প্রাণের টুকরা - শোণিতের অংশ হারানোর মর্ম-জ্বালা, একাকীত্বের বেদনা, প্রিয় বিরহের কষ্ট-ব্যথা হজম করা যে কী কঠিন আর কষ্টের তা একমাত্র ভুক্তভোগীই বোঝে। হৃদয়ের ধন, একমাত্র কন্যাকে হারিয়ে কবি যে গত দু'মাস কী মর্মপীড়ায় ভুগছেন তার কিছুটা আমরা আঁচ করতে পারলেও একাকীত্বের বেদনা, প্রিয় বিরহের বেদনা তিনি কীভাবে মোকাবিলা করছেন তা তিনিই ভাল জানেন।


স্মৃতির দুয়ারে বলো যায় কি আগল দেয়া
"ভুলে যাবো" বলে যতই ভাসাই খেয়া?
আজও কবি তাই ফিরে ফিরে চায়
নিঃসীম বেদনায় আঁখি ডুবে যায়!


আশার কথা, যেভাবেই হোক প্রাজ্ঞ কবি সে ভয়াবহ সময়টি পাড়ি দিয়ে ক্রমেই সৃষ্টিশীলতায় মনোনিবেশ করে মনোকষ্ট লাঘবের প্রয়াস পাচ্ছেন। একাকীত্বের বেদনা, প্রিয় বিরহের কষ্ট ভোলাতে কলম বড় বেশি আপন। দীর্ঘ যাতনার পর কবি সেই অমোঘ সত্যটাকেই কাজে লাগাচ্ছেন। কিন্তু তাই বলে ভোলা কি যায় হৃদয়ের টুকরো হারানোর বেদনার কথা? তাইতো বারে ঝরে পড়ছে শূন্য বুকের হাহাকার।


কবি দিব্যচোখে দেখতে পাচ্ছেন; ওই তো খুকির শূন্য দোলনা এখনো বাতাসে দুলছে। চম্পা বেলার গন্ধমাখা খুকির গায়ের গন্ধ এখনো বুকে লেগে আছে, তা-ই স্মৃতির কম্পনে বারবার অনুভবে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে। এখনো কবি আনমনে ছোট্ট খুকির এলোমেলো পায়ের মিষ্টি ধ্বনি শোনে ফিরে চাইতেই ধোঁকা খেয়ে যান। বিভ্রম কাটিয়ে আবিস্কার করেন - "সে তো আর নাই"!

ঝরা বকুলের কান্নায় ভরে কাটে কবির সাঁঝবেলা। স্বপ্ন হয়ে ভোলাতেই বুঝি দুষ্টু খুকি মায়ের সাথে খেলা করে যায়! কিন্তু হায়, সবই শূন্য হাহাকারে কোলের 'পরে পড়ে থাকতে দেখেন - শীতের শুষ্ক উদাসী বাতাসে ভেজা বেদনায় কাতর রাতের আধখানা চাঁদ।


নিয়তি - বিধি কী নির্মম! তাই তার কাছে বুকভাঙ্গা কবির আকুল জিজ্ঞাসা -


"বিধাতা তুমি বলবে সত্য, দংশিত আমি শোকে।
দুঃখের পরশ এতটুকু কি, ছোঁয়নি তব বুকে।"


পৃথিবীতে আজো কতো রঙের খেলা চলছে, সুখ ঝরছে? তবু কেন বিধি তাকে সেই সুধা থেকে বঞ্চিত করে দু'চোখে দুঃখের আঁধার ঢেলে দিয়েছে? নিঠুর প্লাবনে হৃদয় ভাসিয়ে বুকের মানিককে ছিনিয়ে নিয়ে তাঁর জীবনে বইয়ে দিলো আজ ব্যথার শ্রাবণ?


যে সুখ সুধায় রোজ প্রভাতে আঁচল ভরে শিউলিসুখ কুড়াতে পারতেন, কেন বিধি সেই সুখ ছিনিয়ে নিয়ে তাঁকে আজ নিঃস্ব করে দিলো? স্বপ্নে গাঁথা কল্পনা বিলাস সবই ধূলায় মিশে গেলো? খুকি নেই তবু আজো স্বপ্নশূন্য চোখে মা চেয়ে আছেন দিগন্তের পথের পানে। পরক্ষণেই কবি বাস্তবে ফিরে আসেন - হায়, খুকি তো নেই। এই পথে সে আর ফিরবে না। দু'টি পথ আজ সত্যিই তো দুই মেরুতে বিলীন হয়ে গেছে। (এইটুকু লিখতেই নোনাজলের প্লাবন আর রোধ করতে পারিনি। ঝাপসা চোখ বারবার মুছে থামতে হচ্ছে)।


কামনা করি, আবেগ বিহ্বল কল্পনার রাজ্য থেকে কবি দ্রুত বাস্তবে ফিরে আসুন।
যত দ্রুত পারবেন কবির জন্য ততই মঙ্গল। সেই শুভ কামনা জানিয়েই আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। ভাল থাকুন কবি, সৃজনশীলতায় মেতে বুকের জ্বালা মুছুন।