মা যে আমার সবার চেয়ে দামী
হৃদয় জুড়ে আঁকা মায়ের ছবি
লাগামছাড়া অনন্ত দুষ্টামি
সকাল থেকে অস্তে যখন রবি।


কত স্মৃতি জাগছে এখন মনে
ডুবসাঁতারে রঙিন হ’তো আঁখি
পড়ার সময় মাঠে কিংবা বনে
যেতাম উড়ে যেমন করে পাখি।


মায়ের কোলে মুখটি গুঁজে শোয়া
স্বপ্ন দেখে উঠি যখন কেঁদে
বুজত আঁখি পেয়ে মায়ের ছোঁয়া
ধরত চেপে দুহাত দিয়ে ছেঁদে।


মাঠে যেতাম মায়ের পিছু পিছু
গরুর দড়ি রইত হাতে ধরা
এমনি করে সময় যেত কেটে
সাথে আমার থাকত সহোদরা।


একা একা যাইনি কভু স্কুলে
মাকে ছাড়া আমার চলে না যে
পড়াগুলো যেতাম শুধু ভুলে
লক্ষ্যনজর রাখে সদাই মা যে।


কোনোক্রমে পেরোই একটা বেড়া
যেতে হবে এবার অনেক দূরে
নতুন জামা, বাতিল হ’লো ছেঁড়া
পাঠাতঙ্ক খাচ্ছে আমায় কুরে।


ঢেসনা দিয়ে উনুনে জ্বাল দেয়া
মুড়ি ভাজা প্রথমে চাল নাড়া
কোথাও গেলে সাথে আমায় নেয়া
আমি সদা দুই পা তুলে খাড়া।


একটুখানি বাড়তি আমার ভাগে
জামবাটিতে দুগ্ধে ভেজা মুড়ি
গরম ভাতে প্রত্যহ ঘি লাগে
কাঁসার থালা মাটির হাঁড়িকুড়ি।


মায়ের কথা, ‘জীবন নিজেই গড়
এ জীবনে শেখার কি শেষ আছে’
এখন আমি অনেক কাজে দড়
একটু একটু শিখি মায়ের কাছে।


পল্লিজীবন লাগে আমার ভালো
এখনও যাই সবুজ খেতের টানে
দিন ফুরলে ঘনায় রাতের কালো
ঘুম ভেঙে যায় ভোরে পাখির গানে।


আলতাপরা মায়ের পা’ছাপ খুঁজি
শত কাজের ঝক্কি মায়ের ঘাড়ে
কাঠের বাক্সে কুলুঙ্গিতে পুঁজি
সে’সব স্মৃতি আমার নজর কাড়ে।


চেনাত মা কোনটা ধ্রুবতারা
চাঁদটা কেন বাড়ে আবার কমে
এক মুহূর্ত চলে না মা ছাড়া
বকলেও মা যাই না আমি দমে।


মনের খোরাক সবই মজুত গাঁয়ে
ভাল্লাগে না অন্য কোথাও এসে
গাছগাছালি পথের ডাইনে বাঁয়ে
আকাশ সেথা শ্যামলিমায় মেশে।


রাতে যখন বসি মাদুর পেতে
সপ্ত ঋষির পাশে অরুন্ধতি
বলত ডেকে,‘আয় রে খোকা খেতে’
রইলে তুমি হ’তো না দুর্গতি।


এখনও মা তেমনি ছোটো আছি
ইচ্ছে করে একটু কোলে বসি
খেলি আমরা দুজন কানামাছি
রঙ্গ দেখে হাসুক তারা শশী।


নও মা তুমি এখন শুধু ছবি
আজও শুনি খোকা বলেই ডাকো
জ্বলজ্বলে টিপ রাঙা প্রভাতরবি
বল-না মা এখন কোথায় থাকো।


© অজিত কুমার কর