বাংলা-কবিতার নবীন সদস্য কুষ্টিয়ার মিয়া সাইফুদ্দিন, ৫ মাস হলো এখানে যোগ দিয়েছেন। আজ ছিল তাঁর ১০০তম কবিতার পোস্ট। এ যাবত তাঁর কোন প্রকাশনার তথ্য নেই পাতায়। আজই প্রথম তাঁর কবিতা পড়ি আর ভাল লাগায় মন্তব্য লিখতে গিয়ে আলোচনাই লিখে ফেললাম। প্রথমেই নিচে তাঁর মূল কবিতাটি তুলে ধরছি:


আমার ঘর
- মিয়া সাইফুদ্দিন


আমার ছিল যখন পরিপূর্ণতার অভাব
আমার ঘরে ছিল তাঁর বসবাস,
নিত্য আনাগোনা, ছিল অত্যন্ত সদ্ভাব
নিত্য হতো ভাব বিনিময়।
তার ঘরে আমি যেতাম, সে থাকত আমার ঘরে।
নিশ্ছিদ্র আমার ঘরে সদাই থাকতো পাহারাদার,
তারপর যখন আমি পূর্ণতা পেলাম
আমার ঘরে তাঁর বসবাস সহ্য হলোনা সবার।
আমার ঘরেই তৈরি হলো বিদ্রোহী বেশুমার,
হিতাকাংখি আমার ঘরের পাহারাদার
বিদায় নিয়েছে একে একে, সইতে না পেরে
তাদের অত্যাচার।
ঘরছাড়া হয়েছেন তিনি, যে ছিল আমার
আমি ছিলাম তার।
অপদখল ঘরে আমি আর ছয়জনের নতুন বসবাস
নতুন অধিকার, শয়তান পাহারাদার।
এখন আমি আর যাই না তাঁর ঘরে,
হারিয়েছি আমি তাঁকে ডাকার অধিকার।
জানিনা তিনি আছেন কিনা, মুখ ফিরিয়ে
চরম ক্ষোভে না নিদারুণ অভিমানে।


এবার আলোচনা করা যাক -


কবি মানুষের সাথে তার স্রষ্টা তথা পালনকর্তার সম্পর্কটি নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। মানুষের সাথে স্রষ্টার সম্পর্কটা কেবল প্রভু-ভৃত্যের মতই নয় বরং বন্ধুর মত। এক বন্ধু অপর বন্ধুকে যত স্মরণ করবে বন্ধুত্ব তত গাঢ় হবে। আপদে-বিপদে বন্ধু বন্ধুর সহায়তা করবে। ইংরেজিতে একটি প্রচলিত প্রবাদ আছে: 'Out of sight, Out of mind' এখানেও যেন ওই কথাটিই প্রযোজ্য।


স্রষ্টা তাঁর প্রতিটি সৃষ্টিরই পালনকর্তা। যে তাঁকে স্মরণ করে না তিনি তাকেও লালন করেন। তবে সচরাচর এমনটাই দেখা যায় যে, অপূর্ণতা তথা অভাবের দিনে আর বিপদে পড়লেই মানুষ স্রষ্টার শরণাপন্ন হয় বেশি আর মনে হয় তখন স্রষ্টা তাঁর পোষ্যকে দেখাশোনা করেন (আসলে স্রষ্টা তাঁর পোষ্যকে সবসময়ই দেখাশোনা করেন)। তখন পোষ্য বান্দা যেমন তাঁর উপাসনা করে, গুণগান গায়, তাঁর ঘরে যায়, স্রষ্টাও খুশী হয়ে তার ঘরে আসে। তখন একে অপরের প্রতি ভালোবাসা থাকে। স্রষ্টাও রক্ষাকারী হয়ে বান্দার জিম্মদারী করেন।


মানুষ যত স্বয়ংসম্পূর্ণ আর স্বাবলম্বী হতে থাকে ততই স্রষ্টার উপর নির্ভরতা কমে যায়, ক্রমান্বয়ে স্রষ্টা থেকে সে দূরে সরতে থাকে। এভাবেই যেন একসময় একে অপরকে ভুলে যায়, বন্ধুত্ব হারায়। তারপর এমন এক সময় আসে যখন বান্দা তার প্রভুকে ডাকার অধিকার ও হারিয়ে ফেলে। প্রভু যেন তখন তাঁর বান্দাকেও ভুলে যান। বান্দার কোন ডাকে আর তিনি সাড়া দেন না। জাগতিক অভিধায় আমরা বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে যেমনটা দেখে থাকি।


কবিতায় কবি আল-কুরআনের বাণীর যথার্থ প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। হতাশ হয়ো না, পরম হিতাকাঙ্ক্ষীর হিত বর্ষিত হবেই তাঁর বান্দার উপর।


কাব্যিকতায় উৎকর্ষ না হলেও কবিতাটির আধ্যাত্মিক ভাবধারার মূল্য অপরিসীম! কবি, মনের কথাগুলো সাজিয়ে সুন্দরভাবেই প্রকৃত বিষয়বস্তুটা তুলে ধরেছেন। বানান মোটামুটি শুদ্ধ। কেবল একটি বানানেই অসঙ্গতি ধরা পড়েছে।
>>`হিতাকাঙ্ক্ষী`হবে মনে হয়?


সুন্দর ভাবধারার এই কবিতার কবিকে ৫ মাসে তাঁর শততম কবিতা পোস্টের জন্য অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই।