স্বর-বাণী (আবৃত্তিযোগ্য কবিতাগুচ্ছ) একক

স্বর-বাণী (আবৃত্তিযোগ্য কবিতাগুচ্ছ) একক
কবি
প্রকাশনী নির্বাণ বুকস্, কলকাতা
সম্পাদক ডক্টর অজিত কুমার কর
প্রচ্ছদ শিল্পী সৌভিক চক্রবর্তী
স্বত্ব সৌমেন বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রথম প্রকাশ এপ্রিল ২০২২
বিক্রয় মূল্য ১৩৩

সংক্ষিপ্ত বর্ণনা

আবৃত্তিযোগ্য কবিতাগুচ্ছ (৫০টি কবিতার সংকলন)
পড়তে পড়তে পাঠক আর লিখতে লিখতে লেখক হয়ে ওঠার গল্প নয়। কবিতা পড়া ও আবৃত্তি করা শুরু সেই ছোটোবেলা থেকেই। তারপর কত বছর পার হয়ে আজ উনপঞ্চাশের দরজায়। কবিতা আবৃত্তির পাশাপাশি লেখালেখি শুরু ১৯৯২ সাল থেকে। বহু পত্র-পত্রিকায় লেখাও প্রকাশিত হয়েছে, সম্পাদক হিসাবে কাজও করেছি। বর্তমানে নিয়মিত লেখালেখি না করলেও আমার কলম একেবারে থেমে যায়নি। ২০০৮ সালে কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের স্নেহভাজন হই। শ্রদ্ধেয় কবি ডক্টর শ্রী অজিত কুমার কর ও আবৃত্তিকার শ্রী বিমল কোনার মহোদয়ের সম্পাদনায়, অনুপ্রেরণায় ও উৎসাহ দানে এবার একক আবৃত্তিযোগ্য কাব্যগ্রন্থ প্রকাশে ব্রতী হয়েছি। সমকালীন ও চিরকালীন জীবনযাত্রার গাথা নিয়ে আমার নিবেদন "স্বর-বাণী"। আমার সৃষ্ট 'শতদল বাচিক শিল্প গোষ্ঠী'তে যাঁরা যুক্ত রয়েছেন তাঁদের উদ্দীপনাও গ্রন্থ প্রকাশনার অন্যতম দিক। কবিতা পাঠে ও আবৃত্তির উচ্চারণে 'স্বর-বাণী' ঝংকৃত হয়ে উঠলে আমার লেখা সার্থক হবে। এই আশায় সকল সাহিত্যপ্রেমী মানুষের হাতে তুলে দিলাম গ্রন্থখানি।

ভূমিকা

একজন আবৃত্তিকার যখন কবি হিসাবে প্রকাশিত হন বা বিপরীতভাবে বলা যায় যে একজন কবি যখন আবৃত্তিকার রূপে নিজেকে তুলে ধরেন তখন বোধহয় লেখনী এবং বাচনিক প্রয়োগ একসুরে যথাযথভাবে বেজে ওঠে। এ যেন আত্মার সঙ্গে আত্মীয়'র মিলন এবং শব্দ ও ভাবপ্রকাশের পরমাত্মায় পৌঁছানোর এক নিরন্তর প্রয়াস। কবি ও আবৃত্তিকার সৌমেন বন্দ্যোপাধ্যায়-এর এই ৫০টি কবিতার সংকলনটি বেশ কয়েকদিন ব্যাপী, সময় নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়েছি। কবিতার বিষয়বস্তু, কবির ভাবনার মধ্যে জীবনের বাস্তবতা, প্রেম-প্রকৃতি-সংগ্রাম-দৃঢ়তা, নিম্নশ্রেণী ও অবহেলিত মানবজীবনের দুঃখ-কষ্ট সব কিছুই যেন সমভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। অতীত স্মৃতির আড়ালে চাপা পড়ে থাকা কবিতা "শেষ চিঠি"তে যেমন একটি ফেলে আসা জীবনের হাহাকার নিয়ে কিছু যাপিত অনুভব, সেখানে মহীরুহ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ কিম্বা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কিছু শব্দের অঙ্কিত-আঁচড় যেন কবিতাটিকে অন্য মাত্রায় পৌঁছিয়ে দিয়েছে। কিছু আঞ্চলিক কবিতা যেগুলিতে স্থানভিত্তিক, জেলাভিত্তিক কিছু প্রাদেশিক স্বরক্ষেপন নিশ্চিতভাবে আবৃত্তিকারকে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করবে এবং শ্রোতা ও দর্শককুলকেও সঠিক বোধগম‍্যতার স্তরে উন্নীত করতে সাহায্য করবে। "পঁচিশে বোশেখের মিঠাভাত" তেমনই একটি কবিতা। একজন কবির লেখনীতে সার্থক কবিতা তখনই বের হয় যখন তার লেখার মধ্যে একটি প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত বা বার্তা থাকে, যা হয়তো অতিপুরাতন হয়েও চিরনুতনভাবে বারে বারে প্রকাশিত হয় এবং তার দায়িত্ব আংশিকভাবে বর্তায় আবৃত্তিকারের উপর আর এখানে যখন কবি ও আবৃত্তিকার একজন তখন তো সোনায়-সোহাগাই বলা যায়। এই ৫০টি কবিতা সংকলনে জীবন সংগ্রামের কঠোরতা যেমন অনেকগুলি কবিতাকে ছেয়ে রেখেছে সেইরকম কিছু কবিতায় সময়ের অপসৃয়মান পর্দায় দেশভাগের জ্বালা-যন্ত্রণার বোঝা বহন করেও জীবনে ঘুরে দাঁড়ানোর কথা এবং অবশেষে আবার সব হারিয়ে সব পেয়েও আবার হারানোর সুর বেজে উঠেছে "দূরত্ব" কবিতাটির মধ্য দিয়ে। মুক্তছন্দ বা গদ্যছন্দের কবিতাতে যেমন নাটকীয় অনুভূতিতে আবৃত্তিকার নিজের মতো বাড়াতে পারেন বা কমাতে পারেন, তাল-মাত্রা-ছন্দের কবিতাতে কিন্তু গতি বা স্বরক্ষেপন একটি নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতায় বিচরণ করে, তাই হয়তো কবি সৌমেন বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু তাল-ছন্দ-মাত্রার কবিতা সংযোজন করে আবৃত্তিকারকে গতি-সংযমী হতে বলেছেন। কবিতা "এলো শরৎ", "কিশোরের শপথ", "নতুন দিনের দাবী", "সমব্যথী", "বঙ্গমধু" এর কয়েকটি উদাহরণ মাত্র। সত্য না দেখলে বা সত্যকে বিশ্বাস না করলে কিছু সৃষ্টি করা যায় না। যাঁরা কল্পনাদর্শী তাঁরাও সৃষ্টি করেন কিন্তু যাঁরা "যাহা দেখেন তাহাই লেখেন, যাহা দেখেন না তাহা লেখেন না" তাঁদের সৃষ্ট কাজ কল্পনাদর্শীর কাজের চেয়ে অনেক বেশী বাস্তব এবং শাশ্বত। তাই কবির লেখনী যদি দেখতে দেখতে পাতার উপর আঁকিবুকি কাটে তাহলে হয়তো বাস্তবতার চিত্র এবং প্রচ্ছন্ন বার্তাটি পরিষ্কারভাবে পাঠক-আবৃত্তিকারের কাছে পরিস্ফুটিত হয়। এখানে কবির লেখনী'র পটুতার সঙ্গে আবৃত্তিকরেরও বিশেষ দায়বদ্ধতা থাকে। "কড়ি দিয়ে কিনলাম" কবিতাটিতে একজন পরিবারের প্রধান তাঁর পারিবারিক জীবন ও কর্মজীবনের সঞ্চয়ের তুল্যমূল্য বিচারে তাঁর নিজের সন্তানের প্রশ্নের মুখেই পরাভূত হয়। জীবন ও সময়ের সত্য দৃষ্টিতে এই কবিতাটি লেখা হয়েছে বলে অনুভূত হয়। আবার মানুষের কবিতা "ময়লা মানুষ" এটির শেষ লাইনে 'কেন মানুষ করলে না আমাকে' - লাইনটির মধ্য দিয়ে কবি সৌমেন যে বার্তাটি দিয়েছেন তাতে স্বল্পদৈর্ঘ্যের কবিতাটির বিষয়টির মধ্যে ধর্মের উর্দ্ধে উঠে সাম্প্রদায়িক প্রীতি ও সম্ভাব-এর ভাবনা প্রকট হয়েছে।

এই সংকলনটিতে শৈশব-কৈশোর-যৌবন থেকে শুরু করে সমগ্র গ্রাম্য ও শহুরে সমাজজীবনের বিভিন্ন কোণা'য় কবি অনায়াসে ও সাবলীলভাবে তাঁর লেখনী চালিয়েছেন। "তাহাদের কথা" কবিতাটিতে দুটি নিষ্পাপ ও সরল জীবনের অব্যক্ত প্রেমেরই প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। প্রকৃতির নিষ্ঠুর করাঘাতে, দুজনেই তাহাদের ক্ষণিকের অন্তহীন প্রেমকে সঙ্গে নিয়েই চিরতরে পৃথিবী থেকে মুছে যায়। কবিতাকে আবৃত্তিতে পরিণত করতে হলে তাঁর সঙ্গে নিয়মিত যাপন করতে হয় এবং যথাযথভাবেই করতে হয়। সৌমেন এর এই একগুচ্ছ কবিতার সংকলনটি আবৃত্তিকার ও পাঠককুলের কাছে সমাদৃত হয়ে উঠবে, আশা রাখি।

শুভেচ্ছা সহ -
বিমল কোনার
বাচিক শিল্পী ও মঞ্চশিল্পী
(আবৃত্তি, শ্রুতিনাটক, গল্প পাঠ ও সঞ্চালনা)


উৎসর্গ

সাহিত্য প্রেমী, আবৃত্তি অলিন্দে সব কন্ঠের সব স্বরের প্রতি