ব্যথার নীল প্রচ্ছদে নন্দিনী
কবি - কৌশিক আজাদ প্রণয়


আলোচনা:
🔯লেখাটা সংশ্লিষ্ট কবিতায় মন্তব্য দিতেই লিখেছিলাম কিন্তু দুর্ঘটনাক্রমে তা হারিয়ে যায়। মোবাইল টিপে এত কষ্টে লিখা একটা রচনা হারিয়ে গেলে বড় দুঃখ বাড়ে। অগত্যা... স্মৃতি হাতড়ে আবার লিখছি (ওহ্, শেষ পর্যন্ত লেখাটা খুঁজে পাওয়া গেল!) -


শব্দ মাধুর্যে ভরপুর কবিতাটি পড়লাম। নির্ঘুম রাত্রির ক্লান্তি সত্ত্বেও এখনই দু'কলম না লিখলে যে ভাবটা জুড়িয়ে যাবে! অগত্যা লিখতেই হচ্ছে। আবার কবে আমার প্রিয় কবির সাথে দেখা হবে কে জানে?


কবিতাটিকে কবি তিনটি বিষয়শ্রেণীতে চিহ্নিত করেছেন: জীবনমুখী কবিতা, প্রেমের কবিতা, বিরহের কবিতা। বস্তুত প্রেম আর বিরহ, দুই আপাত-সতীন কিন্তু জীবনেরই অঙ্গ। নিরেট বাস্তবতা হল, এই তিনের সহাবস্থানেই জীবন আবার পূর্ণতাও পায়।


অনেক কবিরই একজন কাব্য মানসী থাকে যেমন; কবি কৌশিকের কাব্য মানবী - "নন্দিনী"। কবির মানসীর কাছে প্রথম প্রশ্নটাই ছিল - "রাত্রির কোলে ঢলে পড়া শব্দরা" কবিতা কি না? অতঃপর সন্দিগ্ধ সংশয়ে ভর করে শব্দভুক কবির কাছে আসে কাব্য কোরকের দল। "অশরীরী সব ছন্দরা সমবেত কোরাস তুলে" কাব্য কথায় নেচে গেয়ে কবিকে আনন্দ বেদনার বিরহ-চামর দুলিয়ে যায়। প্রতীক্ষারত দেয়াল ঘড়ির পেন্ডুলামে মিশে থাকা মননের বোধ কবিকে ভাবতে বাধ্য করে; "প্রতীক্ষার অস্থিরতায় ভোর কি তবে বিলম্বিত!"


কবি কাব্য মানসীর "সংস্পর্শের উদারতায়" আস্থাশীল তবুও "শব্দের আবাদে দুঃখকে জীবন্ত" করে দুঃখ বিলাসের সুখটুকু পেতে চান। এ কি তার ভ্রম না প্রশান্তি? কোন এক পত্রী বাবুর সংজ্ঞায়িত ফর্মুলায় সব প্রেমিকই যে "শুভঙ্কর হয় না" তা কবি হলফ করেই বলতে পারেন। যেমন; কাগুজে "নন্দিনীরা উন্মাদ কবির প্রেমাভিলাষে পূর্ন (পূর্ণ) হয়" অথচ "রক্ত মাংশের নন্দিনীরা উত্তাল প্রেমকেও হয়তো শৃঙ্খল ভাবে" - এরা যেন ততটা উদার হতে পারে না।


তবু কবি আকাঙ্ক্ষা ও প্রাপ্তির মাঝে সমন্বয় আনতে চান। "স্মৃতিময় ওষ্ঠের ক্ষণকালীন স্পর্শে" কবি কাব্যের পটভূমিকে ব্যথার নীল প্রচ্ছদে রঙিন দেখেন। তাই শব্দরাও কথা কয়ে উঠে শব্দানটনের বৈরী বাতাস ভেঙে।


শেষমেশ আমি বলব; কবিতাটিকে তিনি (জীবনমুখী কবিতা, প্রেমের কবিতা, বিরহের কবিতা) - এই ত্রয়ী বিশেষণের মোড়কে আবৃত করলেও বস্তুত এটি ভীষণ ভাবেই রূপক কবিতা। আর উপমা উৎপ্রেক্ষায় চিত্রিত শিল্পকলার ভাব ও নান্দনিকতা বরাবর আপেক্ষিক, এর কোন শাশ্বত মানদণ্ড হয় না। তাই এর ভক্ত সমঝদারগণ একই চিত্রের নানান রূপ দেখতে পায়। সেই বিবেচনায় কবিতাটিকে একটি সার্থক রূপক কবিতা হিসাবেই চিহ্নিত করতে চাই।


সমালোচনা:
আলোচনার কিছু সম-আলোচনা থাকে - যেমন আছে এই কবিতার, তেমনি আছে আমার বক্তব্যেরও। আমি কেবল কবিতার সমালোচনাটুকুই করে যাই, আমার সমালোচনা কবি কিংবা পাঠকবর্গ করুন। রূপক উপমার অলংকরণের প্রাচুর্যতায় কবিতার সরল বক্তব্যটি প্রচ্ছন্নতার চাদরে ঢেকে গেছে। কবিতাটিকে টেনে বড় করতে গিয়ে 'কার্টুনের মত' ('কার্টুনের মত' সৌন্দর্যের একটা বিশেষত্ব আছে, অন্যদিন বলব) সুন্দর হয়েছে। যথেচ্ছ শব্দ প্রয়োগ অনেক সময় মূল বক্তব্যকে আড়াল করে কবিতাকে অতিমাত্রায় বিমূর্ত করে তোলে। এটা সৃষ্টির আঙ্গিকে দামী হলেও সুখপাঠ্য পাঠকপ্রিয়তার অন্তরায়। দুরূহ কবিতার পাঠক কবিতাকে ভয় পায় - ভালোবাসার সুযোগ পায় না বলে।


ধন্যবাদ প্রিয় কবিকে।
আরো সুন্দর লেখার প্রত্যাশায় রইলাম।