।