আমাদের ছোট বেলা কি মজার ছিল, তাই না?
খালা-নানী বাড়ী যাবো বলে ধরতাম কত বায়না।
আরও যত দাবী ছিল মার আঁচল খানি ধরে-
মাগো, এটা সেটা দিতে হবে বলতাম করুণ সুরে।
শত জ্বালা ভুলে গিয়ে মা, হাত টি রেখে পিঠে-
খোকা, কালই হবে একটু সবুর, বলতো করে মিঠে।
শেষ বিকেলে বাজান যেতেন হাটে কিনতে সদাই-
ঢালা খানি কাঁধে তুলে সাথে যেতো গদাই;
একটু দুরে মুখ ভেঙ্গে বাজানরে ডেকে কই-
ফিরার পথে আমার জন্য আইনো মিষ্টি ‘নই।
সদাই-পাতি কিনে বাজান ফিরতো অনেক রাত
তিলের খাজা, কদমা, বাতাসা আরও কত জাত।
এটা নয় সেটা খাব, দেবো না তোরে ভাইয়া-
সারা দিন বাধা-বাধি কত্ত কিছু লইয়া!


অগ্রহায়ণের চাঁদনী রাতে মাঠ থাকতো ফাঁকা
দাড়িয়া-বান্ধা, গুল্লা-ছুট খেলা যেতো দেখা।
আমি তখন বায়না ধরতাম খেলতে সেই খেলা,
বড় হয়ে খেলতে পাবো ভাইয়া বলতো মেলা।
বড় আমি হয়ে গেছি, এই দেখ কত লম্বা-
টুলের উপর দাড়িয়ে ধরে বাঁশের একটি খাম্বা।
নাছোড় বান্দা আমায় দেখে রেগে উঠে ভাইয়া,
গালে মারে কষে থাপ্পড় বিটলা-শয়তান কইয়া।
কাঁদতে-কাঁদতে বলতে থাকি বিচার দিব মা’য়,
আদর দিয়ে ভাইয়া কয়, ওরে সোনা ভাই-
কালকে তোমায় নিয়া যাব পৌষ-পার্বণের মেলায়
কান্না থামাও, কি হবে এই মিছে-মিছি খেলায়।


বুবু আইতো সাথে নিয়া ভাইসাব আইতো বাড়ি,
আরও আছে ভাগ্নে-ভাগ্নি চড়ে গরুর গাড়ি।
কি মজা সারাদিন খেলতাম কত খেলা-
পিঠা-পায়েস রান্না হবে ধান বানে এ বেলা।
কত জাতের পিঠা রে ভাই রাঁধতে অনেক রাত,
মধ্য রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়, পেতে পিঠের স্বাদ!
একা-একা বলি তখন পাগলের প্রলাপ,-
‘‘সবার রাত হয় সবার রাত পোহায়, আমার রাত আর পোহায় না,
বিয়ানে উঠিয়া আমি পেটভরে খাব পিঠা’’-করিয়া বিলাপ।
হেসে-হেসে কুটি কুটি বড় বুবু আর মা’য়!
বড় এখন হয়েছি তবু, সেই কথা বলে যায়।
ছোট বেলার ছোট স্মৃতি আসলে ছোট নয়-
দিনে দিনে সেই স্মৃতি নিশি-অবসরে কথা কয়।