একটা সফল কবিতার জন্ম দেয়ার আনন্দ যেন বা সদ্য-প্রসবা মায়ের তৃপ্তির মতোই, তেমনি কবিতাকে মলাটবদ্ধ করে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করাও যেন একজন সফল বাবার তৃপ্তি বিশেষ - যিনি জন্মের পর সন্তানকে লালন-পালন করে সুমানুষ করার পর তাকে সংসারী করতে বিয়ে দিয়ে কর্তব্যকর্ম সুসম্পাদনের পরিতৃপ্তি পান। রূপকথার গল্পের উপসংহারের মতোই – “অতঃপর উহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল”...


সারাজীবন সাহিত্যের প্রতি বিশেষ ঝোঁক থাকলেও কোনদিন ভাবিনি নিজে কিছু করবো। কিন্তু এই বাংলা কবিতার আসর আমাকে সে ঘাটে নামিয়েই ছেড়েছে। সারাজীবন ডায়েরীর পাতায়, রাফখাতার মলাটে, ঠোঙার গায়ে বা যেথায় সেথায় দু’চার লাইন কবিতা লিখলেও সে সবের যেমন সুসংবদ্ধ কোন গ্রন্থনা ছিল না তেমনি ভাবিনি তা আবার দুচারজন পাঠক পড়বেনও! ভালমন্দ মন্তব্য করবেন (যা একজন লেখককে লেখার উদ্যম যোগায়) তার উপর ঝক্‌ঝকে মলাটে আবদ্ধ করে গ্রন্থাকারেও প্রকাশ। ওরে বাবা, এ যে মেঘ না চাইতেই জল! বাংলা-কবিতা আসরকে ধন্যবাদ – এরই কল্যাণে আসরের ভিতরে ও বাইরে আজ কিছু মানুষ আমাকে সাহিত্যের মানুষ হিসাবে চিনছেন, আমার লেখা পড়ছেন। এ আমার পরম পাওয়া।


গত ছয় সাত বছর যাবতই নানান ব্লগ-সাইটে লেখালেখির কিছু ফসল আবেগের বশে প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশ করি ২০০৯ সনে। সেই প্রকাশনার তিক্ততায় তারপর বন্ধই ছিল প্রায়। মাঝেমধ্যে নানান সংকলনে দু’চারটি লেখা প্রকাশ ছাড়া মুদ্রণাকারে আর কোন লেখা প্রকাশের উদ্যোগ নেইনি। ভালমন্দ যা-ই হোক ইতোমধ্যে বেশ লেখা জমেও গেছে। অনেকদিন ধরেই ভালো প্রকাশক খুঁজছিলাম, অবশেষে পেয়েছিও।


এবছর একুশের বইমেলার আগে নেয়া আসরের কবি শিমুল শুভ্র’র যৌথ প্রকাশনার উদ্যোগটি (তাঁর মায়ের অসুস্থতার কারণে) থেমে গেলে অপর কবি নাজমুল হুদার সম্পাদনায় ও আমার পৃষ্ঠপোষকতায় খুব অল্প সময়েই (অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে) ‘মানুষজন’ থেকে প্রকাশিত ‘কাব্য মঞ্জুষা’ সংকলনে আসরের কবি হাসান ইমতি, কৌশিক আজাদ প্রণয়, মুহাম্মদ রুহুল আমীন, আল মামুন প্রমুখের পাশাপাশি আমারও কিছু কবিতা স্থান পায়। সময় স্বল্পতায়ও গ্রন্থ এবং সেবার মান ভালো মনে হওয়ায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও আবার প্রকাশনার উদ্যোগ নিই এবং অবিশ্বাস্য কম সময়ের মধ্যে নয়নাভিরাম ঝক্‌ঝকে মলাটের সুদৃশ্য ‘সময়ের বাওকুড়ানি’ বইটি আজই হাতে পেলাম। প্রকাশককে ধন্যবাদ।


বাংলা-কবিতার আসর এবং কবি বন্ধুদের কাছে আমি ঋণী। তাই, কাব্যগ্রন্থটি আমি  বাংলা-কবিতা আসরের কবি বন্ধুদের উৎসর্গ করেছি।   বইটির প্রচ্ছদ করেছেন আমাদের সাহিত্যের কিংবদন্তী প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ ও ড: জাফর ইকবালের ছোটভাই ‘উন্মাদ’ সম্পাদক ও রম্য লেখক কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব। তিনি বাংলা-কবিতা ডট কম সম্পাদিত ‘শতরূপে ভালোবাসা’র মোড়কও উন্মোচন করেছিলেন। এই সুযোগে বন্ধু আহসান হাবীবকেও ধন্যবাদ জানাই।


এটি আমার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ। প্রকাশকের নিষ্ঠায় ও আগ্রহে সন্তুষ্ট হয়ে আজ তৃতীয় গল্পগ্রন্থ ‘নরকের ফোন-কল’ ও চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ ‘বাইনারি সুখের পিদিম’ প্রকাশনারও উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করছি আগামী মাস দুয়েকের মধ্যেই সে দুটি বইও আলোর মুখ দেখবে। আগামী বইমেলায় বই তিনটি ‘এবংমানুষ’ ও ‘মানুষজন’ প্রকাশনীর স্টলে পাওয়া যাবে।


এই সাইটে ইমেজের অপশন না থাকায় বইটির কোন ছবি বন্ধুদের দেখাতে পারছি না। মন্তব্যের ঘরে ফেসবুক লিঙ্ক দিলাম, কেউ চাই সেখানে মলাটের ছবিটি দেখতে পাবেন। সবার জন্যে অফুরন্ত শুভ কামনা ও ভালোবাসা -