(কথা ও কাহিনী)


যেদিন আমি জন্ম নিলাম মায়ের কোলে
বললে সবাই, মেয়েকে রেখো বেঁধে আঁচলে,
নিজের কথা নিজেই বলি তাহলে খুলে -
ছোট থেকেই আদর করতো সবাই নিয়ে কোলে‌
টিকালো নাক, চড়া রঙ, বড়ো বড়ো চোখ
ঠোঁটের উপর ছোট্ট একটি রাঙা তিল
কপালের মাঝখানে এত্তো বড়ো কালো টিপ,
মা বলতেন, নজর কাঠি দিলাম এঁকে
কোন বিপদ আসবে না এঁকেবেঁকে।
বয়স যখন সবে মাত্র ছয় কি সাত
বাপের কথায় পরতে হল পাঁচ হাত,
সেই প্রথম শাড়ি পরা, পরতে শেখা
আমার এক সই ছিল, নাম তার রেখা
পরত সে ফ্রক, কখনোবা চুড়িদার
আমার বেলায় বাপের আদেশ
বাড়ির কথা মেনে শাড়ির সাথে বেণীর বাহার,
রেখা বলতো হেসে "সারি তুমি কার?"
বয়স তখন নয় ছুঁই ছুঁই
বলল মা'য়ে, মিনি যেতে হবে শ্বশুরবাড়ি
আমার কান্না শুনবে কে, বুঝবে কে ব্যথা?
দশে আমি দশ হাতের আলিঙ্গনে
লাল চেলিতে এলাম চলে পরবাসে
স্বামীর ঘরে গুরুজনের শাসনে
তাও সই, সবকিছু মেনে রই।
যে যা বলে, করি সেই কাজ
পান থেকে চুন খসলে পড়ে বাজ।
একদিন দুপুরে বসে ছিলাম পুকুর পাড়ে
দেওর ধরছিল মাছ মাছের চারে
হঠাৎ আমার বেণী ধরে আনলো টেনে ঘরে
করলো শাসন করলো আদর বরে।
পরের দিন এলো কম্প দিয়ে জ্বর
সেদিনই প্রথম শরীর থেকে এলো রক্তস্রাব
শাড়িতে লাগলো রক্তের দাগ
পেলাম আরো একজোড়া বারোহাত
গায়ের জামা তারই সাথে বারো মাস।
এরপর বছর দুই কাটলো বেশ
কতরকম শাড়ি কত রঙবাহারি।
কাজের মধ্যে রাঁধা আর খাওয়া
তারই সাথে পরমগুরু সেবা
কখন আমি মেয়ে থেকে হলাম নারী
সে কি আমি নিজেই বলতে পারি!
সবাই বলল লক্ষ্মীবউ, এবার কোলে আনো ছেলে
ভয়ে আমি জড়সড়, কথা নেই মুখে
কখন জানি হলাম অন্তঃসত্ত্বা
বরের কুল রক্ষা করতে আমি সয়ংসিদ্ধা।
দশ মাস দশ দিন গেল কেটে
জন্ম দিলাম ফুটফুটে এক মেয়ে
দেখতে তারে কেউ এলো না বাপের ঘরে
ওরা বললে, থাকো তুমি মেয়ের সাথে।
মা কাঁদে বাপ কাঁদে সাথে কাঁদে খুকি
তবে কি আমি বরকে করিনি সুখি!
দিন যায় মাস যায় বছর যায় চলে
বর আর এলো না আমায় নিতে
ব্যর্থ হল জীবন ব্যর্থ হলাম আমি।
বারো বছর গেছে কেটে -
খুকি এখন ইস্কুলে যায় ফ্রক পরে
বাপের কথা বলতো আগে
এখন বলে না বুঝি রাগে!
জীবনে আমার সব রঙ গিয়েছে চুরি
এখন আমি সধবা হয়েও বুড়ি,
সব ছেড়ে তাই পরি সাদা শাড়ি
দশের কুকথা, অগত্যা বাপের বাড়ি!