(কথা ও কাহিনী অবলম্বনে চতুর্থ নিবেদন - সত্য কাহিনী ২০১৫তে)


ছেলেটার বয়স হবে বছর আট
রোগা কালো আর চ্যাপটা নাক
নাম তার ফিরোজ শেখ,
তার জন্মের সাতদিন পর
ওর আম্মা যায় মরে
ওর আব্বা আবার নিকা করে
বাড়ি ছেড়ে হয় ঘরজামাই
তাই দাদির কাছেই সে মানুষ,
দাদি গরিব বুড়ি মানুষ
দ্বারে দ্বারে হাত পাতে
নক্সিকাঁথার সেলাই করে
মুড়ি ভেজে দেয় বাড়ি বাড়ি
ভাঙা উনুন গোটা করে দেয়
পাড়ায় ঘুরে ঘুঁটে বেচে,
কাজের মধ্যেও ফিরোজ থাকে
তার মমতার আঁচলে বাঁধা,
তার যত দুষ্টুমি দাদিকে ঘিরেই।


প্রতিবারের মত এবারেও আশায় ছিলাম
ফিরোজের দাদি ঈদের নিমন্ত্রণ দেবে
কিন্তু কই তারা এল না
ঈদ এসে গেল চলে,
সবুজ পাড়ের সাদা শাড়ি
আর লাল-হলুদ প্যান্ট-জামা
শোভা পাচ্ছে আমারই স্লেফে।
সেদিন ছিল রবিবারের সকাল
বাজারের থলি নিয়ে গেছি বাজারে
সবজি বাজার সেরে যখন
মাছের বাজারে ঢুকতে যাব
এমন সময় দেখি ফিরোজের দাদি
হাত পাতছে আর চোখের জল মুচ্ছে,
আমাকে দেখে উচ্চস্বরে কেঁদে উঠল
আমি কিছু বলার আগেই বলল –
আজ দশদিন জ্বরে বিছানা শয্যা
ওষুধ কেনার পয়সা নেই
ওকে তোমরা বাঁচাও বাপ।’
কোন কথা না বলে তাড়াতাড়ি
পকেট থেকে হাজার টাকা নোট
ধরিয়ে দিলে বললাম – ডাক্তার দেখিও,
উনি দু’হাত উপরে তুলে
বিড় বিড় করে চলে গেল।


তারপর কেটে গেছে পনেরটা দিন
আজ মহা সপ্তমী, দুর্গা মায়ের বোধন
নবপত্রিকা স্নানের জন্য ডাক পড়েছে
তাই সকাল সকাল তৈরী হয়ে
বাড়ির বাইরে আসতেই দেখি –
বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে
ফিরোজ আর ওর দাদি,
মুখে নির্লিপ্ত হাসির ঝলক
চোখ দু’টিতে মায়াময় দৃষ্টি
আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে –
আমাকে দুগ্গা দেখাতে নিয়ে যাবি
ও নাকি সবার মা !’
নিয়ে এলাম ওদের সঙ্গে করে
শঙ্খধ্বনি আর ঢাকের আওয়াজের সাথে
মঙ্গলদীপে যখন মা’য়ের পূজা হচ্ছে
ফিরোজ তখন লাল-হলুদ নতুন পোষাকে
স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দাদির হাত ধরে,
মা’য়ের মুখে খুঁজে পেয়েছে বুঝি মমতার পরশ
তারই দৃষ্টিতে হল আজ মায়ের অকাল বোধন!


                  ...............