রুবাইয়াৎ-ই-অজিত কুমার ১২১


চারশো একাশি


তোমার প্রতি পদক্ষেপে মনোবীণায় ভৈরবী
ভেসে ওঠে চোখের সামনে নিসর্গীয় এক ছবি।
পারিজাতের মালা গলায় কানে ঝুমকোলতা ফুল
স্বাগত জানাতে দেব একগোছা লাল করবী।


চারশো বিরাশি


তোমার স্পর্শ পাবার জন্য ব্যাকুল থাকে দূর্বাদল
পুবের আকাশ হয়নি রাঙা বেজে ওঠে তোমার মল।
দুটি হৃদয় একীভূত এবার নিবিড় আলিঙ্গন
শিশুর কলকাকলিতে ভরে তখন শিউলিতল।


চারশো তিরাশি


বিষণ্ণতা ছাড়া আমার ঝুলিতে আর কিছুই নেই
থাকনা ওটা আমার কাছে দগ্ধ করুক আমাকেই।
দেওয়ার মতো কিছু পেলে উজাড় করে দেবো সব
মূক ও বধির এখন আমি অশ্রু ঝরে অলক্ষেই।


চারশো চুরাশি


তোমার চোখে পড়ছে না কি অশ্রু ঝরছে অনর্গল?
তুমি ছাড়া কে বা সহায় কে জোগাবে আমায় বল।
আঠারো মাস অতিক্রান্ত কমছে না তো সংক্রমণ
পৃথিবীতে আনন্দ নেই বিশ্বজুড়ে দাবানল।


চারশো পঁচাশি


আপন বেগে এগিয়ে চলুক নদীর মতোই সব নারী
পাথরেও ফুল ফোটাতে হৃদয় নিংড়ে দেয় বারি।
কূল ভাঙে ফের ব-দ্বীপ গড়ে নদীর দুটি ভিন্ন রূপ
ওদের গতি রুদ্ধ করতে করলো নিষেধ কে জারি?


চারশো ছিয়াশি


ফোটে যখন গভীর রাতে নিদ্রামগ্ন আমার মন
ঘুম ভাঙলে সুগন্ধ পাই খোলাই রাখি বাতায়ন।
ডালভরা-ফুল দেখা আমার হলো না হায় একবারও
সকালবেলা উঠোন 'পরে শিউলিফুলের আস্তরণ।


চারশো সাতাশি


পাটকাঠি-পাট দুটোর সাথে ছোটো থেকেই পরিচয়
কৃষক-পরিবারে জন্ম জল-কাদাকে পাই না ভয়।
পাট চলে যায় পাটকাঠি রয় ছাই হবারই প্রতীক্ষায়
এটাই কাঠির ভবিতব্য দগ্ধ হয়ে মরতে হয়।


চারশো অষ্টাশি


সকালবেলা যেমন হাসে দিঘির বুকে পদ্মফুল
তোমার হাসি ঠিক তেমনি হৃদয়জুড়ে হুলুস্থুল।
সুরঞ্জিত ওষ্ঠযুগল যেন একটি লাল গোলাপ
প্রাণভোমরা গুনগুন-গুন পরশ পেতে মন ব্যাকুল।


চারশো উননব্বই


রং লেগেছে কবির মনে আর লেগেছে তাঁর টিপে
ওদের রঙ্গ দেখার জন্য ছাদে গেলাম পা-টিপে।
নির্জনে বেশ চলছে কূজন কবির দৃষ্টি কোনদিকে
দূরের ছাদে অষ্টাদশী দুজন দুটি ব-দ্বীপে।


চারশো নব্বই


মাঘের শীতও লাগবে না গায় পেলে নিবিড় আলিঙ্গন
নীরব নিশীথ হিমেল হাওয়া ওষ্ঠকুসুম সম্মিলন।
শুষ্ক কন্ঠ ভিজিয়ে নিতে লাগবে তখন ঠান্ডা জল
আকাশে চাঁদ নাইবা রইল ভরে গেছে মন তখন।


চারশো একানব্বই


শরৎ এলেই শিউলি-সুবাস কাশফুল আর নীল আকাশ
দিঘির বুকে পদ্মকলি শিশিরসিক্ত মাঠের ঘাস।
কদম-কেয়ার জামানা শেষ উড়ু-উড়ু তখন মন
ছাতিমতলায় আসছ তুমি বাতাস দিল সেই আভাস।


চারশো বিরানব্বই


দূর্বাদলে গড়াগড়ি পড়ছে গায়ে শিউলিফুল
ফুল-চাদরে পড়ল ঢাকা সারা অঙ্গ প্রিয়ার চুল।
এ যেন এক নতুন জগৎ ভেসে আসে সুর মধুর
অনন্য এক অনুভূতি হারিয়ে গেছি কোথায় কূল।


চারশো তিরানব্বই


ফোঁপরা ঢেঁকির শব্দ বেশি মুচকি হাসে শাল-পিয়াল
জ্ঞানীগুণী নীরব শ্রোতা গণ্ডমূর্খের গলাই ঢাল।
'এখনও তো কুড়াই নুড়ি', বলেছিলেন নিউটন
জ্ঞানভান্ডার অতল সাগর মানুষ ছাত্র জীবৎকাল।


চারশো চুরানব্বই


শাকান্নতেই আছি সুখে পাই অফুরান বাতাস জল
দিন ফুরোলে সকলেরই ঠিকানা তো অস্তাচল।
প্রার্থনা এই সঙ্গে থেকো আমায় নিরাশ করো না
তোমার হাতের কোমল স্পর্শে প্রস্ফুটিত হৃদকমল।


চারশো পঁচানব্বই


ধোপদুরস্ত পোশাক পরে বৃথা দৃষ্টি আকর্ষণ
স্বরূপ প্রকাশ আচরণে তখন প্রকট হিংস্র মন।
চিত্ত যদি শুদ্ধ না হয় গাইবে না গান বিহঙ্গ
মৌমাছিদের পছন্দ তাই সাগরতীরে গভীর বন।


চারশো ছিয়ানব্বই


শরৎ-আকাশ মায়াবী চাঁদ করল শুধুই ছলনা
কোথায় তুমি ছিলে সাকি ইচ্ছাপূরণ হলো না।
বিনিদ্র রাত কাটল আমার ক্লান্ত দেহ অবশ মন
বিস্মরণের ওষুধ তুমি দেবে কখন বল-না।


চারশো সাতানব্বই


আপন জীবন তুচ্ছ করে প্রাণ বাঁচালি অনেকের
দেখে আমি ভীষণ খুশি ওটাই ভিসা বেহেস্তের।
ভবিষ্যতেও এমন কাজের জন্য পাবি পুরস্কার
নে খেয়ে নে ভিজুক গলা এক পেয়ালা দিচ্ছি ফের।


চারশো আটানব্বই


যাপান আমার ভিক্ষা করে আউড়ে চলি তোমার নাম
সব থেকেও কিচ্ছুটি নেই এমন করুণ পরিণাম।
কোনওকিছুই নয় অজানা সবই নখদর্পণে
দীপ নিভলে পরম শান্তি এই কামনা ঘনশ্যাম।


চারশো নিরানব্বই


তোমার হাতে রাখি হয়ে কাটিয়ে দিতে চাই জীবন
কিন্তু যদি না দাও ধরা কেমন করে বাঁধব মন।
পথ চেয়ে দিন কাটল বছর তবুও দেখা পেলাম না
তোমার চরণতলে আমায় করে গেলাম নিবেদন।


পাঁচশো


কাজলকালো মেঘ জমেছে প্রস্ফুটিত শ্বেতকমল
চক্ষু যেন কালো ভ্রমর ওই সাগরের কোথায় তল?
শরতের মেঘ লজ্জা পেয়ে কাশের পিছে মুখ লুকায়
একটা নুড়ি ফেলে দিতেই ছলকে ওঠে সাগর-জল।


পাঁচশো এক


পারে যাওয়ার ডাক এসেছে নৌকা ছাড়া কেমনে যাই
একটুখানি সবুর কর বিদায় নিয়ে যাচ্ছি ভাই।
আমার তো দিন ফুরিয়ে গেছে পেয়ে গেছি যাওয়ার ডাক
খালি হাতেই যাচ্ছি আমি এবার তোমার কৃপা চাই।


© অজিত কুমার কর