এই অবেলায়
অজিত কুমার কর


অপরিসীম দৈন্যদশা কেমন করে বোঝাই তাঁরে
দু'বেলা ভাত জুটত নাকো কাটত প্রায়ই অর্ধাহারে।


অনুরাগের সেই চাহনি সহজে কি ভুলতে পারি
নামবে বুঝি জলপ্রপাত দু'চোখভরা রুদ্ধ বারি।
সামনে উঁচু বাধার প্রাচীর
বিঁধছে গায়ে হাজারো তির
পাইনি খুঁজে পথের দিশা কুজ্ঝটিকার অন্ধকারে।
সেসব কথা আজ অবেলায় পড়ছে মনে বারেবারে।


শীর্ষ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখি হাতছানিতে আমায় ডাকে
ঘুমের ঘোরে বিনিদ্র মন কত রঙিন চিত্র আঁকে।
এক লহমায় যায় সুদূরে
পক্ষী যেমন বেড়ায় উড়ে
যেখানে মা প্রহর গুনে পানায়ভরা পুকুর ধারে।
মাথার ওপর বিরাট বোঝা কেমন করে নামায় তারে।


বুকের ভিতর কী যে জ্বালা ক'জনা তার খবর রাখে
লক্ষে সদা অটল থাকি পড়ে গেলেও ঘোর বিপাকে।
দুঃখী ছেলের দুখিনী মা
চক্ষে ঊষার অরুণিমা
যতই দূরে যাকনা তরি ভিড়বে গিয়ে কোল-কিনারে।
এ সংসারে মা'র অবদান সে কি কভু ভুলতে পারে।


যা পেয়েছি এই জীবনে সবটুকু যে মা'র অবদান
রক্ত-মাংস, অস্থি-চর্ম, চক্ষু-কর্ণ, ক্ষুদ্র এ প্রাণ।
সিক্ত আমি সুধারসে
সর্বদা মা পাশে বসে
তাঁর দেখানো পথেই চলি স্মরণ করি সদা তাঁরে।
সকল বাধা তুচ্ছ করে এগিয়ে যাই প্রান্ত দ্বারে।


কোন দেবতার ইঙ্গিতে সে অকিঞ্চনের মাটির ঘরে
পারত কি সে মানিয়ে নিতে দারিদ্র্যকে আপন করে।
দেওয়ার মতো কিছুই তো নাই
মাথা গোঁজার একটুকু ঠাঁই
তাঁর চাহিদা কেমনতরো জানাবে কে তা আমারে।
সাধ্য সেদিন বিন্দুও নয় বিদীর্ণ বুক হাহাকারে।


দুঃখ আমার জীবনসাথি একটুও না ডরাই তারে
বিপদ এলে যুঝতে পারি মায়ের বাণী 'এগিয়ে যা রে'।
অরণ্য বা পাহাড়বুকে
খাড়াই পথে যষ্টি ঠুকে
পথই আমায় জানিয়ে দিলো 'মরার আগে মরিস না রে'।
অঢেল শক্তি জোগায় প্রাণে আকাশ বাতাস সব আমারে।


কোনখানে সে মুখ লুকালো আজকে আমি তারেই খুঁজি
ক্লান্তি আমায় গ্রাস করে না ব্যাকুলতায় চক্ষু বুজি।
রক্তরাঙা তাঁর কপোলে
জমাট তুষার ঝরছে গলে
গেছে আমায় ঋণী করে কোন দেশে কোন সাগরপারে।
দুঃখ ব্যথায় জর্জরিত, কেমন করে জানাই তাঁরে।


যে কথাটি হয়নি বলা বলছি আজি সাগরতটে
সাধ্য আমার ছিল না তাই নীরব ছিলাম সন্নিকটে।
সেদিন ছিল বিঘ্ন রাশি
তারেই আমি ভালোবাসি
শুনেই জানি বিহ্বল হবে যদি সে'জন জানতে পারে
আজিকে আর নেইকো বাধা ঊর্মি হয়ে আয় এবারে।


© অজিত কুমার কর