সড়ক পরিবহনের চৌড়া রাস্তার শেষ
মাথায় উঁকি দেয়া পাথার পরিবেশ
এখন বরষার জলে টঁইটম্বুর,
ময়নার বাপের বাড়ি অনেক দূর
কিছুটা পথ নৌকায় যাওয়া যায় আর
বাকিটা পথ কাঁচা পাকা অসহনীয় ভংগুর।


খগেন মাঝির আশ্বাস পেয়ে উচাটন ময়না
বাড়তি পটলা বাঁধে যাবে বন্যার ওপারে,
হোকনা নৌকা কিংবা ভংগুর পথ,খাবে থেকনা
তবুও তো কাছে পাবে ভাই বোন মা আর বাবারে।


বিয়ের আগে একটুও বুঝেনি আহ্লাদী ময়না
কষ্টের হোক তবু কেন বাপের বাড়ির এত কদর,  
শ্বশুর শ্বাশুড়ি তো ‘মা’ ছাড়া কথাই কয় না
তবুও কেন ভেতরে ভেতরে অভাব হয় মায়ের আদর।


মনে পড়ে ছেলেবেলায় একত্রে বেড়ে উঠা  
খেলার সাথিদের কথা রাত্রির কোন অবসরে,
স্মৃতির ক্যানভাসে ফুটে গ্রামীন সুখের টেরেকোটা
এক্কা-দোক্কা, কানামাছি, গোল্লাছুট কাছে আসে সরে।


শৈশবে পুতুল নিয়ে পুতুলের বিয়ে ভেঙ্গে গেলে পর
অচেনা অবুঝ কান্নায় ভাসত ময়নার চোখের কোন্ ,  
নিজের বিয়েতে বাপের বাড়ি ছেড়ে আজ কতটা বছর
বাবা মা’র জন্য কান্নায় তার ভাসছিল কি অবুঝ মন?  


বন্যায় তড়পানো জলের মতই দুই চোখের ভাসা জলে
ডুবে গেছে বুকের নম্র আলগা অনুভূতির জমিন,
এবারে বন্যার উতলা জল যখন বাড়ির পায়ের তলে
তখন স্বপ্ন যেন হোয়ে উঠেছে আরও গন্ড গ্রামীন।  


কি এক উত্তেজনায় সারা রাত চোখে ছিল না তার ঘুম
বাঁধা টোপলা সে খুলেছে আবার বেঁধেছে যে কতবার,  
সারা শরীর ও মনে লেগেছিল যেন আনন্দের অথৈ ধুম
জানালায় চেয়ে থেকেছে অপলক কখন কাটছে আঁধার।


“কই গো ময়না- বেলা ফরসা হল” বলে খগেন মাঝি
আঙ্গিনায় দাঁড়িয়ে ডাক দিয়েছে যেই নিচু স্বরে একবার,  
অমনি ময়না গুছানো টপলা বুকে চেপে মরি কি বাঁচি
উর্ধশ্বাসে আটপৌরে ঘোমটা মাথায়- হয়েছে ঘরের বার।  


দুয়ারে লাগা পানশি নৌকার গলুই মাড়িয়ে খলপার ছৈ
এর ভেতরে বসতে বসতে ভুলেই গেছে সে জানে না সাঁতার,
ভুলে গেছে সকালে বিদায় জানাবে সুয়ামি আর একমাত্র সই
যার কাছে জেনেছে কেন ভাল লাগে সুয়ামি আর রাত্রির আঁধার।


কে জানত মনের কোনে উঁকি দেয়া সর্বনেশে ভাবনা
বন্যার উথাল পানির মধ্য পাথারে ঘটাবে এমন বিপদ
জলে ডুবে মুহুর্তে লাশ হোয়ে ফিরবে আদুরে ময়না
আজীবন বন্ধ হোয়ে যাবে বাপের বাড়ির বহুদূর পথ।


একদিন হয়ত এ পাথার চিরে মিলবে বহুদূরে ময়নার বাড়ি
নির্মানাধীন সড়ক পরিবহনের চৌড়া রাস্তার বাকী কাজ,
পিচঢালা পথে ছুটবে কত পরিবহনের রঙ্গিন ছোট-বড় গাড়ি
তার চাকার ঘর্ষণে ভাসবে ময়নার আহাজারি আওয়াজ।


হায় বাপের বাড়ির বহুদূর পথ কেন যে তাতে এত উত্তেজনা
কেন যে বাঁধ সাধে না কোন বাধা কোন দুঃসহ যন্ত্রনার প্রহর,
তাই বলে ভুলবে কেন-নিজে সাঁতার জানে না সোহাগী ময়না
এ যেন জীবন দিয়ে বলা কথা- সব উত্তেজনাই বড্ড হানিকর।