*
রাজবাড়িতে রাজার ছেলে দিন কাটে তার হেসে খেলে
ইচ্ছাটি তার স্বর্গে গিয়ে দেখবে পরির দেশ।
বেরিয়ে পড়ে প্রাসাদ থেকে মনবিহঙ্গ উঠল ডেকে
সারাটা দিন হাঁটছে পথে কখন হবে শেষ।
শুধায় পথে একে ওকে যারেই পথে পড়ছে চোখে
কেউ কি তোমরা বলতে পারো কোথায় স্বর্গলোক?
কারও আছে কাজের তাড়া বেশিরভাগই দেয় না সাড়া
পাশ কাটিয়ে এগিয়ে চলে ফিরিয়ে দুটি চোখ।
পৌঁছে গেল একটা বনে ভাবনাগুলো সজাগ মনে
পড়ল চোখে বনের ভিতর একটা ছোটো ঘর।
ঘরের ভিতর বৃদ্ধা বসে গাছের পাতা পড়ছে খসে
এগিয়ে গেল পা পা করে জুটল সমাদর।
বসতে দিল আসন পেতে সোহাগ ভরে বলল খেতে
এবার শুধায় কোমল স্বরে সে কি জানতে চায়।
মনের কথা বললো সবই চোখের কোণে পরির ছবি
দেখিয়ে দেবে পথের দিশা এমন ভরসা পায়।
ধৈর্য তোমায় ধরতে হবে বন্ধু আমার ফিরলে তবে
এবার যাবে পশ্চিমে সে এসেছে সমন।
এলেই আমি বলবো তাঁরে পৌঁছে দিতে স্বর্গ-দ্বারে
এই কটা দিন আমার ঘরে প্রতীক্ষা এখন।
কাটল ক'দিন ঘুরেফিরে বনের পথে কুটির ঘিরে
শাকাহার আর মেঝেয় শয়ন এ যে শান্তিনীড়।
এখানে বেশ সুখেই আছে কাঠবিড়ালী লাফায় গাছে
অরণ্য তো ঢের আরামের শীতল সুনিবিড়।
ফিরল পবন সেদিন রাতে যাত্রা শুরু তাহার সাথে
প্রবল বেগে বইছে বাতাস, পৌঁছে স্বর্গ-দ্বার।
গেট পেরিয়ে যায় বাগানে পাখির কূজন আসছে কানে
রংবেরঙের কত যে ফুল তুলনা নাই তার।
মালি এসে শুধায় তাঁরে কেন এলে স্বর্গদ্বারে
কে বা তোমায় পথ দেখাল, কোথায় পেলে রথ?
সাথে তোমার কেউ কি ছিল সেই কি তবে হদিস দিল
কেমন করে পেরিয়ে এলে এই দুর্গম পথ?
উত্তরে সে বলল হেসে পবন-সাথে এসেছে সে
স্বর্গশোভা দেখার ইচ্ছা, দেখবে পরির রূপ।
পরির দেখা সেদিন পাবে যেদিন পরি আপনি চা'বে
নিয়মকানুন বড়ই কঠিন ভঙ্গ হলেই ঝুপ।
ঘুরে বেড়াও এদিক-ওদিক কাজ করো না মোটেও বেঠিক
সুযোগটুকু কাজে লাগাও যদি দেখতে চাও।
মাসাধিককাল কেটে গেল ফুলের শোভায় তৃপ্তি পেল
মনে মনে ডাকছে রোজই, 'এবার সাড়া দাও।'
অন্তরে তাঁর কী আকুতি ঘটে গেল ধৈর্য-চ্যুতি
এক প্রভাতে করল প্রবেশ পরির আঙিনায়।
নিদ্রামগ্ন পরি তখন তুলতুলে গা পুষ্প যেমন
ঠোঁট জুড়ে তার মধুর হাসি তনু মন জুড়ায়।
দ্রুতপাদে এগিয়ে গেল আলতো করে চুমু খেল
সাথে সাথেই ঘটল বিপদ, এ তো পৃথ্বীতল।
নিয়ম ভাঙার শাস্তি চরম শিক্ষা পেল কুমার পরম
এমন সুযোগ হাতছাড়া তার চোখ দুটি ছল ছল।