*
দাপাদাপি নেইকো মেঘের নেই কোনো হুঙ্কার
   ক্ষণপ্রভার চমকও নেই আকাশ পরিষ্কার।
             নূপুর বাজে রুমুর ঝুম
           মা দেবকীর নেইকো ঘুম
   তাঁর আগমন ধরার বুকে নিশীথ অন্ধকার
পার হয়ে যায় ফেনিল নদী খুলল গোকুল-দ্বার।


      দিঘির বুকে দোলায় মাথা সহস্র উৎপল
    রবির আলোয় ঝিকিমিকি পদ্মপাতার জল।
                ঢলঢল ঢল পাতার জল
                 খুব টলমল নয় অটল
পাখির ডানার হাওয়ায় কাঁপে ফোটা ফুলের দল
    বেরতে হয় খাবার খোঁজে তাই ওরা চঞ্চল।


  মেঘবলাকার শুভ্র পালক অবিন্যস্ত নয়
নড়নচড়ন একটু নেই কেমনে কথা কয়।
            কতক্ষণ বা রয় এমন
          নীল নীলিমায় সে উন্মন
উমার আসার সময় হ’লো তাই সুষমাময়
পথে যাতে বিপদ না হয় নীরব শান্ত রয়।


আসবে কিনা তা জানা নেই তবুও প্রতীক্ষায়
  পানসি নিয়ে বসে আছি নদীর কিনারায়।
                করছি শুধু পারাপার
             মিলবে না কি দেখা আর
  বিষণ্ণতা ফেলছে ছেয়ে ঢেউগুলো আছড়ায়
ফুরায় বেলা আসবে কখন হৃদয় তোমায় চায়।


শেফালিকা রয় না গাছে ভরায় ভূমিতল
চিত্রিত হয় আলপনা এক ছড়ায় পরিমল।
             শিশিরভেজা দূর্বাদল
        আলোর ছোঁয়ায় কী ঝলমল
সাজি হাতে কুড়ায় কে ওই খুশিতে উচ্ছল
শিউলিমালায় গাঁথবে কি ও দিঘির শতদল।


    অসম্মতি পাইনি সেদিন খোলাই ছিল দোর
এক এক করে ফুল গেঁথেছি বিনি সুতোর ডোর।
               ঝাপসা হ’লো দু’নয়ন
               জানাই কারে এ বেদন
কোথায় যেন বিঁধছে কাঁটা লাগছে ব্যথা জোর
বারে বারে ভাসছে ও’মুখ এ কি কেবল ঘোর!


     পাহাড়িয়া নদীর ঢালে ঝুমুর নাচ ও ছউ
   খোঁপায় গোঁজা স্বর্ণচাঁপা লাল চেলিতে বউ।
                উপচে পড়ে রঙ্গরস
               পক্ক জামে ভর্তি রস
    গলায় ধরে মরদটা তার ঢালল গালে মউ
চোখ-ইশারায় শুধায় তারে, ‘বলনা কী তুই কউ।’


বনমোরগের ডাক শোনা যায় কোঁকর কোঁকর কোঁ
     শিকার ধরার জন্য বাজের দুরন্ত এক ছোঁ।
              হাসলে গালে পড়ত টোল
             বাজত জোরে মাদল ঢোল
   গুনগুনিয়ে  উঠত ভ্রমর পাখনাতে ভোঁ ভোঁ
মশাও তখন গান শোনাত পোঁপর পোঁপর পোঁ।


    সেই যেখানে প্রথম দেখা কুসুম গন্ধ পাই
সে কথা কেউ ভুলতে পারে, আমিও ভুলি নাই ।
               শিলায় বসে কতক্ষণ
             গানে গানে ভরতো মন
  আমার খুবই ইচ্ছে করে ফের সেখানে যাই
শিলার ’পরে হাত বোলালে তোমার পরশ পাই।


ভালোবাসি তোমায় আমি সহে না আর তর
  মেলেনি কি জেনে নেবার একটু অবসর।
            চিত্তে ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ
        পায় না তারে দেখতে কেউ
   কেমনে তারে আটকে রাখি পাহাড়ি নির্ঝর
জানি আমি থামবে সে ঢেউ ধরবে যখন কর।


কোন কাননে ক’রছো খেলা শরৎ এলো ওই
  তুমিও কি আমার মতো ভাবছ বসে সই।
            মোহনাতে জাগবে চর
           বাঁধবো সেথা নতুন ঘর
বাতাস এসে লাগছে গায়ে দিচ্ছ সাড়া কই
নদীর কূলে এখনো তাই প্রতীক্ষাতে রই।


© অজিত কুমার কর