যখন অশ্বত্থের ছায়া ঢাকা, ঘুঘু ডাকা নির্জন উদাস দুপুরের কথা লিখতে চাই তখন দেখি এর চেয়েও অনেক সুন্দর করে সে কথা কেউ আগেই লিখেছেন। তখন মনে হয় এখন কি আর লিখা যাবে স্কুল ছুটি শেষে ফাগুনের ধুলো উড়া দুই ক্রোশ কাঁচা সড়ক মাড়িয়ে বাড়িতে ফেরার কথা। পথে একলা এক বরই গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে জিরুনোর কথা। উদাস করা একলা এক কাক অস্থির হয়ে  ডাকত আর দৃষ্টি কাড়ত সেই বরই গাছের ফাঁক গলে। সে বরই গাছের ডালে বসে চুপি চুপি যা ইচ্ছা তাই করতে পারত। কিন্তু আমি যে মানুষ, হোই না কেন একলা, হোই না কেন মাথায় করা শিমূল দুপুর।  কাকের স্বভাবই যেন কা কা জানান জানান দেয়া।


এ সময়টায় গাছে কোন বরই থাকে না। তবুও দৃষ্টির আড়ালে পাতার ফাঁকে দু’ একটা হয়ত  তখনও বর্তমান। একে তো পথের ধারের গাছ, কত পথচারী আর গ্রাম্য পাখির আনাগোনা। তার উপরে এখন ফাগুনও রুপ নিয়েছে ধূলো উড়ানো বসন্তে। চারিদিকে ঘূর্ণি বাতাসের খন্ড খন্ড মিছিল। হাওয়ায় চোখ বুঁজে আসে। শরীরে গ্রীস্মের ছোঁয়া, বিন্দু বিন্দু ঘামে ভেজা শরীর। কেমন রৌদ্র জলে বন্য এক শুন্যতার দুপুর। তাই দুদণ্ড বরই গাছের ছায়ায় থেমে যেত পা। হঠাত দেখি একটা টুসটুসে পাকা লাল বরইয়ের পাশেই বসে ডাকছে সেই কাক। এবার উদাস দুপুরের কথা ভুলে যাই, ভুলে যাই ক্লান্তি আর চোখে-মুখে  ধূলো উড়ানো ফাগুনের বাতাস। হাতে ঢিল, মুখে  লোল।


এমন অনেক কথাই মনে পড়ে অথচ লিখতে গিয়ে দেখি তা কবিতায় লিখা হয়ে গেছে। যেমনঃ বুক পকেটে রাখা প্রেমের প্রথম চিঠি, সাদা কাশফুল দোলা হেমন্ত নামে শীতলক্ষার বুকে, মন চাইছে তোমায় নিয়ে জ্যোস্না বৃষ্টিতে ভিজি। সজনে ডাঁটায় ডাল চালের কুমড়ো বড়িতে রেঁধে রেখেছি তোমার জন্য বাইল্যা মাছের চাকা, মুক্তি যুদ্ধ তুমি আমার ছেলেবেলা জিম্মি করা লাল  সবুজের ঘুড়ি, স্বধীনতা তুমি নতুন প্রজন্মের চোখে তথ্য সংকটে আড়াল করা ধোঁয়া, একুশ মানে বাংলার সাথে বাংলিশ কথার মিশেল। এমন অনেক মন আর মাথা ধরা কথারা এসে ভিড় করলেও ছন্দ আর চরণ সাজিয়ে কবিতা লিখা হয় না।


কি লিখব, ভাবি সব তো লিখা হয়ে গেছে। সব যেন কেউ লিখেই ফেলেছে। তবুও প্রকৃতি, জীবন, জনপদ, সুখ দুঃখ, হাসি কান্না, মান অভিমান নিয়ে ভাবতে ভাল লাগে। নির্জন রাতে কিনবা উদাস দুপুরে ভাবতে ভাবতে মনের অতলে গিয়ে দেখি কেবল প্রেম আর ভালবাসা শব্দটাই যেন স্বতন্ত্র আর অকৃত্রিম। এটা নিয়ে কোন অতৃপ্তি নেই, বিরোধ নেই, বিতর্ক নেই। তোমাকে ভালবাসি এ কথা ওযুত নিযুত লক্ষ কোটিবার বললেও কেন যেন মন ভরে না। আর সময়ের ব্যবধানে  পুরনোও হয় না তা কখনও। তাই তোমাকে নিয়ে মননের অনেক রঙে এখনও কবিতা লিখতে ইচ্ছে করে ভীষণ।  


০৪ মার্চ, ২০১৯।