বনকর্তা বড়কর্তা, জ্ঞানী আর নীতি-নির্ধারক;
ঘনঘন করছে মিটিং ‘বাঁচাও হাতি যেমনি হোক’।
কেও বলেরে জাল ফেল, রশি দিয়ে বেধে ফেল;
কেও বলে আগুন জ্বেলে ভয় দেখিয়ে নদিতে ঠেল।
নানা জনের কানাকানিতে বিজ্ঞ জনে শুনে হাসে;
সহজ একটা বুদ্ধি আছে, জ্ঞানীজনে বলল পাছে।
ট্রিঙ্কুলাইজারের ডার্ট ছুটিলে জ্ঞান হারাবে হাতি-
ইচ্ছামতো টানাটানিতে লাগাও যন্ত্রপাতি।


কথা তবে মন্দ নয় দেখছি ডিসকভারিতে-
অপারেশন আর বশ মানাতে উঠায় গাড়িতে।
জলদী করে খবর পাঠাও আন জলদি গানম্যান;
অজ্ঞান করে ডাণ্ডাবেড়ি পায়ে পরাও আর্জেন্ট।
আরও সাথে পোষা হাতি, জুটাও আরও সঙ্গী-সাথী
খবর পাঠাও কমলগঞ্জে জলদী আন পোষা হাতী।
চারিদিকে থৈ-থৈ সাজ সাজ রব পড়ে-
না-জানি কি হয় তাই আতঙ্ক ঘরে-ঘরে।


সর্বশেষ হালের খবর জানায় সকল মিডিয়া;
খাচ্ছে কিতা ঘুমায় কিনা, দেখতে কেমন চিড়িয়া।
উৎসুক জনতা, চৌদ্দ-গ্রামের পোলা-পান;
বাঁশের পাতা, কলাগাছ, সাথে এনে করছে দান।
বন্যহাতি অর্ধ-জলে নেমে থাকে সারাদিন-
আতংকে ছুটে আবার দাড়িয়ে থাকে রাতদিন।
আসলে সাহেব, আসলে কর্মী, হিসাব করে দেখে
লাগবে ক্রেন, লাগবে লরি, আনতে শহর থেকে।


বন্যায় গেছে রাস্তা ভেসে পুল-কালভার্ট ভেঙে;
থাকতে হবে ইঞ্জিনিয়ার মেরামতের সঙ্গে।
গানম্যান ডাকা হল, অচেতনের শুট করল;
সংজ্ঞাহীন না হয়ে ক্লান্ত হাতি ক্ষেপে গেল।
হাঁকাহাঁকি-ডাকাডাকি নিজে বেঁচে অন্যে বাঁচাও-
কার্যকরী ওষুধ এনে জ্ঞান হারাতে যা চাও
টাটকা-টাটকা ডার্টি এলো গেঁথে দিল বিষে
বন্যহাতি একে নয় তিনে গেল মিশে।


ডাণ্ডাবেড়ি লাগায়ে পায়, টেনে তুলে ডাঙায়
মোটা-মোটা রশি দিয়ে গাছে বাঁধে পায়।
স্যালাইন দেয় খাওয়ায় ওষুধ, করে যত্নআত্তি;
এ-যে সেই নয়, দাদা বাবুদের হাতি!
গায়ে বসে সেলফি উঠায়, ইন্টারনেটে ছবি;
হাজার হাজার লাইক পড়ে, কবিতা লেখে কবি।


বনের বীর পশুর রাজা, নাম ছাড়া কি হয়?
রাজকীয় নাম চাই যেন, বাংলা করে জয়।
আসাম হতে বাংলায় এলে সম্মান দিয়ে তারে;
বঙ্গ বাহাদুর নাম তার সবাই বলতে পারে।


যতোই আদর কর তারে, সে বুঝে তা বিষ
বনের প্রাণী বনেই ভাল যতই ভালবাসিস।
কিসের রশি? কিসের খুশি? চেতন পেয়ে হুশ;
এবার আমায় করবে বশ, দিচ্ছে নাকি ঘুষ?
মরণ-কামড় দিয়ে হাতি টেনে ছিঁড়ে রশি-
আধা-ডুবো জলে নেমে হল বেজায় খুশি।


বনকর্তা- বনরক্ষী, প্রমাদ গুণে এবার-
ধরা হাতি ছুটে গেলে কি আছে করার?
হাঁকাও গান বিষের বাণ, আন গভীর ঘুম;
কার্যকরী পদক্ষেপের পড়লো জটিল ধুম।
বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্কের মাহুত গেল ডরে-
যদি জংলি-হাতির তরে, পালা-হাতি মরে।
জলদী আনো কমলগঞ্জের পোষা হাতি বড়;
ছলচাতুরী পোষ মানায়ে এবার তারে ধর।


খবর এলো সব-ই প্রস্তুত, আসছে একে একে
ক্রেন লড়ি পোষা হাতি আসছে থেকে-থেকে।
সন্তর্পণে এবার তারে ঢুকাও বিষের সুঁই-
আরও শক্তির ওষুধ দাও, একই সাথে দুই।
ঘুমের ঘোরেই নিয়ে যাও, গজনী ন্যাশনাল পার্ক;
তানা হলে ফিরে যাবে বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক।


যার জন্য এতো আয়োজন, অনাকাঙ্ক্ষিত মেহমান
বিষের ঘায়ে এলিয়ে পড়ে, করে স্বেচ্ছায় দেহদান।
রোদ্র তাপে কাদা পানি ফুটে-ফুটে অগ্নি-লাভা;
হস্তি-দেহ অমলেট সম, যে রকম হয় ভাবা।
দিনভর অনেক চেষ্টা, পাম্প দিয়ে পানি ছিটায়;
নিথর দেহ ঠাণ্ডা করে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটায়।
উনিশ দিনের মেহমান, বিষে কাবু করে-
বিশেষ-অজ্ঞের ব্যঞ্জনায় হস্তি তবুও মরে।


চারিদিকে হায় হায় ওঠে কান্নার রব;
বন্ধুত্বের বাঁধন বুঝি ছিঁড়ে গেল সব।
কূটনীতির শুষ্ক-প্রীতি বাইরে যাহাই দেখি-
কয়রা গাঁয়ের বাসিন্দাদের কান্না নহে মেকি!
আত্মার ভালবাসা লুকিয়ে আত্মায় থাকে-
পর যদি বন্ধু হয়- আত্মা খুলে বাকে।
বঙ্গ-বাহাদুর বন্ধু হয়ে মিশেছে আত্মায়;
তার প্রয়াণে ছেলে-বুড়ো সারাদিন পস্তায়।
ডুকরে-ডুকরে কেঁদে বলে-‘হাতি নয় সে ইষ্টি’;
ভিন দেশী পশুর তরে, দিইনি শুভ দৃষ্টি।


অবশেষে--------------
অবশেষে বাহাদুরের মরণ খবর শুনে-
মরণের কারণটি শুধায় জনে-জনে।
কেউ বলে দুঃখে-ক্ষোভে, কেউ বলে বিষে;
কেউবা পেঁচিয়ে বলে, গ্রামের লোকে পিষে।
মরার কারণ যাহাই হোক, করতে হবে সৎকার
তার আগে আইনি-প্যাঁচের ময়না তদন্তে ফাঁড়!
কলিজা-কিডনি-ফুসফুস-অন্ত্র নাও সব নমুনা;
মরার সাক্ষী হবে এবার প্রলয়ঙ্করী যমুনা।


(ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।)