বসন্তের শরীর বলে কথা, তাই তো সব কিছুতেই কেমন মেদহীন দেখি।
দেখি পাতা ঝরা মেদহীন প্রকৃতি, মেদহীন আকাশ, বাতাস। এমন কি
প্রতিদিন শহরতলিতে আসা যাওয়ার পথে দেখি তুরাগ নদীর শরীরও
কেমন মেদহীন হয়ে পড়ে আছে ঠিক তোমার শরীরের মত। অথচ বর্ষায়
এর কোন পাড়ই খুঁজে পাওয়া যায় না। নদী, বিল, ধান ক্ষেত সব এক
হয়ে যায় দীগন্ত খোলা আকাশের সাথে ।


আজ বড্ড ইচ্ছে হোচ্ছিল নদীর পাড়ে গিয়ে কিছুক্ষন দাঁড়াই। ওর সাথে
খোলামেলা কিছু কথা বলি, ছুঁয়ে দেখি ঝিমুনি ওর শীতল জল । তাহলে
অনেকদিন পরে তোমাকে ছুঁয়ে দেখার মতই হয়ত এ মনে মিশ্র দরবারি  
জলসার সুখ খেলে যেতো। যা অনেকদিন মনের চোরা গলিতে বৃদ্ধ হোয়ে  
বসে আছে।


তুরাগকে দূর থেকে দেখে অনেক ভাবনায় কথা হলেও কাছে যাওয়া হয়না।
আসলে যাইনা। ভাবি তোমাকে ছুঁয়ে দেখার অনুভূতিটাই না হয় মনের
ভেতরে বাসা বেঁধে থাকুক। নদীকে ছুঁয়ে দেখতে গিয়ে যদি কখনও ভুলে যাই
তোমারঃ
- মেদহীন কলমি ফুলের উতলা শরীর
- নদীর শীর্ণ উচ্ছল জলের ধারার চেয়েও তোমার সুর্যমূখি হাসি
- আয়নাসম নদীর জলে মুখ না দেখে লজ্জার রংগীন আভায়
দেখা তোমার মুখ
- পাড়ে বাঁধা একলা ছোট্ট নৌকার মত তোমার কাজল কালো চোখ,
- আর বসন্ত বাতাসে নদীর জলে ছন্দায়িত ঢেউ না দেখে শিল্পির
তুলিতে আঁকা তোমার শরীরের কাব্যিক ঢেউ।


তাই ইচ্ছে হলেও আবার ইচ্ছে করেই তুরাগ নদীকে আর ছুঁয়ে দেখা হয় না।
দূর দিগন্তে চেয়ে ভাবি এ বসন্তে না হলেও কোন এক বসন্তে তুমি নিশ্চই
ফিরে এসে বলবে আমাকে ছাড়া কেমন ছিল তোমার বসন্তহীন দিন। কেমন
করে মেনে নিয়েছ গ্রীষ্মের তাপদাহ, ভিজেছিলে কিনা বর্ষার প্রথম বৃষ্টিতে,
শরত-হেমন্তের কাশ বনে শুভ্রতার আভায় ভাসতে ভাসতে শীতের কাঁপনে
ঝরে পড়েছিলে কিনা বসন্তকে পাওয়ার জন্য মেদহীন বসন্ত ভালবাসি বলে!


এ ভাবেই দিন মাস বছর চলে যায়। সময়কে কি কেউ আটকাতে পারে বল?
হাঁ বেঁচে থাকলে সময়ের পরিক্রমায় চুল পাকবে, দাঁত পড়বে, শরীরের ত্বক
ঢিলা হয়ে আসবে, ন্যুব্জ হবে দেহ কাঠামো। তাই বলে কি ভালোবাসা কমে
যাবে? যতই বুড়ো হোই না কেন তুরাগের বুকে যেমন জল বয়ে যায় বলেই
নদী ভেবে তার কাছে যেতে খুব ইচ্ছে হয়, ঠিক তেমনি তোমার কাছেও।


১৬ মার্চ, ২০২০।