আজ কটা দিন মন ভালো নেই
মন বসেনা কাজে,
ভাবছি শুধুই তারই কথা
নিত্য সকাল সাঁঝে।
এই না বলে চেয়ার টেনে
সামনে এসে বসে,
কহেন কবি সজল চোখে
আছি বড় দুখে!
ঘুম আসেনা রাত কেটে যায়
এপাশ ওপাশ করি,
তাহার কথা ভেবে ভেবে
যাচ্ছি যে ভাই মরি।
শুধাই আমি কি হয়েছে
খুলেই বলো কবি,
নিদ্রামাঝে সকাল সাঁঝে
আকছো কাহার ছবি ?
কার জন্য বদন তোমার
এমনতর হলো,
কান্নাকাটি রেখে এবার
আমায় খুলে বলো।
উত্তরেতে কহেন কবি
বাসি আমি ভালো,
ও পাড়ারই জামিল মিয়ার
যে মেয়েটি কালো।
অবাক হয়ে প্রশ্ন করি
এ কি বলো কবি!
কালো মেয়ের কেমনে আকো
মন মাঝারে ছবি?
গতর কালো এই কালেতে
কেউ যে এতো চায় না,
সবাই তো ভাই মুখর হয়ে
খোজে ফর্সা ময়না!
কথা আমার শুনে কবি
বলেন ব্যাটা অজ্ঞ,
কখন হতে হলিরে তুই
রুপের বিশেষজ্ঞ !
জানিস নাকি তন্বী মেয়ের
সেরা কালো চুল,
কাজল কালো চোখে থাকে
দীঘল কালো ফুল।
ভ্রমর কালো চোখের মণি
কালো দীঘির জল,
উপমাতে কোমল এসব
মানিস কিনা বল!?
মানছি আমি এসব ভালো
তবুও আমায় কও,
এমন কি সব দেখলে কবি
মুগ্ধ শুধুই রও।
কহেন কবি তারই চোখে
দেখি নিজের ছবি,
সে যে আমার মন মাঝারে
আপন আলোর রবি।
হাসি তাহার মুক্তোসম
কন্ঠে আছে যাদু,
কোকিল পাখি হার মানবে
ঝড়লে গলের মধু।
আমার চোখে সেই তো সেরা
হোক না সে ভাই কালো,
এমনতর কালো মেয়েই
সবার চাইতে ভালো।
আকাশপানের আধখানা চাঁদ
যেমনি মেশে রাতে,
মিশবো আমি তেমনি ঠিকই
হাত রেখে তার হাতে।
সে হবে মোর কালো ভ্রমর
ফুল হবো আমি তার,
তাহার মাঝেই রচবো আমি
আমার উপসংহার।
আজ থেকে তুই এই শুনে রাখ
দিন হয়ে রয় ভালো,
কারণ তাহার সাথেই মেশে
আঁধার রাতের কালো।
এটুক কথায় যদি বুঝিস
বুঝবি তবে ঠিকই,
কৃষ্ণকালোই সেরা সবের
বাকী সবই মেকী।
তাইতো আমি ভালোবাসি
আমার কৃষ্নকলি,
যাহার মাঝেই করবো বসত
রাখবো আগল মেলি।
এতো কথা শোনার পরে
বললাম আমি তারে,
ধন্য কবি সেই রমনী
বাসলে ভালো যারে।
তাহার তুমি করলে বিচার
রুপের ডালি ফেলে,
বাস্তবতা পাশ কাটিয়ে
মনের আগল মেলে।
এই না হলে কবি মোদের
কাব্যরসের রাজা,
রইলো চাওয়া তোমার তরে
তিল নাড়ু আর গজা!
ভালোবাসা তোমার কবি
মহাকালের কথায়,
স্বর্ণসম হয়ে থাকুক
কাব্য প্রেমের পাতায়।
কথার শেষে অবশেষে
কবি বলেন উঠি,
মনের কথা বলতে এবার
তাহার পানে ছুটি।
হাত নাড়িয়ে চেঁচিয়ে বলি
রইলো আমার আশীষ,
তোমায় দেখে জ্বলে পুড়ুক
বর্ণবাদের ভন্ড বিষ।।