ঘরেতে আর মন পড়ে না ইচ্ছে করে যাই সুদূরে
একঘেঁয়েমি কাটাতে তাই এলাম ক’দিন ঝান্ডি ঘুরে।
সঙ্গে ছিল প্রিয়া আমার আরও দু’জন কুসুমকলি
পাড়ি দিলাম লাগেজ নিয়ে মনকাননে গুঞ্জে অলি।


ছুটছে গাড়ি হাওয়ার বেগে উঠল গেয়ে শুচিস্মিতা
চিত্ত আজি উদাস বাউল গুপ্ত রাখি জানাইনি তা।
ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ওতেই আবেগ প্রকাশ করি
কণ্ঠ মিলাই মিতার সাথে ডুবিয়ো না আমার তরি।


গাড়ি থেকে জলদি নেমে ট্রেন ধরেছি শিয়ালদাতে
রিজার্ভেশন করাই ছিল ঘুম এলো সেই গভীর রাতে।
পৌঁছে গেলাম মাল স্টেশনে মিহির তখন পুব গগনে
সামনে আমি পিছনে তিন হর্ষ বিপুল সবার মনে।


মালবাজার আর গরুবাথান রইলো পড়ে পিছন পানে
নাচের তালে মাদল বাজে মোহিনী সুর আসছে কানে।
ইকোহাটের মস্ত তোরণ এবার ঝান্ডি পৌঁছে গেছি
পাখপাখালির কিচিরমিচির গ্রাম্যশিশুর চেঁচামেচি।


ঘন্টাদেড়েক লাগল মোটে ঝান্ডি যেন একটা ছবি
আকাশছোঁয়া গাছের সারি চিরহরিৎ এই অটবি।
পাহাড়-ধাপে কতনা হাট কাঠের তৈরি সুরম্য খুব
ডাহুক বলে ডাহুকিরে দিবি না রে এক্ষুনি ডুব।


ব্যবস্থা সব করাই ছিল শুকনো কাঠে আগুন ধরাই
স্নিগ্ধ শীতল পরিবেশে রূপের ছটায় হৃদয় হারাই।
হাত লাগালাম আমরা সবাই তৈরি হ’ল বারবিকিউ
শুভ্রবেশে পাহাড়চূড়া আকাশনীলে দারুণ ভিউ।


চতুর্দিকে রংবেরঙের নাম না জানা ফুলের শোভা
ভুবনভোলা ওদের হাসি কী অনুপম মনোলোভা।
চা-বাগানে খুশির ঝিলিক ললনারা ব্যস্ত কাজে
অক্ষিপটে বার্তা কীসের মুখ ফিরিয়ে লুকায় লাজে।


গীতঝোরার অপূর্ব রূপ প্রাণ ঢেলেছেন স্রষ্টা যিনি
বেজে ওঠে তার কাঁকনে রিনিকঝিনিক কিনিকিনি।
প্রকৃতি মা’র অরূপরতন শোভন লাভার ঝিকিমিকি
মনেস্ট্রিতে খুশির প্লাবন নৃত্যে রত হর্ষে শিখি।


রিশপ এবং লেলেগাঁওও হাত বাড়িয়ে ডাকল কাছে
ওদের ডাকে দিলাম সাড়া মুখ ফিরিয়ে দাঁড়ায় পাছে।
না গেলে যে কী ভুল হ’ত দেখার পরে বুঝতে পারি
পাহাড়-কোলে সবুজ-মেলা ঝাঁকড়ামাথা  তরুর সারি।


কীভাবে যে কাটল ক’দিন যেমন খুশি খাওয়াদাওয়া
এমনিভাবে কাটত যদি রইত না আর চাওয়াপাওয়া।
মানুষ যা চায় তা কি মেলে মেটে না তাই কখনও সাধ
মানবজীবন  জটিল অতি গতিবিধি নয় যে অবাধ।