.                 সহসা বাজিল শঙ্খ।
   নবজাতকের ক্রন্দনধ্বনি, ভরিল মায়ের অঙ্ক।
              উদিল তপন নীলাভ গগনে
              অতুল গরিমা দখিন পবনে
আলোতে ভরিল কানন আনন বাজিবে বিজয়-ডঙ্ক।


মা’র কোল হতে উঁকি দিয়ে দেখে সুবিশাল এই বিশ্ব।
              চোখ বুজে ফের সুধাপানে রত
               পুরনারী সবে দূরে ছিল যত
  আসিল হরষে চমকি উঠিল দেখে মনোহর দৃশ্য।


  চাঁদপানা মুখ টানাটানা চোখ প্রকৃতিতে অনুরক্ত।
             পুকুরের ধারে ডাহুকেরা ডাকে
              কত মধুকর বসে আছে চাকে
শিশুমনে জাগে কতনা ভাবনা তাই নিয়ে সদা মত্ত।


বাহিরে যাবার নাহি অনুমতি ঘরের ভিতরে বন্দি।
             সর্বদা থাকে কেহ পাহারাতে
           মা’র দেখা মেলে শুধু নিশিরাতে
ভাবনাকুসুম কাঁদিয়া বেড়ায় উবে যায় যত ফন্দি।


  সুরের ভুবনে তাঁর বিচরণ নয়নে গভীর দৃষ্টি।
          খাতা ভরে ওঠে শত শত গানে
        মিঠে সুর বাজে লাগে এসে কানে
    রহিবে অটুট মানমর্যাদা ঠাকুরবাড়ির কৃষ্টি।


দিবানিশি শুধু লেখা আর লেখা কবিতা নাটক গল্প।
             কখনও কলমে ভ্রমণ কাহিনী
            দূরে দূরে থাকে প্রিয়া মৃণালিনী
   অতি বেগবতী লেখনী কবির নহে তা কষ্টকল্প।


    গীতাঞ্জলির সুরভি সুষমা হরণ করিল চিত্ত।
                জগৎসভায় নন্দিত তিনি
            নোবেল প্রাইজ আনিলেন জিনি
এ’দেশের কবি অমেয়ভুষণে প্রতীচ্যে অভিষিক্ত।


  তব গৌরবে গর্বিত দেশ জাগিল বিপুল হর্ষ।
              মহিমণ্ডিত নাইট উপাধি
            তব বিভূতিতে অর্পিল সাধি
ফিরালে অচিরে উনিশ উনিশে হত্যালীলার বর্ষ।


বিগলিত প্রাণ দুঃখমোচনে লেখনী জোগাল শক্তি।
               পরাধীনতার মর্মবেদনা
             কবিকে নিয়ত করে উন্মনা
    পথসন্ধানে সদা সচেষ্ট অন্তরে দেশভক্তি।


  সুদূরপ্রসারী ভাবনা কবির বিজুলির দ্যুতি চক্ষে।
           পাঠদান হবে খোলা পরিবেশে
           শুরু করিলেন আমাদের দেশে
তরুছায়াতলে পড়িছে শিশুরা হাসিখুশিভরা বক্ষে।


     দেশবিদেশের শিক্ষার্থীরা জুটেছে আম্রকুঞ্জে।
              প্রথাগত পাঠ সাথে নাচ গান
              হাড়ি-মুচি-ডোম সবাই সমান
শান্তির নীড়ে আপন খেয়ালে হেথাহোথা অলি গুঞ্জে।


  বোলপুর যেন নব তপোবন বাতাসে মধুর গন্ধ।
             চকিত হরিণী ধাইছে কাননে
            পিক গেয়ে ওঠে আমলকী বনে
পলাশে শিমুলে রাঙা বনবীথি হেরি অনুপম ছন্দ।


তাপিত হৃদয়ে সুরের পরশ এনে দেয় সুখশান্তি।
            যেন চলে যাই অপরা ভুবনে
          নিজেরে হারাই প্রতি ক্ষণে ক্ষণে
ভেসে ওঠে চোখে বিমূর্ত রূপ শোভন গৌরকান্তি।


  কতনা তীর্থ সারা দেশজুড়ে দর্শনে লভি পুণ্য।
          কানে যেন আসে তব পদধ্বনি
           মনে হয় যেন আসিবে এখনি
  উত্তরায়ণ-উদীচী-শ্যামলী আজিকে স্তব্ধ শূন্য।


এসেছিলে তুমি ধরণির বুকে করিতে সবারে ঋদ্ধ।
          তোমার বিহনে কাটে না যে দিন
             তুমি না রহিলে দশা সঙ্গিন
যে যাই বলুক অন্তরে জানি এ কথা সতত সিদ্ধ।


বর্ষবরণ-হোলি-পৌষমেলা খুলে দেয় দ্বার রুদ্ধ।
             বারোমাস ধরে কত পার্বণ
           চলে ঠিকঠাক এখনও তেমন
উপাসনাগৃহে প্রার্থনা রোজ চিত্তকে করে শুদ্ধ।


   বিদ্রুপবাণে বিদ্ধ করেছে তবু অবিচল চিত্ত।
           বুঝিল যেদিন মহিমা তোমার
             অনুশোচনায় হ’ল ছারখার
ভ্রান্ত ধারণা ঘুচিল অচিরে তুমি যে সত্য নিত্য।


এখনও অবাধে কুৎসা রটনা এতে যে সিদ্ধহস্ত।
            আত্মপ্রচারে পড়ে গেছে ধুম
               অতিরঞ্জিত কল্পকুসুম
চাতুরিতে ভরা বানানো গল্প আপনি লেখক মস্ত।


আজ তুমি নেই আছে তব গান সুরের জাদুতে মুগ্ধ।
            জীবনের যত আপদে বিপদে
          ভরসা জোগাও তুমি প্রতি পদে
শির উঁচু করে এগোতে শিখেছি জিনিতে জীবনযুদ্ধ।


    চিত্ত সবার বিকশিত কর ওঠে যেন নব সূর্য।
            বসুমতী হোক আনন্দলোক
             শান্তির দূত বুদ্ধ অশোক
আজি শুভদিনে এসোনা এগিয়ে বাজাই বিজয় তূর্য।