শহরে করি বাস অট্টালিকা ’পরে গাঁয়েতে একা রয় মাতা
সামনে খোলা মাঠ মুক্ত পরিবেশ দেবী লক্ষ্মীমা-ই ত্রাতা।
‘এখানে চলে এসো ’ সাদরে বলি আমি ওখানে কেন রও পড়ে
একাকী আমি হেথা সুদূরে যাই চলে সকালে রেলগাড়ি চড়ে।
নাতিনাতনি তিন তোমারে ভালোবাসে সবাই কাছে পেতে চায়
দুখানি রুটি খেয়ে সামনে পাঠশালে সকলে হেঁটে চলে যায়।
গাঁয়ের বাড়ি থেকে কী করে যাব আমি হুগলি বহুদূর পথ
তাই এখান থেকে পড়াতে চলে যাই যেখানে মাহেশের রথ।
বুঝি মা সব আমি শহরে বাস করা তোমার সুখকর নয়
তবুও বলি মা গো ক’দিন পরে ঠিক পাড়াতে হবে পরিচয়।


গোয়ালে গরু আছে মাঠে সোনালি ধান পাখিরা আসে কত রোজ
বাগানে ফুল ফোটে হরির পূজা করি দুপুরে শাক দিয়ে ভোজ।
বঁটিতে খড় কাটি পুকুরে স্নান সারি গরুকে খেতে দিই জাব
কালো গাভীর দুধ কেমন সুস্বাদু একটু নিজে তুই ভাব।
মন চায় না যেতে মাটির বাড়ি ছেড়ে আরামে আছি বেশ গাঁয়ে
বাতের ব্যথাটুকু মালিশ করি যত রয়েছে তবু দুই পায়ে।
এবারে মণ দুই ফলেছে সরু ধান লাগেনি খুব বেশি পোকা
পাঠিয়ে দেবো পরে গফুর নিয়ে যাবে রেখেছি চাল করে খোকা।
তোর বাতাবি গাছে ধরেছে কত ফল পাকবে মাস দুই গেলে
তুই বউমা নাতি আর নাতনি দুই দারুণ মজা পাবি খেলে।


পূজা ঘনিয়ে এল বাকি পনের দিন এবারে একেবারে এসো
কখন কী যে ঘটে থেকো না একা আর এখানে থাকে মাসি-মেসো।
এভাবে কাটে দিন সকল ব্যথা সয়ে শ্রাবণ-রাতে আসে ভাই
বিপদ বুঝে আমি অতীব তাড়াতাড়ি বদ্যি নিয়ে বাড়ি যাই।
মাত্র সাত দিন করেছি মা’র সেবা ছাড়ল ধরা তাঁর ডাকে
মাতৃহারা আমি নয়নে ঝরে জল জানাব ব্যথা আর কাকে।
মায়ের ভালোবাসা ভোলা কি যায় কভু অতীতে মন ফিরে যায়
পিতাও চলে গেছে অনাথ করে দিয়ে হৃদয়ে শুধু ওঠে হায়!