অকালপ্রয়াত কবি শামীম কবিরের ডায়েরি থেকে :-
'কবিতা লেখা আমার কাছে বিশেষ কিছু ব্যাপার মনে হয় না। কেউ ঘুড়ি ওড়ায়, কেউ কাঠ চাঁছে, কেউ রান্না করে, কেউ খায়, কেউ হাগে ও মোতে, কেউ গড়গড়া দ্যায় এরকমই বা কেউ পদ্য ল্যাখে। মানুষের মৌলিক ঘটনাগুলোর একটি। আসলে শিল্পটিল্প নিয়ে কচকচানি আমি সহ্য করতে পারি না বলেই লোক সমাগম থেকে দূরে থাকি। তো পুরো ব্যাপারটাই খুব সাধারণ ও সহজাত এবং তা আবহমান গ্রন্থি থেকে গ্রন্থিতে ও বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে বিরাজমান। সবকিছু মিলিয়ে একটা ইনডিভিজুয়্যাল টোটালিটি তৈরি হয়। বা বিষয় ও উৎস নিরপেক্ষ। আর মানুষ ঘটনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। সে তাতে নিমজ্জিত থাকে। সে পারে কেবল নিজের ইন্দ্রিয় ও মানসে একটা প্রতিরূপ কল্পনা করতে। মানুষ যে বাস্তবতার মধ্যে প্রবাহিত তা নিরবিচ্ছিন্ন এক matter of fact.  আর সে শুধু কতকগুলো কাকতালীয় প্রতিরূপ গড়ে তুলতে পারে এবং প্রক্ষেপিত হ 'লে এইভাবে matter ও anti matter। প্রক্রিয়ায় বিদূরিত ও ক্রমান্বয়ময় এক ধ্রুব কল্পলোক লাভ করে। এতে সবকিছুই উদগারিত ও বিচ্ছুরিত হয়ে আসে। এইভাবে গড়ে ওঠে সভ্যতার ইটগুলি আর এই প্রবণতা এমনকি পরমানু পর্যায়ে প্রকাশিত। ক্রমান্বয়শীল ক্ষণসমূহের সোচ্চার মোজাইক বিম যা লম্বিত ও প্রলম্বায়িত। খুবই মোমেন্টারি ফ্যাক্ট নিয়ে নিয়ে আমাদের ম্যাটার অব ফ্যাক্ট ক্রিয়াশীল। ফলে মানুষ যা লাভ করে তা সবই আপাত ও গড় ফলাফল সামগ্রিক। বিষয়টি এক্সট্রিম। আর আমি একটি মাত্র প্রশ্ন 'আমি কী? ' জানি না জন্যেই এটা সেটা করি লিখি ইত্যাদি।'


আসলেই তো । কেন লিখি ? আমার এই যে অস্তিত্ব এটাই তো শেষমেশ আমাকে লিখতে বাধ্য করে । অস্তিত্বের যন্ত্রণা থেকে আসে মুক্তির প্রেরণা । সেই কাঙ্ক্ষিত মুক্তি হয়তো কবি লাভ করতে পারেন না সারা জীবন ধরেও , তবু এই প্রক্রিয়া চলমান । অনেকদিন এমন হয়েছে , কোন শব্দ মাথায় নেই , কিন্তু ভেতর থেকে কে যেন বলে দিচ্ছে কিছু অন্তত লেখা চাই । তারপর থিম , দৃশ্যকল্প এসবের গায়ে শব্দ দিয়ে বানানো গেল কবিতা নামক কিছু একটা । এই যে আনন্দ , সেটা একই সাথে সৃষ্টি এবং আত্মতুষ্টির । গভীরভাবে ভাবলে এই আনন্দ অনেকটা অস্তিত্বের সূচনা কিংবা বিনাশপর্বের মতো । একটা ধাক্কা , যা আমার প্রান্তিক চিন্তাকে তুলে আনে আপাত শ্রুতিমধুর কিংবা একান্ত অনুভূতিপ্রবণ শব্দ দিয়ে ।


কুখ্যাত গুয়েনতানামো কারাগারে বসে পর্যন্ত বন্দীরা কবিতা লিখেছেন । কবিতা এসেছে পতিতার কলম দিয়ে । একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে একজন কবিকে লিখতে হয় তার কথাগুলো । এখানে অনুভূতি যেমন উঠে আসছে একেবারে ভেতর থেকে , তেমনি কোন অতীত স্মৃতি বা ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাও সাজানো থাকে চেতন , কখনো বা অবচেতনে । এখানে খণ্ড খণ্ড অস্তিত্বের গায়ে লেগে থাকা টুকরো টুকরো শব্দই নির্ধারণ করে দেয় চিন্তার গতিপথ । হয়তো সেটাকেই একটা স্বীকৃত নামে ডাকার প্রয়াস পাই । উদ্ভূত হয় কবিতা । প্রিয় কবি সিলভিয়া প্লাথের উক্তিটিই আমার নিকট সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মনে হয় লেখার ব্যাপারে ।


' ' I write only because there is a voice in me and that will not be still . '