গভীর নিশীথে শূনি কার ক্রন্দন কুলূ কুলু সেই ধ্বনি,
কাদে অনন্ত ঐ নীলাকাশ -বাতাসেতে কানাকানি।
তুমি ছিলে যবে মোর- আধার নিশীথের সাথী হয়ে,
বুঝিনি একদা আমার এ নয়ন কালে কালে যাবে ক্ষয়ে।
মিলিবে কখনো আমার এ পথ তোমার পথের তরে,
ভরিবে অশ্রু বাষ্প শুধূ মোর নয়নের পারে।
যখন ভাঙিত মোহনিদ্রা মোর রাতের আধার হেরি,
তোমার স্রোতের ছলছল ধারায় হৃদয় উঠিত ভরি।
কতশত নিশী জেগেছি আমি তোমার সে পথ চেয়ে,
দেখেছি কত পাল তোলা নাও যাচ্ছে নেয়ে বেয়ে।
যখন রাতের ডাহুক পাখিরা ঝাপটাইত শুধূ ডানা,
ডাকিতে আমারে দু বাহু বাড়ায়ে না শুনি কোন মানা।
বেদনার সকল বারি ধারা যখন আমার আঁখিপাতে,
ধুইয়ে দিতে লোনা জলে তুমি তোমার পুন্য স্রোতে।
যখন ধরনী ক্লান্ত হয়ে ঘুমের মায়াডোরে,
ভারি হতো নিশাস আকাশ বাতাস বিষাদের মহাভারে।


তুমি ছিলে স্বপনচারিনী রাত্র জাগার সাথী,
হৃদয় কাননে ভরিতে যেন কোন সে অমরাবতী।
সৃজিতে কত নব ইন্দ্রজাল আর মায়ার মোহতান,
শুনিতাম  কান পেতে ঘুম হারা রাতে তোমার কলতান।
গভীর রাতে দেখিতাম স্বপ্ন আমার আখির পাতে,
ভুলিয়া সকল আধারের রেখা অরুন আলোক সাথে।
ঝিলিমিলি আলোয় দেখেছি তোমারে দেখেছি আধার ঝড়ে,
যে আধারের সাঝে মোর গেহ খানি কঠিন নড়বড়ে।
যে তৃষা জাগায়ে ডাক বারে বারে তোমার দুকুল পারে,
অবারিত আখি চেয়ে চেয়ে রয় নিদারুন অনাহারে।


তোমারে দেখে কাটে মোর শত -শত জনমের তৃষা,
ঘুচাও আমার দুনয়ন ভরি আধারের অমানিশা।
একদিন আর হবে নাক দেখা হে কপোতাক্ষীর ঢল,
কুলে কুলে আর না শুনিব আমি তোমার ছলছল।
তোমার জলে দেখিব না আর জল শুশুকের খেলা,
দেখিব শুধু উদাস নয়নে পশ্চিমে ডোবা বেলা।



আধারের পরে আধারি জমিবে নিকষ কালো মেঘে,
মৃত্যু নামক অমানিশার রঙ ছুটিবে উর্ধ্ব বেগে।


আর কভু হবে না আলাপন এই অলস বিকেল বেলা,
দু চোখ ভরি দেখিব সেদিন দুরে ভেসে চলা ভেলা।
নিশুতি রাতে বাজিবে না বাঁশি সেই নব মোহতানে ,
ভুলিব না তোমারে দেখি বারে বারে নব জীবনের গানে।
পড়িবে কি কখনো সেই আলাপন তোমার আমার সনে,
গাহিতাম গান নিরজনে বসি তোমার স্রোতের সনে।
সেদিন গেছে ঐ সুদুরে তারে স্মরি দিবারাতি,
মুছে যায় জীবনের রং সাঝে নেভা প্রদীপ ভাতি।
তোমার বালুকাবেলায় বসি বিকালের সোনা আলো ,
মেখে নিতাম এই মলিন গায়ে কত যেন বেসে ভালো।
নিশুতি রাতে কল কল জলে বাতাসের জল কেলি ,
দেখিতাম তোমারে উদাস নয়নে আপন চক্ষূ মেলি।
জানিনা তোমারে ছেড়ে ঐ আকাশে কেমনে কাটিবে দিন ,
এত ভালোবেসে তোমার পরশে কেহ কি বাজাবে বীণ?
ধুসরিত ধুলি দিবে জলাঞ্জলি তোমার শুকনো চরে,
কেহ কি তোমায় বাসিবে ভালো এতটা আপন করে?


চেয়ে দেখ কপোতাক্ষী মেলে দুই আখি পশ্চিমে ডোবা বেলা,
অস্তাচলে বসি দিনমনির আলো একেলা  করিছে খেলা।
দিবসের যত রঙ মাখা মেঘ আবিরের রঙে নেয়ে,
পাল তুলি এক নায়ের মাঝি একেলা যাচ্ছে বেয়ে।
আশা না ফুরিল ডুবিল বেলা সাঙ্গ হলো খেলা,
পুবের আলো পশ্চিম কোনে নিভৃতে পথচলা।


আর কি কখনো হবে হে দেখা ? যখন উর্ধ্বলোকে
চেয়ে রব আমি তোমার ঢলে আমার পাথর চোখে।
দুর দেশে বসি রাতের তারাদের সনে কব নিরজনে কথা,
সে কথাতে কি আর জুড়াবে আমার রিক্ত মনের ব্যাথা।
যখন নিকষ কালো মেঘে ভরে তোমার জলধারা,
চেয়ে রব আমি সে জলধারায় এমন আত্মহারা।
আষাঢ়ের ঘন  গুরু গুরু মেঘে তোমার য়ৌবন মাস,
চেয়ে চেয়ে দেখি আমার জীবনের কঠিন সর্বনাশ।



চেয়ে দেখ তুমি কৃষ্ণচুড়ার শাখে ভরে গেছে লালে লালে,
বুঝি নাই হে প্রিয় ভরে যাবে মোর গেহ কঠিন জঞ্জালে।
জীবনের সাতরঙে আর হবে নাক আর কোন কথাকলি ,
হয়তো একদিন তব জলরাশি আমারে যাবে ভুলি।
নব নব বাসর না রচিব আমি তোমার আখি দেখি ,
না পরাব আর তোমার হাতে আমার মায়া রাখি।
দখিনা সমীরনে না রচিব আর মায়ার ইন্দ্রজাল  ,
চেয়ে দেখ প্রিয় সমুখে দাড়ায়েছে নিষ্ঠুর মহাকাল।
ডাকিছে আমারে নতুন পথে যেখানে নেই দোসর ,
ভেঙে যাবে আজ আপনার হাতে রচেছিলেম যে বাসর।
পরানে পরানে বিদায়ের ধ্বনি নাই নাই যেন কিছু,
অমাবস্যার সেই আধারের মায়া লইয়াছে মোর পিছু।