ইদানিং কবরবাসিদের কথা জানতে ইচ্ছে হয়। কিভাবে তাদের
দিন কাটে, কি কথাবার্তা হয় তাদের মাঝে, ফেলে আসা দিন গুলো
নিয়ে তারা ভাবে কিনা বা আদৌ সে নিয়ে ভাবনারা তাদের তাড়া
করে কিনা। নাকি সারা দিনমান শুধু ঘুম আর ঘুম, জেগে জেগে
থাকা। আমি তাই নির্জন কবরের পাশ ঘেঁষে চলতে চলতেই কান
খাড়া করে থাকি। ভুলে যাই তখন মধ্য দুপুর না রাত্রি, ভুলে যাই
তখন অন্ধকার প্রভাত না ঘোর সন্ধ্যা। আমাকে কোন কিছুই ভীত
করে না। বরং নিজেকে এক টুকরো কবর ভেবে হারাই ভিন্ন জগতে।  


যখন দেখি বুভুক্ষু বাঘ- শিকারের জন্য নখরহীন কোন হরিণের
পেছনে ছুটে, তখন উর্দ্ধশ্বাসমুখি হরিণ কি কথা বলে, অথবা কি কথা
বলে বাঘ তাকে বাগে আনতে চায়। দেহে প্রান থাকতেও যে প্রানি
এড়াতে চায় তার মৃত্যু তখন কাকে কাছে ডাকে, কার সাহায্যের জন্য
সে চিৎকার করে। সে চিৎকারের শেষে রক্তাক্ত গ্রীবায় যে গোঙ্গানি
সে কষ্টের ভাষায় কার নাম উচ্চারিত হয়। আমি বনের মধ্যে অথবা
উন্মুক্ত পাঁথারে একলা এক গাছ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। বুভুক্ষু বাঘের
মুখের আধার হয়ে যাব জেনেও আমি বাঘ না হতে চেয়ে ভাবি আমি
যদি এখন হরিণ হয়ে যেতে পারতাম তাহলে কি বুঝতাম বাঘের মন।


কখনও কখনও চঞ্চূতে চঞ্চূ ঠেকিয়ে পুং পাখি আর স্ত্রী পাখি অনেক
আহ্লাদে তরু শাখে শিহরণ জাগায়। তখন তাদের সেই আদরের ভাষা
জানতে বড্ড ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে শিশু পাখিদের বাসায় রেখে স্ত্রী
পাখি যখন আহারের খোঁজে বনের শাখায় শাখায় ডানা মেলবে বলে
হাওয়ায় ভাসায় শরীর, তখন কি- বলে যায় তার সন্তানদের? তারাও কি
বলেঃ হতে পারে এ দেখাই শেষ দেখা, নাকি একটু সবুর কর এই যাচ্ছি
আর আসছি খাবার নিয়ে। কত প্রতিক্ষা, কত কিচির মিচির ডাক, আমি
ওই শিশু পাখি হয়ে যাই মুহুর্তে তাদের কথা শুনব বলে। অথচ বৃষ্টি ঝড়
এসে ভেংগে দেয় বাসা, মুহুর্তে শিশু পাখি পরিনত হয় পিপড়াদের খাদ্যে।


তুমি কাঁদলে তার ভাষা বুঝি, তুমি হাসলেও তার ভাষা বুঝি, তুমি যদি
স্পর্শ কর তাতে অব্যক্ত তার হাজারও ভাষা বুঝি আমি। কিন্তু কিইবা
হল তাতে! ভাষা বুঝলেই বা কথা শুনতে পারলেই কি আর সব কিছুর
সমাধান হয়? সেই তো আমাকে ছেড়ে তুমি চলে গেলে বহুদূর যেখানে  
কবর আছে, বন আছে, পশু-পাখি আছে। ভালবেসে অনেক বেশী কথা  
শেখার পরেও কি ভালবাসা টেকে? যদি না মুখের ভাষা থেকে মনের
ভাষায় লেখা হয় ভালবাসার নাম। আর যদি না তা মুখে এসে অনবরত
কথায় কথায় ভরে তুলে বাতাসের শরীর, বনের মন, আকাশের স্বপ্ন।
আমি তাই আমাকে এক টুকরো কবর ভেবেই এখন বেঁচে আছি প্রতিদিন।  

২৫শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯।