সরস্বতী নদীর তীরে ঘনিয়ে আসে অন্ধকার
সুর্য গেছে অস্তাচলে কিছুই দেখা যায় না আর।
কাঠের বোঝা মাথায় নিয়ে ফিরছে গৃহে বালকগণ
কেউ বা ডেকে আনছে ধেনু হাম্বা ডাকে বারংবার।


স্নানটি সেরে শিষ্যরা সব বসল গিয়ে গুরুর পাশ
ধিকি ধিকি হোমের আগুন শুনবে এবার মধুর ভাষ।
আকাশ জুড়ে লক্ষ তারা ওরাও যেন শিষ্য আজ
চুপটি করে শুনছে ওরা আসছে ভেসে ফুলের বাস।


ঋষি গৌতম বলেন হেসে 'ব্রহ্মবিদ্যা শিখবে আজ
শান্ত চিতে শুনবে সবাই থাকনা পড়ে অন্য কাজ।'
শিষ্যরা সব চমকে ওঠে গুরুর পানে তাকিয়ে রয়
তখনই এক তরুণ এলো কটিতে তার মলিন সাজ।


অর্ঘ্য-ডালি সামনে রেখে প্রণাম জানায় ভক্তিভরে
‘ব্রহ্মবিদ্যা শিখব আমি’- কণ্ঠে যেন পীযূষ ঝরে।
‘কুশক্ষেত্রবাসী আমি জ্ঞানপিপাসু সত্যকাম
একটু কৃপা করুণ ঋষি কহে কিশোর মোহন স্বরে।


‘ব্রাহ্মণেরই আছে কেবল ব্রহ্ম-শিক্ষার অধিকার
কোন বংশ জাত তুমি গোত্রও বা কী তোমার ?’
‘গোত্র নাহি জানি তাত, শুধাব আজ জননীরে
প্রণাম করে ফিরছে ঘরে বাইরে ঘন অন্ধকার।


আকাশে নাই শশীর দেখা জোনাকিরাই পথ দেখালো
সাধ্য ওদের অল্প অতি কেমনে সরায় আঁধার কালো।
কোনোক্রমে ফিরল হেঁটে অন্ধকারে সত্যকাম
‘সাড়া তোমার পাইনে কেন’ এবার মা গো দীপ জ্বালো।


দাঁড়িয়েছিল মা জবালা কখন ফিরে পুত্র তার
বক্ষে টানি শুধায় তারে কেন এমন মুখটি ভার।
‘বল-না মা পিতার কী নাম কীবা বংশ পরিচয়
ব্রহ্মবিদ্যা লাভে শুধু ব্রাহ্মণের যে অধিকার।

অনুধাবন করেই মাতা বলল পুতে 'শোন রে বাপ
সত্য কথা বলছি তোরে করবো না আজ অপলাপ।
ভর্তৃহীনা এই জবালাই জানবি রে তোর জননী
গোত্র বংশ কিছুই তো নেই করিস না রে মনস্তাপ।'


নবীন রবি উঠল প্রাতে উদ্ভাসিত চতুর্দিক
বটবৃক্ষের তলে গুরু স্নেহবর্ষণ আন্তরিক।
ঘিরে বসে কিশোর তাপস ধ্বনিত হয় বেদের গীত
পাখিরা সব গাইছে শাখে কুহু কুহু ডাকছে পিক।


শান্তচিতে সত্যকাম গুরুর দিকে এগিয়ে যায়
ঋষি-পদে প্রণাম করে অন্তরে সে শান্তি পায়।
শুধান তাঁরে ঋশিমশাই, ‘এবার বল গোত্র কী?’
‘গোত্র কোনও নেইকো আমার বলেই ঋষির পানে চায়।


‘পিতার নাম নেইকো জানা আমি হলেম ভর্তৃহীনা’
এই কথাটি বলল আমায় ‘জননী তোর দারুণ দীনা’।
টিটকারিতে ভরিয়ে দিল অবোধ যত শিষ্য সব
সত্যকাম স্থির অচঞ্চল বাজছে হৃদে রুদ্রবীণা।


‘অব্রাহ্মণ নহ পুত্র সত্যকুলজাত তুমি
দ্বিজোত্তম নিষ্কলঙ্ক কহিলেন কপোল চুমি।
জড়িয়ে ধরে বলেন ঋষি পুণ্য নাম সত্যকাম
ধ্রুবতারার মতো জ্যোতি ধন্য ভারত মাতৃভূমি।