আলাউদ্দিন খানের পুত্র আলি আকবর খান
শৈশব থেকে শেষ অবধি সরোদই তাঁর প্রাণ।
পিতার কঠিন তত্বাবধান তাঁরও প্রবল জেদ
অবিশ্রান্ত অনুশীলন একদিনও নাই ছেদ।


ছ’মাস ধরে দিবারাত্র নিরন্তর রেওয়াজ
হুকুম শুনে আতঙ্কিত অসাধ্য এই কাজ।
ওই নিদানে অটল পিতা হবে না নড়চড়
জননীও বিফল হলেন চিত্তে প্রবল ঝড়।


গৃহত্যাগই বাঁচার উপায় সঙ্গে সেই সরোদ
কপর্দকহীন নিঃস্ব কিশোর কে দেবে প্রবোধ।
টিকিটবিহীন যাত্রী ট্রেনের বড়ই দুঃসময়
পরীক্ষকের নির্দয়তায় বাড়ল আরও ভয়।


নামতে হ’ল গভীর রাতে অজানা জায়গায়
ভুখাপেটে কাটল রাতি এমন কপাল হায়!
বন্য পশুর আওয়াজ শুনে চলে না চরণ
জীবনজ্যোতি নিভবে বুঝি শিয়রে শমন।


চায়ের কাপে উঠছে ধোঁয়া ওদিকে মন নেই
কোনদিকে সে যাবে এবার ডুবছে তিমিরেই।
গভীর নিরীক্ষণের পরে শুধান ভদ্রলোক
কেন এমন উদাসী মন ক্লান্তিভরা চোখ?


পেশায় উকিল হৃদয় দরাজ দিলেন তাঁরে ঠাঁই
অল্পদিনেই বুঝে গেলেন তুল্য কেহই নাই।
নিত্যদিনই চলতে থাকে সনিষ্ঠ রেওয়াজ
জয়ী তাঁকে হতেই হবে এটাই প্রধান কাজ।


বম্বে-আকাশবাণী থেকে পেয়ে গেলেন ডাক
ওদিকে তাঁর বাজনা শুনে আব্বাজান নির্বাক।
এমন সুর তো তাঁরই সৃষ্টি পেল কোথায় চোর!
সান্ত্বনা দেন অর্ধাঙ্গিনী কাটল তখন ঘোর।


ফিরে এলেন আবার গৃহে প্রশংসা পিতার
শাবাশ বেটা তুষ্ট আমি, সরোদে ঝংকার।
তামাম বিশ্ব মন্ত্রমুগ্ধ এমনই তাঁর হাত
প্রাচ্য এবং প্রতীচ্যকে ভাবাবে নির্ঘাত।


খেয়াল ধ্রুপদ ঠুংরিতেও কৃতিত্ব অক্ষয়
সুরের জালে সমাচ্ছন্ন বিশ্বভুবন জয়।
পেলেন গ্র্যামি, ম্যাক আর্থার, পদ্মবিভূষণ
আপন আলোর প্রদীপ্তিতে রঙের বিচ্ছুরণ।


মেনুহিনের আমন্ত্রণে গেলেন সাগরপার
দুই তারকার মহামিলন উন্মোচিত দ্বার।
নববর্ষের শুভারম্ভে দুইয়ের আবির্ভাব
স্বর্গ হতে এলেন নেমে দ্বৈত পদ্মনাভ।


তারায়ভরা আকাশ মাঝে শিল্পী জ্যোতিষ্মান
তৃষিতদের মেটায় তৃষা সুরসাগরে স্নান।
সূক্ষ্মদেহে বিরাজমান অবাধ বিচরণ
সঙ্গী ওদের বংশীধারী দৈবকীনন্দন।