**************************
না জানিয়ে কোথায় গেলি কেমনে একা রই
পৃথিবীটা চলছে তেমন বদলাল আর কই।
        তোরই পোঁতা শিউলি গাছে
          অজস্র ফুল ফুটে আছে
প্রভাতবেলা উঠোন ’পরে ছড়িয়ে পড়ে খই।


  যোগাযোগের ঠিকানাও আমার জানা নেই
বারান্দাতে কাটাই সময় আঁধার ঘনায় যেই।
          গতরাতের দু’খান রুটি
            অট্টহাস্যে কী ভ্রূকুটি
ছিঁড়ে ছিঁড়ে টুকরো করে বিড়ালটাকে দেই।


    কতখানি জায়গা জুড়ে হৃদয়ে তুই ছিলি
হ্যাঁচকা টানে এক নিমেষে সেটাই ছিঁড়ে দিলি।
            গেলাসভরা নিম্বুপানি
            কেমনতরো অভিমানী
এখন হাতে বাড়ায় না কেউ সবটা কেড়ে নিলি।


  যেদিন তোরে প্রথম দেখি ভুবনডাঙার ঘরে
কেউ ছিল না সামনে তখন এল খানিক পরে।
          ওইটুকুতে ঝিলিক চোখে
           অপলকে দেখছি তোকে
হৃদয়সাগর উথালপাথাল ঊর্মিমালায় ভরে।


  চতুর্দিকে তোকেই দেখি বেল দোপাটি জুঁই
সকাল বিকেল হাত বাড়িয়ে পাপড়িগুলো ছুঁই।
         সবখানে তুই গেছিস রেখে
         হৃদয় জুড়াই সোহাগ মেখে
ইচ্ছে করে এ’হাত দুটো আর কভু না ধুই।


   এখনও তুই তেমনি আছিস বকুলমালা গলে
ভাবিস না কি একবারও তুই কীভাবে দিন চলে।
           দু’খান ছবি পাশাপাশি
            ওষ্ঠে শতদলের হাসি
সিঁথির সিঁদুর এখনও ঠিক তেমনই জ্বলজ্বলে।


    দুপুরবেলা খাবার পরে আসতে গুটগুটি
পাখির পালক টানতে গালে বুজলে আঁখি দুটি।
         তাতেও যদি চোখ না খুলি
         আওড়াতে সেই কঠিন বুলি
রাত্রে ঘুমাও দিনেও তাই শুনেই হেসে উঠি।


    একা থাকার কষ্ট কী যে বুঝছি হাড়ে হাড়ে
আমায় দেখে হয়ত বা তুই হাসিস আড়ে আড়ে।
           যেদিন প্রথম ঘরে এলি
         মায়ের রাঁধা পায়েস খেলি
  সেই কথাটা পড়লে মনে ছবি নজর কাড়ে।


তানপুরাটার তারগুলোতে জমছে রোজই ধুলো
  মনটা এখন উদাস বাউল এক্কেবারে ভুলো।
            কী যে করি ভেবে মরি
            বলছি তোরেই সহচরী
দেয়ালজুড়ে সকল ঘরে দুলছে কালো ঝুলও।


আমায় ছেড়ে পারলি যেতে কোথায় ছিল ত্রুটি
  খুনসুটিও বুঝলি না রে এতই আলগা খুঁটি!
           স্পর্শকাতর খুবই ছিলি
          শেষে এমন জবাব দিলি
জানলে আগে নিয়ে নিতাম অমন লম্বা ছুটি।


  ঘর ও বাহির সবখানেতে চরণচিহ্ন আঁকা
সবই আছে তোর বিহনে লাগছে বড়ই ফাঁকা।
           উঠবে ডেকে সাতসকালে
            দুলবে বসে কদমডালে
বুলবুলিরা আসে রোজই গড়ায় জীবনচাকা।