জীবনের পার্থক্য খুঁজি পৃথিবীর পথে সময়ের হাত ধরে
নির্বাক নয়নে চেয়ে দেখি বাজারের সাথে পথের ধারে
শত শত মানুষ ঘুমায় নীল পলিথিন ছাওয়া
বাঁশের টুকরির ভেতরে বিশাল আকাশের নিচে
শিশুদের মতো সরলতা নিয়ে নির্দ্বিধায়
সুখী মানুষের প্রশান্তিতে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে তারা
অনিরাপদ জীবন বাহিত করেও তাদের কোন ক্লেশ নেই
অভিযোগের চিহ্ন নেই নিজের প্রতি অন্যের প্রতি
এমনকি স্রষ্টার প্রতিও, চেহারায় ভেসে আছে স্বর্গীয় আভা।

একদিন কৌতুহল হলো এক টুকরির ভেতরে  ঘুমোবো
এক রাত্রি আগমনী প্রহরে পা'দুটি  গুটিয়ে কুন্ডুলি পাকিয়ে
শুয়ে পড়লাম টুকরির গর্ভে অনায়াসে,
আ'হা ! কি শান্তি আকাশটা যেন অনেক নিচে নেমে এসেছে
চারিপাশে নীলিমার মস্তবড় মশারি আচ্ছাদিত
আমার মনে হলো শুধুই এক আমি বেঁচে আছি পৃথিবীতে
লক্ষ লক্ষ নক্ষত্র জ্বলে আছে আমার মনের আকাশে
পৃথিবীর সমস্ত সুখ যেন আমায় জড়িয়ে ধরেছে
আমি উল্লসিত মনে উপভোগ করি জীবনের শ্ৰেষ্ঠ সুখ।


জানি না কি ভেবে হঠাৎ হাঁটি অভিজাত এলাকায়
চেয়ে চেয়ে দেখি জীবনের আকাশছোঁয়া রূপ
অভিজাত্যের অবাঞ্ছিত মহড়া, পর্ব আর উদ্ধত্য নিয়ে
দাঁড়িয়ে থাকা ইট পাথরের আবাস
জীবনের কি নিদারুণ পার্থক্য রাস্তার পাশে আস্তাকুঁড়ে
পড়ে আছে অজস্র ঘুমের ওষুধের খালি প্যাকেট
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নিরাপদ কক্ষ শুভ্রতা জড়ানো বিছানা
পাখির পালকে নির্মিত বালিশেও তাদের নিদ্রাহীনতা
কয়েক লক্ষ বছরের খাবার কেনার টাকা ব্যাংকে সঞ্চিত
করেও গভীর দুশ্চিন্তায় তাদের রাত কাটে
প্রখর ভূমিকম্পেও অটল থাকে এমন ছাদের নিচেও
নিজেদের অনিরাপদ ভাবে নিশ্চিন্ত জীবনের সুবাতাসে
তারা জটিলতার অবিচ্ছেদ্য গন্ধ পায়।

আমি নির্বাক নয়নে বাকরুদ্ধ কণ্ঠে জীবনের পার্থক্য দেখি
আমার চারিপাশে আমার অস্তিত্বের গভীরে
এক অবাক করা শূন্য দীর্ঘ নিঃশ্বাস
আমার চোখ ভিজিয়ে অশান্ত করে তোলে আমায় নিমিষে।
________________
০৫ জানুয়ারি ২০১৭ এথেন্স.গ্রীস
   © Copyright সংরক্ষিত ®