আবার এসেছি ফিরে, আসতেই হল,
না হলে যে সতীত্বের গুণগান থেকে যাবে অনেকটাই বাকি।
প্রসঙ্গ, মহাভারতের সেই সব মহান নারী,
যাদের পুণ্য নামেই দূর হয় পাপ।
সময়ের হাড়ীকাঠে বলি হওয়া সেই পাঁচ নারী, অহল্যা, কুন্তী, দ্রৌপাদি, তারা আর মন্দোদারী।
সবার প্রথমে আসা যাক অহল্যার কথায়।
স্বামী গৌতমের অনুপস্থিতির সুযোগে সন্তান সম শিষ্য ইন্দ্রের ভোগের বস্তু।
ভোগ্য পণ্যই বটে! যাকে উপভোগ করা যায়, করে রাখা যায় পাথর।
আবার ইচ্ছে হলে পুরুষের পায়ের ধুলায় সে হয় ওঠে মহামান্যা সতী।
অবশ্য সব পুরুষের দ্বারা এসব হয় না, এর জন্য চাই মহাপুরুষ অর্থাৎ বিশেষ গুণ।
যেমন প্রজার মঙ্গলের অছিলায় নিজের স্ত্রী’কে জলন্ত আগুনে ফেলা অথবা গর্ভবতী অবস্থায় জঙ্গলে ছেড়ে আসা, প্রমুখ।
নির্মম অত্যাচারে্র চিরন্তন সাক্ষী পাষানী অহল্যা।
আজও সে আছে, এই পৃথিবীর দিকে-দিকে ছড়িয়ে আছে শত সহস্র অহল্যারা।
যারা ইন্দ্রের মত মহাজনদের ভোগ আর স্বামীর কোপের উপাদান।


সাতীত্বের তালিকার দ্বিতীয় নাম কুন্তী, সেই কুন্তী যাকে অক্ষম স্বামী সক্ষম সন্তানের জন্য বাধ্য করেছিল একাধিক পুরুষের বিছানায় যেতে।    
যদিও, স্বামীর ইচ্ছা মত সান্তান উৎপাদনের মহানতায় কিশোরী বয়সের উন্মাদনায় সাড়া দেওয়া পাপ ঘুচে যায়।
পাওয়া যায় সতীত্বের চাদর। যার নিচে ঢাকা থাকে আগের সব দোষ।
আচ্ছা কুমারীর কি মা হতে নেই? স্বামীর ইচ্ছার পর পুরুষ গমন পুণ্য আর আপন ইচ্ছায় পাপ?


এবার আসা যাক মহাভারতের একদম মধ্য মণিতে, নাম সতী দ্রৌপাদি।
সে তো শুধুই সতী নয়, মহাসতী।
যার আগুনের মতো যৌবনকে শিয়াল কুকুরের থাবা থেকে রক্ষা করতে পিতা দ্রৌপদ আয়োজন করেছিল শক্তি ও বুদ্ধি পরীক্ষার। পুরষ্কার নারী।
সেই দিনটা, যেদিন দ্রৌপাদি দখলের লড়াইতে এসেছিলো কত-শত রাজা-মহারাজা।
আর মহানুভাব শ্রীকৃষ্ণের দয়াতে দ্রৌপাদি ভোগের আধিকার পেয়েছিল অর্জুন।
যদিও সে একা নয়, তরুণী নারীর উদ্দ্যাম যৌবনকে ভোগ করে ছিল পঞ্চ পান্ডব।
না এ কোন পাপ নয়, কারণ সতী হতে গেলে এইটুকুতো সহ্য করতেই হয়।
এ কোন পুরুষের বানানো নিয়ম নয়, সন্তান বৎসল মা’য়ের বিধান।
আচ্ছা, পুরুষ না নারী ?- নারীর আসল শত্রু কে?
প্রকাশ্য সভাতে নারীকে যারা উলঙ্গ করতে চায়- তারা পাপী।
আর যারা নিজেদের কুকর্ম ঢাকতে অত্যাচারিতার মাথায় যারা পরিয়েদেয় সতীত্বের তাজ?
মৌনতার সাথে উপভোগ করে উলঙ্গ নারী শরীরের দৃশ্য?
সেই মৌনতার ভিড় কি শুধু পুরুষদের? নাকি নারী পুরুষ নির্বিশেষে পিতৃতান্ত্রিকতার।


পঞ্চ সতীর তালিকার চারে যেই মহান সতী, সে হলেন তারা।
না! না! কোনো মন্দিরের দেবী নয়, বৃদ্ধ বৃহষ্পতির রূপসী স্ত্রী।
যার রূপে মুগ্ধ হয়ে স্বয়ং চন্দ্র হরণ করেছিল, নিয়ে রেখেছিল চন্দ্রলোকে একেবারে নিজের কাছে।
তখন অবশ্য চন্দ্রের সাতাশ জন বউ ছিল কি না সে কথা জানা নেই।
যেটা জানা আছে তা হল, নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে শরীর দানের কথা।
তবে যেটা না বললেই নয়, তা হল দেরিতে হলেও দেব গুরু পিছ পা হয়নি স্ত্রীকে রক্ষা করতে।
উদার মনের বৃহষ্পতি বলেছিল, তারা সতী, তাই তাকে ফিরিয়ে নিতে তিনি নিজেই এসেছেন।
নিজগুণে তিনি এতই মহান যে, স্ত্রী হরণের পরেও চন্দ্রকে অনায়াসে করেছিল ক্ষমা।
তবে সে ক্ষমা পেটের সন্তানের জন্য ছিল না, মাথায় সতীত্বের মুকুট আর পতি পরমেশ্বরের আদেশে মহাসতী তারা সাত মাসের গর্ভ ত্যাগ করেছিল, জন্ম দিয়েছিল এক অপ্রাপ্ত বয়্স্ক শিশুকে। যাকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল গভীর জঙ্গলে।


মহান এই পাঁচ সতীদের তালিকার সবার শেষে যার নাম, তিনি মানবী বা দেবী নন –রাক্ষসী।
হ্যাঁ, মন্দোদারী, রাবনের স্ত্রী। যার স্বামী-সন্তানকে হত্যা করা হয়েছিল গভীর চক্রান্ত করে।
আর এই ষড়যন্ত্রে মুখ বন্ধ রাখার তালা হল সতীত্বের মর্যাদা।