আমি যাইনি শ্মশানে।
তবুও তোমার চিতার আঁচ
সারারাত ছুঁয়ে ছিল আমায়।
আমার চোখ জ্বালা করছিল
কাঁদতে পারছিলাম না কেন?
জানি না।
ঠিক দুদিন আগে_
দেখা হয়েছিল তোমার সঙ্গে।
তুমি বিছানায় নিথর শুয়ে,
আমি দাঁড়িয়ে মুখোমুখি।
এই বুঝি কথা বলবে।
বলবে_'কেমন আছেন?
বহুদিন বাদে দেখা তাই না? '
হয়ত তখন
মস্তিষ্ক-মৃত্যু হয়েছে তোমার।
তোমার মুদ্রিত চোখে চোখ রেখে
প্রশ্ন করেছিলাম_
কেন চলে গেলে
সংসারটাকে আগোছালো রেখে?
খুব কি তাড়া ছিল যাবার?
খোঁচা খোঁচা দাড়ি মুখে
প্রশান্তি এঁকে বলেছিলে যেন_
এই বেশ ভালো হোলো,
ভাঙা আসবাবে
ঘর তার সৌন্দর্য হারায়,
কোন কাজেও লাগে না।
শুধু শুধু জায়গা জোড়া।
চোখে জল ভরে গেল আমার।
মনে মনে বলি,
তাই কি?
অতি প্রিয় ভাঙা স্মৃতি বুকে
বয়ে বেড়ায় কত মানুষ, জীবন ভর।
তুমি কি বিশ্বাস হারালে?
তোমার চোখের কোণেও কি
এক ফোঁটা জল?
বাড়ি ফিরে আমার আসবাবে
হাত বোলাই পরম স্নেহে।
তোমার পছন্দ করা আসবাবে
ভরা আমার ঘর।
তোমার পরশ লেগে আছে তাতে।
তোমার পছন্দ করা কেদারায় বসে
আমি লিখে চলি।
তোমার প্রজ্ঞায় প্রদীপ্ত
আমার উত্তর পুরুষ।
আমি ভুলি কেমনে!
বিগত এক অনুষ্ঠানে
সেই শেষ দেখা, শেষ কথা
আর রসিকতার রেশটুকু
স্মৃতিতে আমার।
গনিতের শিক্ষাগুরু তুমি।
তবু সব অংক কি
মিলেছে তোমার?
বুকভরা সরলতা নিয়ে
জীবনের জটিল অংকটা
না কষেই
চলে যেতে হ'ল।
পাছে না মেলে, সেই ভয়ে!
অথবা অভিমানে?
কিংবা অনাদরে?
প্রশ্নটা প্রশ্নই থেকে যাবে
চিরকাল।
বই খুলে দেখি
উত্তরমালার পাতাটা নিঃশব্দে ছিঁড়ে
সাথে নিয়ে চলে গেছ
_কখন।।



*মানস আমার বন্ধু ছিল। তার অকালমৃত্যুতে আমি শোকাহত। আমি শ্মশানে যেতে পারিনি তাই সেদিন রাতেই এ লেখাটা লিখে ফেলি।